দশকর্মার দেড় হাত লম্বা ফর্দটায় শেষবারের মতো চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন রাজীব চৌধুরী। অনেক আইটেমের পাশেই লাল কালির দাগ। মানে, এখনও ওই সব জিনিস আসেনি। বারোয়ারি পুজোর দায়িত্বে থাকা রাজীববাবু বলেন, “অন্য বার পঞ্চমীর মধ্যে কেনাকাটা সেরে ক্লাবের ভাঁড়ার ঘরের চাবি পুরোহিত মশাইকে বুঝিয়ে দিই। অথচ এবার বহু জিনিস কেনা বাকি। প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। খুবই অসুবিধা। ”
পুজোর ক’টা দিন বৃষ্টিতে ভাসবেএমন একটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই পঞ্চমীর দিনভর শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত থাকলেন উদ্যোক্তা থেকে গৃহস্থ সবাই। গত এক সপ্তাহ ধরে সকাল-দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যায় যখন তখন দফায় দফায় বৃষ্টি নেমেছে। ফলে শেষ দিনে পুজোর প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্বে সময়ের সঙ্গে লড়াই-এ নেমে পড়েছিলেন সবাই।
ব্যস্ততা তুঙ্গে নবদ্বীপের বিভিন্ন পালবাড়িতে। পঞ্চমীতেই প্রধানত বাড়ির ঠাকুর এবং বারোয়ারির সমস্ত ঠাকুর নিতে আসেন ক্রেতারা। চতুর্থীর সারা রাত তাই জেগেছিল পালবাড়ি। প্রতিমাশিল্পী দাশু পাল, প্রদীপ সাহা-রা বলেন, “কী কষ্ট করে যে কাজ শেষ করেছি তা আমরাই জানি। মাটির কাজ এভাবে হয় নাকি!”
প্রায় একই সমস্যা মণ্ডপশিল্পীদের। এক এক বার উঁচু মণ্ডপের মাথায় উঠে ফিনিশিং-এর কাজ করছেন, পরক্ষণেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির জন্য কাজ অর্ধেক করে নেমে আসতে হচ্ছে। মণ্ডপশিল্পী অর্জুন দেবনাথ বলেন, “ঠিক সময়ে মণ্ডপসজ্জা শেষ করা এবার রীতিমত কঠিন হয়ে পড়ছে। লেবাররা বসে থাকছে। কাজ করতেই পারছে না।”
বড় দোকানের কেনাবেচা শেষ। এখন চলছে ছোট ছোট অস্থায়ী দোকান বা ফুটপাতের কেনাকাটা। তবে সেখানেও বৃষ্টি-অসুরের দাপট।
তবে শেষবাজারে সব থেকে ভিড় পার্লারে সর্বত্রই ভিড়ে ছয়লাপ। চুলে নানা ধরনের রঙের প্রতি টান এখন পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে। ‘হাইলাইটিং’-এর বিপুল চাহিদা। তা ছাড়া চুলে ব্লন্ড, ওরান্ডার ব্রাউন এবং কোকোর চাহিদাও যথেষ্ট। পার্লারের পরিচালিকারা কার্যত দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। ফেসিয়াল বা চুলের রঙের সঙ্গে নখের সজ্জাও দেখার মতো। নেলপালিশে রেড, নিয়ন ব্লু বা ফ্লুরোসেন্ট গ্রিনের দিকেই ঝুঁকছেন সবাই।
জামাকাপড়-সাজগোজের সঙ্গে পছন্দের ‘অ্যাকসেসরিজ’-এর জন্য ভিড় জমেছে ব্যাগ, পার্স বা ইমিটিশনের দোকানে। পোশাক সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে রং এবং ডিজাইন ম্যাচ করিয়ে চলছে কেনাকাটা। বিক্রেতা তরুণ রায় বলেন, “কলকাতা থেকে মাল আনতে পারলাম না বলে এবার অনেক ক্রেতাকে ফিরে যেতে হয়েছে। আসলে বৃষ্টিতে কলকাতায় গিয়েও কাজ সারতে পারিনি।”
সব মিলিয়ে পঞ্চমীর বাজার ঘুরে স্পষ্ট বোঝা গেল ‘বৃষ্টি-অসুর’কে একবার নাগালে পেলে ষষ্ঠীতেই তার বিসর্জন দিতে প্রস্তুত সবাই। |