গুজরাতি বৌ শ্বেতাকে নিয়ে আমদাবাদ থেকে প্রথম বার পুজোয় কলকাতা আসছে রাহুল। ওর ছোটবেলার অনেক গল্পের সঙ্গে যে পুজো জড়িয়ে আছে। সেগুলো বোঝাতে হলেও তো ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখাতে হবে শ্বেতাকে।
দক্ষিণ কলকাতা শিবমন্দিরের পুজো দিয়ে শুরু হবে পরিক্রমা। জায়গাটা ঘিরে কলেজ-জীবনের অনেক স্মৃতি আছে রাহুলের। কলেজের বন্ধুদেরও আসতে বলেছে এ বার। ওখানকারই এক বন্ধুকে ফোন করে জেনেছে, সেখানকার থিম। শিবমন্দিরের পুজোয় মূল ভাবনা সৌরশক্তি ঘিরে। সেখানে নানা শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে সূর্যই শক্তির উৎস। মণ্ডপের মাঝে বিশাল আকার একটি সূর্যের মডেল। সাবেক ধাঁচের প্রতিমাও সেখানেই প্রথম দেখবে শ্বেতা। পাওয়ার সিস্টেম ক্লাসের বাকি গল্পও হবে বালিগঞ্জ সর্বজনীনে। শিবমন্দির থেকে হাঁটতে হাঁটতেই চলে যাবে দেশপ্রিয় পার্ক। সেখানেও থিমে সৌরশক্তি। সূর্যই যে সৃষ্টির মূলে, ফুটিয়ে তোলা হবে সেখানেও। তার পাশেই কলেজের বন্ধু গৌরব, অরিজিৎ, পৌলমীর সঙ্গে পাওয়ার সিস্টেম ক্লাসের বিভিন্ন সব মজার গল্প বলবে বৌকে।
এর পরে ওরা যাবে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে কালীঘাট মিলন সঙ্ঘের ঠাকুর দেখতে। বাঙালিদের বিয়েতে মাথায় কী পরা হয়, প্রশ্ন করেছিল শ্বেতা। সিনেমায় দেখে জিনিসটা পুরো বুঝতে পারেনি। মিলন সঙ্ঘে এ বারের থিমে শোলা শিল্প। শ্বেতাকে একেবারে দেখিয়ে নেওয়া যাবে শুধু বিয়ের মুকুট নয়, কত রকম গয়না তৈরি হয় শোলা দিয়ে। প্রতিমা সাজবে শোলার আভরণেই।
একটা কাজে পণ্ডিতিয়া রোডেও যাওয়ার আছে। ফেরার পথে দেখে নেবে পণ্ডিতিয়া সন্ধ্যা সঙ্ঘের পুজো। সেখানকার থিম ‘দ্য লোটাস আই’। পদ্ম ফুলের আকারে মণ্ডপ। আলোকসজ্জা ও শব্দের ব্যবহারে তৈরি হবে মানানসই।
গল্ফগ্রিনের একটা কফি শপও শ্বেতাকে দেখানোর ইচ্ছে আছে। রাহুলের আগের প্রেমটা সেখানেই ভেঙেছিল। সেই গল্প বলার পরে স্ত্রী-র মন ভাল করতে নিয়ে যাবে গল্ফগ্রিন শারদোৎসব কমিটির পুজোয়। ৩২ বছরে তাদের থিম দুর্গামন্দির। মণ্ডপ সাজবে কৃষ্ণনগরের পুতুল, বাঁকুড়ার ঘোড়া, পিংলার পটচিত্রে। নবমীর রাতে রাজপুরে অরিজিতের বাড়ি যাওয়ার কথা। ওদের পাড়ার পুজো জগদ্দল ওরিয়েন্টাল সঙ্ঘ। আগে অনেক আড্ডা হত ওই চত্বরে, এ বছরও এক বার যাওয়া চাই। সেখানে মণ্ডপে শোলার কাজ। বাটানগর নিউল্যান্ড পুজো কমিটি অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের আদলে গড়ছে মণ্ডপ। বাংলায় বসে স্বর্ণমন্দির দেখতে কেমন লাগে, সেই টানেই যাবে ওখানে। গাঙ্গুলিবাগানেও যাবে সেখান থেকে। সেখানে স্কুলের বন্ধু দেবলীনার বাড়ি। পাশেই কুসুম কাননে জি ব্লক, জি এম রোড সর্বজনীনের মণ্ডপ। দেখে আসবে ‘অমৃত বৃক্ষ’। কাছেই নাকতলা দ্বিতীয় পল্লি সর্বজনীনে হচ্ছে এক টুকরো গ্রাম। নাটমন্দিরে আটচালার প্রতিমা। ফেরার পথে বেহালা যাবে এক বার। ঋক নিজের পাড়ার পুজো দেখাতে চায় শ্বেতাকে। সেখানে বেহালা অরুণোদয় সমিতিতে শক্তিরূপেই আরাধনা হবে দেবীর। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে কী ভাবে ‘কলম’ অস্ত্র হয়েছে, সে ভাবনাই ফুটবে মণ্ডপে।
হাতে সময় কম। তবে দশমীর দিন হাতিবাগান আর শিয়ালদহে দুই কাকার বাড়ি যাবে। হাতিবাগান সর্বজনীনের থিম ‘অন্য রূপে মায়ের বোধন, শৃঙ্গের দেশে অসুর নিধন’। লুপ্তপ্রায় শৃঙ্গ শিল্পই তার ভাবনার মূলে। মোষের শিং দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছেন মেদিনীপুরের কলাগাছিয়ার শিল্পীরা। শিয়ালদহের কাকা নুর মহম্মদ লেনের কাছেই চম্পতলা পল্লি শ্রী শ্রী শারদীয়া উৎসবের পুজো দেখাতে নিয়ে যাবেন বৌমাকে। পুজো মণ্ডপ তৈরি হয়েছে নাকি পুরনো এক জমিদার বাড়ির নাটমন্দিরের আদলে। শোলার কাজের মণ্ডপের ভিতরে ডাকের সাজের প্রতিমাও দেখা যাবে সেখানেই।
রাহুলের আশা, এতেই ক্লান্ত হয়ে পড়বে শ্বেতা। তাই আর বেশি জায়গায় নিয়ে যাবে না সে দিন। আগামী বছরগুলোয় ওর কলকাতায় আসার ইচ্ছেটাও তো এখন থেকেই তৈরি করে রাখতে হবে। বাকি পুজোগুলো পরের বছরের জন্য তুলে রাখবে রাহুল। |