প্রাণের মাঝে সেই বাংলা, থিমের পুজোয় রাজধানী
লকাতার পুজো থিমের ছোঁয়া পেয়েছে কয়েক দশক আগেই। গঙ্গার তীর থেকে তা যমুনার কোলে আসতে সময় নিয়েছিল বেশ কিছু বছর। ধীরে ধীরে জমি শক্ত হয়েছে তার। এখন তো প্রায় থিমের গ্রাসে দিল্লির পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। থিমের লড়াইয়ে কলকাতাকেও টক্কর দিতে প্রস্তুত এখন দিল্লির পুজো।
সার্ধশতবর্ষের সুবাদে গত দু’-তিন বছর একচেটিয়া আধিপত্য ছিল কবিগুরুর। এ বার নয়ডার সেক্টর ৫০-এ সপ্তর্ষি সঙ্ঘের পুজো-ভাবনা শরৎচন্দ্রকে ঘিরে। এখানকার পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “শরৎচন্দ্রের ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা। এ বছরের মণ্ডপ সাজানো হয়েছে তাঁরই সৃষ্ট বিভিন্ন নারী চরিত্রে।”
নয়ডারই আর এক পুজো সেক্টর-৩৪ নয়ডা বঙ্গীয় সমিতি মণ্ডপ সাজিয়েছে হোয়াইট হাউসের অনুকরণে। স্বাস্থ্য বিলের জেরে বারাক ওবামার প্রশাসন থমকে গেলেও নয়ডায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবনে এ বার পূজিতা হবেন নবদুর্গা। পুজো কমিটির আহ্বায়ক তরুণ বাগচীর কথায়, “দুর্গার ন’টি রূপকে এখানে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। নবরাত্রির মাহাত্ম্য বোঝাতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। ফলে বাঙালিরা তো আছেনই, অবাঙালিদের কাছ থেকেও বিপুল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।” অকাল বোধনে রামের কার্যসিদ্ধি হয়েছিল, হোয়াইট হাউসে দুর্গাপুজো কি ওবামার সঙ্কট দূর করবে? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন পুজো উদ্যোক্তারা।
করোলবাগে সেজে উঠছে এক মুঠো বাংলা।— নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব দিল্লির ময়ূর বিহারের মিলনী-র ভরসাও থিমে। বাঁশের কাজে ফুটে উঠছে এদের থিম, উত্তর-পূর্ব ভারত। থিমের লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই করোলবাগের পুজো সমিতি। তাদের উপহার এক মুঠো গ্রাম বাংলা। খাস দিল্লিতে উঠে আসছে বাংলার এক জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপক ভৌমিকের মতে, নতুন প্রজন্মের অনেকেই বাংলার গ্রাম কী, তা চোখে দেখেনি। তাদের কথা ভেবেই এই থিম। পুজো প্রাঙ্গণে পা রাখলেই মন যেন গ্রাম ছাড়া সেই রাঙা মাটির পথে। পুজোর আয়োজন গ্রামের মাঝে জমিদারের নাটমন্দিরে। পুজো কমিটির সভাপতি রবিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁদের পুজো দিল্লির তৃতীয় প্রাচীন পুজো। ১৯৪২-র ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়ে এই পুজোর শুরু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বড় হয়েছে আকারে। বদল এসেছে চরিত্রে। এখন তো পাল্লা দিচ্ছে থিমের দৌড়ে।
দ্বারকার দক্ষিণায়ন পুজো সমিতি এ বার শান্তি-মৈত্রীর সন্ধানে। আয়োজকদের বক্তব্য, দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে তিন লোকে শান্তি ফিরিয়ে এনেছিলেন। এখনকার এই দ্বেষ ও হানাহানির মাঝে নতুন করে বিশ্ব শান্তি-মৈত্রী-অহিংসার বার্তা দিতে হলে গৌতম বুদ্ধের চেয়ে বড় আদর্শ আর কে হতে পারেন! তাই পশ্চিম দিল্লির এই পুজোর মণ্ডপ বৌদ্ধ প্যাগোডার আদলে। শক্তিরূপিণী দেবী এখানে শান্তিরূপিণী। পুজো কমিটির সভাপতি শিবনাথ চক্রবর্তী বলেন, “মানুষের জীবনে শান্তি হারিয়েছে। চার দিকে হিংসা ও অস্থিরতা। তাই মানুষের মধ্যে বিশ্বশান্তি ও সম্প্রতির বার্তার লক্ষ্যেই এই থিম বেছেছি । ”
এ সবেরই মধ্যেও থিমের ছোঁয়াকে সযত্নে এড়িয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ১৯৪০ থেকে পুজো করে যাচ্ছে মিন্টো রোড পূজা সমিতি। দিল্লি পটপরগঞ্জ মাদার ডেয়ারির পূর্বাঞ্চলের পুজোও সে রকম। সাবেকি মণ্ডপ ও প্রতিমা। আয়োজনে স্থানীয় বাঙালির ঘরোয়া আন্তরিকতার স্পর্শটা বাঁচিয়ে রাখাই লক্ষ্য এদের।
আসলে শিকড় উপড়ে গিয়েছে অনেক দিন আগেই। উদ্যোক্তাদের কারও দিল্লিতে প্রথম প্রজন্ম। কারও বা তারও বেশি। জীবিকার তাগিদে প্রবাসে আটকে থাকা এই বাঙালিরা বছরের আর পাঁচটা দিন রাজধানীর আর পাঁচ জনের মতোই। কিন্তু পুজোর ক’দিন অন্তত তাঁরা ফিরতে চান শিকড়ে। নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করেন নতুন প্রজন্মের সামনে। কেউ থিমের মাধ্যমে, কেউ সাবেকিয়ানায়। রাজধানীর নির্মম, নির্মোহ কেজো দিনগুলির চোখরাঙানি উপেক্ষা করে কী পরম মমতায় এক দল মানুষ ফুটিয়ে তুলছেন প্রাণের মাঝে লুকিয়ে থাকা অনন্য বাংলার মুখ, এঁদের কাছে না এলে, এঁদের কথা না শুনলে, অনুভবেই আসত না।
আর একটি রাত। শুধু বোধনের অপেক্ষা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.