চিঠি মনমোহনকে
নয়া তালিকায় বঞ্চিত রাজ্য, ক্ষোভ মমতার
রেন্দ্র মোদীর উত্থানের ধাক্কায় কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে, তা নিয়ে সিপিএম যখন দোলাচলে, ঠিক তখনই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নতুন যুদ্ধ ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত ৫ অক্টোবর নতুন সচিবালয় নবান্নের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সে দিনই তিনি চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। সেই চিঠি একাধারে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকও। সম্প্রতি রঘুরাম রাজন কমিটি যে সুপারিশ করেছে, তার ভিত্তিতে উন্নত, তত উন্নত নয় এবং পিছিয়ে পড়া রাজ্যের তালিকায় বেশ কিছুটা বদল হয়েছে। সেই তালিকায় সব থেকে পিছিয়ে পড়া রাজ্য বিহার ও ওড়িশা। উত্তরপ্রদেশও তাদের থেকে বেশি দূরে নেই। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গের ঠাঁই হয়েছে গুজরাতের সঙ্গে এক বিভাগে। এই অদলবদলে বদলে গিয়েছে রাজ্যগুলির সাহায্য পাওয়ার মাপকাঠিও। দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ প্রায় দেড় শতাংশ কমে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম সেই সুপারিশ মেনেও নিয়েছেন। মনমোহন সিংহকে পাঠানো চিঠিতে এই পুরো বিষয়টিরই বিরোধিতা করেছেন মমতা। অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অবিলম্বে এই বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ খারিজ করার দাবি তুলে মমতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, এ ধরনের একটি সংবেদনশীল বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য সরাসরি হস্তক্ষেপ করুন।
এ দিনই চার দিনের সফরে ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনেই গেলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, যাওয়ার আগে তিনি চিঠির বিষয়টি বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে মমতার এই পত্রবোমা নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে পিএমও-তে। এর আগে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বৈঠক করায় তিনি চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেখানে নালিশ করেছিলেন শিন্দে সম্পর্কে। এবং প্রশ্ন তুলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় এই ভাবে রাজ্যকে বাদ দিয়ে মোর্চার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করা যায় কি?
এ বারে মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় চিদম্বরম। এ ক্ষেত্রেও তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ না করেই এই কমিটি গঠন করা ও তাদের সুপারিশ সঙ্গে সঙ্গে মেনে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী। মমতার চিঠি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের কর্তারা বুঝতে পারছেন, অর্থমন্ত্রীর এই বিশেষজ্ঞ কমিটির ফলে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যগুলির বাড়তি সুবিধা পাওয়ার কথা বলছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের আশঙ্কা, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের মুখে মমতা ধাপে ধাপে কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলনকে আরও তীব্র করবেন। তার আরও প্রমাণ মিলেছে রেলভাড়া, বিশেষ করে মেট্রো ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে তৃণমূলের পথে নামার ঘোষণায়। আগামী কাল, ষষ্ঠীর দিনই এই আন্দোলন শুরু করছে তারা। এ ছাড়াও তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়কদের নিয়ে দিল্লিতে ধর্না দেওয়ারও পরিকল্পনা করছেন। আবার এই বিষয়ে মমতা অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও সামিল করতে চাইছেন। যে হেতু অন্য রাজ্যের স্বার্থও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।
চিঠিতে মমতার অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এবং সেটা করা হচ্ছে ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক ভাবে কিছু রাজ্যকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে। বর্তমানে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এই বঞ্চনার সূত্রপাত বলে জানিয়ে মমতার বক্তব্য, এই কমিটি চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সাংবিধানিক ভূমিকাকে খর্ব করে রাজ্যগুলিকে অর্থ সাহায্য দেওয়ার মাপকাঠিটাই আমূল বদলে দিয়েছে।
মমতা আরও জানিয়েছেন, রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই এই বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। চিঠিতে মমতা লিখেছেন, “রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই আকস্মিক এই কমিটি তৈরি করায় আমি স্তম্ভিত। আরও বেশি হতাশ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সেই সুপারিশ গ্রহণ করে নেওয়ায়।” প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মমতার বক্তব্য, “এটি আরও বেশি দুর্ভাগ্যজনক, এই রিপোর্টের সুপারিশ গ্রহণ করার ব্যাপারে আপনার নামও আনা হচ্ছে।”
নতুন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রাজ্যকে দেওয়া কেন্দ্রের অর্থের হার বদলে যাবে। চিঠিতে সে কথা উল্লেখ করে এবং এই কমিটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা জানিয়েছেন, রাজ্যগুলিকে কেন্দ্র কতটা অর্থ দেবে, তা খতিয়ে দেখার জন্য তৈরি হয়েছিল চতুর্দশ অর্থ কমিশন। সংবিধানের ২৮০ ধারায় এই বিষয়টি বলা রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে ওই বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ যে ভাবে এল, তা অর্থ কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সাংবিধানিক এক্তিয়ারের পরিপন্থী। এই কমিটি রাজ্যের জনসংখ্যা ও জমির পরিমাণের ভিত্তিতে দু’টি সূচক তৈরি করেছে। মমতার অভিযোগ, এর ফলে অন্যদের বঞ্চিত করে কিছু নির্দিষ্ট রাজ্য সুবিধা পাবে। পশ্চিমবঙ্গ এই নতুন সূচকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ৬.৯৩ শতাংশ থেকে কমে ৫.৫০ শতাংশে নেমে আসছে।
বাম জমানার প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে নতুন সরকার তাদের ইনিংস শুরু করেছে এই কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মমতার বক্তব্য, এখন বরাদ্দ কমে গেলে উন্নয়নমূলক কাজে যেমন বিঘ্ন ঘটবে, তেমনই সমস্যা দেখা দেবে গরিবদের প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রেও। এমনকী, জাতীয় নিরাপত্তার কারণে সীমান্ত এলাকায় যে বিশেষ পরিকাঠামো দরকার, তা-ও ধাক্কা খাবে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটান লাগোয়া। জাতীয় নিরাপত্তার কারণেই সীমান্ত এলাকায় বিশেষ পরিকাঠামো দরকার। অথচ নতুন সূচক নিরূপণের সময় কমিটি একতরফা ভাবেই এই বিষয়টি পাশ কাটিয়ে গিয়েছে বলেই জানিয়েছেন মমতা।
চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, “উত্তরপ্রদেশ বা বিহার বেশি টাকা পেলে আমি দুঃখিত হই না। কিন্তু আমার মূল বক্তব্য হল যে রাজস্ব বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংগৃহীত হচ্ছে, সেগুলি কোন রাজ্যকে কী ভাবে দেওয়া হবে, সেটির পুনর্বিচার করা প্রয়োজন। কারণ, জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদ যে গ্যাডগিল-মুখার্জি সূত্র বেধে দিয়েছে, সেটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বদল করা হচ্ছে।”
মমতা চিঠিতে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এটি অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের বিরোধী। মমতা মনে করছেন, কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যোজনা কমিশনের যে প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অর্থ কমিশন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে তার সুপারিশ মেনে নিয়েছে। সে কারণেই এই বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অবিলম্বে খারিজ করার দাবি তুলেছেন তিনি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.