ক্ষমতার বাইরে গিয়ে যে সময়ে জোরদার গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার দিকে এগোনোর কথা, তখন গণসংগঠনগুলির কার্যকারিতা নিয়ে চিন্তিত সিপিএম নেতৃত্ব। রাজ্যের পরিস্থিতির মধ্যে সম্ভাবনার বীজ থাকলেও তা ঠিক ভাবে কাজে লাগাতে না-পারায় দলীয় নেতৃত্বের সেই আক্ষেপ ধরা পড়ল এ বারের পুজোসংখ্যায়।
দলীয় মুখপত্রের শারদসংখ্যায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী এবং দীপক সরকার এ বার কলম ধরেছেন মূলত গণসংগঠনের কাজ নিয়েই। সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামলবাবু যেখানে সবিস্তার উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন কী ভাবে গণসংগঠনের কাজের ক্ষেত্র ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, তেমনই শ্রমিক ফ্রন্টেরই নেতা তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিএম জেলা সম্পাদক দীপকবাবু দেখিয়েছেন গত পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত প্রস্তাবের সঙ্গে বাস্তবে কাজের ফারাক। দুই প্রবীণ নেতারই আক্ষেপ এক জায়গায় বিভিন্ন ঘটনায় শাসক দল তথা রাজ্য সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ বাড়তে থাকলেও তাকে কাজে লাগানোর জন্য গণসংগঠনের কর্মীদের কাঙ্খিত ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না।
‘যান্ত্রিকতা নয়, চাই সৃজনশীলতা’ শীর্ষক নিবন্ধে অতীতের ছাত্র-নেতা শ্যামলবাবু যুক্তি দিয়েছেন, কোনও স্থানীয় বিক্ষোভের ঘটনাই রাজ্যব্যাপী আন্দোলনে রূপায়িত হতে পারে। যদি বিপুল সংখ্যায় মানুষকে সেই ক্ষোভের অংশীদার করে তোলা যায়। কলকাতায় এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যু বা কামদুনি ও খোরজুনায় ধর্ষণের ঘটনার দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, কোনও ঘটনায় মানুষের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াকে আন্দোলনের রূপ দেওয়ার কাজ গণসংগঠনের। শ্যামলবাবুর ভাষায়, ‘কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতাগুলি সংশোধনের দরকার। কোনও বিষয়ে জনগণের একটা অংশের ক্ষোভ আছে কিন্তু তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পথে নামছে না। দলীয় কর্মীদেরই দায়িত্ব নিতে হবে সংখ্যায় অল্প হলেও ক্ষুব্ধ মানুষের মুখে ভাষা জোগানোর, আন্দোলনের ময়দানে জমায়েত করার’।
প্রতিবাদ আন্দোলন করলেই দাবি আদায় যে হবে, তা ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই বলেও সতর্ক করেছেন বর্ষীয়ান এই নেতা। তাঁর বক্তব্য, গণসংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়ালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দলের সেতু তৈরি হয়। ক্ষুদ্র আন্দোলন থেকেই সংগঠনের ভিত্তি তৈরি হয়। রাজ্যে একের পর এক গণহারে শিশুমৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে সন্তানহারা মায়েদের পাশে কেন দলের মহিলা কর্মীরা দাঁড়াতে পারবেন না, সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন শ্যামলবাবু। আবার অন্য একটি পুজোসংখ্যায় দীপকবাবুর সমালোচনা, কৃষক ও শ্রমিক ফ্রন্টের কাজ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গতানুগতিকতায় আটকে গিয়েছে। সিপিএমের অন্যতম প্রভাবশালী জেলা সম্পাদক লিখেছেন, ‘শ্রমিকদের সংগ্রামে নামানো, সচেতন করা এবং গণসংগঠনের কার্যকর নেতা হিসাবে গড়ে তোলা ও পার্টিতে আনার উদ্যোগের একেবারেই অভাব। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার’।
বামেদের এই আত্মসমালোচনার আবহেই তাঁদের মুখপত্রের শরৎ সংখ্যায় পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ডের পাল্টা মত, ‘সিপিএম ত্রুটি সংশোধনের কথা বললেও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হচ্ছে না কেন? উল্টে দেশ জুড়ে সিপিএম-বিরোধী ক্ষোভের শিকার হচ্ছে সমগ্র বামপন্থা। এই ক্ষোভের আগুন নেভানোর জন্য নেতৃত্বের কিছু ভাল ভাল কথা, এমনকী, নিচু তলার কর্মীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ মোটেই যথেষ্ট নয়’! বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ উন্নত বিকল্পের কথাই এসেছে সমীরবাবুর লেখনীতে।
|
প্রতিবন্ধী কি না, পরীক্ষা চলবে না স্কুল কমিশনে |
প্রতিবন্ধী শিক্ষকদের নতুন করে শারীরিক পরীক্ষা নেওয়ার এক্তিয়ার নেই স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর। প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি হাসপাতাল থেকে তাঁরা যে-শংসাপত্র পেয়েছেন, সেটাই বৈধ। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এই নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা করেছিলেন শতাধিক প্রতিবন্ধী শিক্ষক। সম্প্রতি রাজ্য সরকার জানায়, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নতুন করে মেডিক্যাল পরীক্ষা করবে এসএসসি। আবেদনকারীদের আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, এসএসসি-র মেডিক্যাল পরীক্ষা নেওয়াটা কোনও ভাবেই বৈধ হতে পারে না। কেউ প্রতিবন্ধী কি না, তা স্থির করে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। বিচারপতি বসু তাঁর নির্দেশে জানিয়ে দেন, এসএসসি-র এই ধরনের পরীক্ষা করার কোনও এক্তিয়ার নেই। নতুন করে শারীরিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে সরকার যে-ঘোষণা করেছে, তা বাতিল করার নির্দেশও দেন বিচারপতি। |