বোধনের আগের রাতে ভিড় জমল শহরের ছোট-মাঝারি পুজো মণ্ডপে! ঠিক যেমন ভাবে এত দিন বড় পুজোর উদ্বোধনে যাওয়ার পরে এ দিন চেতলা, আলিপুরের ছোট ছোট পুজোয় হাজির হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কোথাও শিশুদের গাল টিপে আদর করলেন, কোথাও মিশে গেলেন আম-জনতার ভিড়ে।
চেতলা, আলিপুরের গলির অনেক পুজোতেই অবশ্য এ দিন পর্যন্ত মণ্ডপের কাজ শেষ হয়নি। কোথাও সদ্য বসানো হয়েছে প্রতিমা। তার মধ্যেই পায়ে হেঁটে মণ্ডপে ঢুকেছেন মমতা। কখনও একের পর এক শাড়ি-জামা তুলে দিয়েছেন দুঃস্থদের হাতে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার পথে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন মানুষের ভিড় দেখে।
তবে ভিড়ের সঙ্গেই শুরু হয়েছে পুজোর পরিচিত যানজটও। উত্তর থেকে দক্ষিণ থমকে গিয়েছে রাস্তা। হাজারো চেষ্টাতেও যানজট স্বাভাবিক করতে পারেনি পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, সোম ও মঙ্গলবারও শহর থমকে গিয়েছিল যানজটে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। তিনি জানান, জানান, বেহালা-ঠাকুরপুকুরের অনেক জায়গাতেই লোকে রাস্তায় গাড়ি রাখছেন। এতে যানজট বাড়ছে। বিষয়টি কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছেন। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তায় নামবেন খোদ মন্ত্রীও। পাশাপাশি নির্দেশ দিয়েছেন, “রাস্তা আটকে গান-বাজনার আসর করা যাবে না।” নেতাজি ইন্ডোরে একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে পরিবহণ দফতর। ৬৪৫৬৮৮৭৭ এই নম্বরে ফোন করে লোকে সেখানে যানজট নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবে।
যদিও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অবশ্য যানজটের জন্য অন্যতম দায়ী করেছেন রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিআইপি-কে। যাদবপুরে দলীয় সাহিত্যের স্টল উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি বলেন, “মহালয়ার পর থেকে রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী পুজো উদ্বোধন করছেন। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য বহু ক্ষণ ধরে যানবাহন আটকে থাকছে।” তাঁর অভিযোগ, পুলিশ এ ক্ষেত্রে কিছু করছে না। অথচ, রাজনৈতিক সভা করতে গেলে তারা বাধা দেয়। এর পাল্টা মদন মিত্র বলেছেন, “অভিযোগ মিথ্যা। ৩৪ বছরে যাঁরা এক শতাংশ রাস্তা বাড়াতে পারেনি, তাদের মুখে এ কথা মানায় না।” |
পঞ্চমীর সন্ধ্যায় শহরে ঠাকুর দেখার ভিড়। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী। |
তবে যানজট ঠেলেই লোকে এ দিন মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় জমিয়েছেন। উল্টোডাঙা সংগ্রামীর আদিম চিত্রকলা, যুববৃন্দের শক্তির আরাধনা দেখতে ভিড় জমেছে করবাগান, কবিরাজ বাগানে। এর পরে কেউ গিয়েছেন রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের লালাবাগান নবাঙ্কুরে, কেউ বা হাতিবাগানের পুজোগুলিতে। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ নবীনপল্লির মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে এক দল কলেজ পড়ুয়া রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। পাকিস্তানের শিল্পী হায়দর আলির ‘ট্রাক আর্ট’ দেখে মন মজেছে তাঁদের।
ভিড় হয়েছে সল্টলেক এ জে ব্লক, লাবণী, এফডি-র মতো পুজোয়। শহরতলির দমদম পার্ক ভারত চক্র, তরুণ সঙ্ঘ, লেকটাউন প্রদীপ সঙ্ঘেও হাজির হয়েছেন দর্শনার্থীরা।
ভিড় টানার দৌড়ে উল্টোডাঙা-লেকটাউন-সল্টলেককে কড়া প্রতিযোগিতার সামনে ফেলেছে দক্ষিণের পুজোগুলি। কসবার বোসপুকুর তালবাগান, রাজডাঙা নবোদয় থেকে ভিড় বেরিয়ে কসবা কানেক্টর, গড়িয়াহাট মোড়ে হাঁসফাঁস অবস্থা। সেলিমপুর পল্লীর ‘দনুজদলনী’ থিম দেখে ভিড় বেরিয়ে বাবুবাগান, যোধপুর পার্ক, ৯৫ পল্লীর মণ্ডপে গিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। ভিড় পার করাতে গিয়ে ঠায় দাঁড় করাতে হয়েছে গাড়িঘোড়াকে।
একে বেহাল রাস্তা, তার উপরে পুজোর ভিড়। সব মিলিয়ে থমকে গিয়েছে বেহালা-হরিদেবপুর-গড়িয়ার মতো কলকাতার দক্ষিণ শহরতলির এলাকা। সন্ধ্যা সাতটায় গড়িয়া মিতালি সঙ্ঘের এক সদস্য ফোনে সভাপতিকে ভিড়ের সংখ্যা জানাতে ব্যস্ত। বেহালা ম্যান্টনের প্রগতি সঙ্ঘ, সবুজ সাথীতেও ভিড় জমিয়েছেন মানুষ। এ দিনই বেহালা এলাকায় সপরিবার ঠাকুর দেখতে এসেছিলেন রবীন দাস। বললেন, “ছোট-মাঝারি পুজোও যে এত ভাল হয়, তা না এলে বুঝতে পারতাম না।” হরিদেবপুরের অজেয় সংহতি, ৪১ পল্লির পাশাপাশি বিবেকানন্দ পার্কে সুশান্ত পালের দুর্গাপট দেখতেও দলে দলে হাজির হয়েছে জনতা।
বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তারা বলছেন, পঞ্চমীর রাতে ছোট পুজোগুলি দেখে ফেলতে চান অনেকেই। কারণ, ষষ্ঠী-সপ্তমী থেকে পুরো দমে ভিড় শুরু হয়ে গেলে, ছোট পুজোগুলিতেও ঢোকা দায় হয়ে যাবে। রয়েছে অষ্টমীর রাত কিংবা নবমী থেকে বৃষ্টির চিন্তাও। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের জেরে পুজোর শেষ দিনে বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গে। সে কথাও মাথায় রেখেছেন দর্শনার্থীরা। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে চিন্তায় মুখ্যমন্ত্রীও। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরার ফাঁকে খোঁজ নিয়েছেন আবহাওয়া পূর্বাভাসেরও। |