সিবিল-এ বদল
নেটে হেঁটে নম্বর
ত বছর ক্রেডিট ইনফর্মেশন ব্যুরো অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিবিল)-এর খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম আমরা। ঋণ পেতে সিবিলের দেওয়া নম্বর কেন জরুরি, দেখিয়েছিলাম তা-ও। কিন্তু তার পর গ্রাহক পরিষেবাকে আরও উন্নত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছে সিবিল। সহজ করেছে তার রিপোর্ট ও নম্বর পাওয়া পদ্ধতি। চলুন, এক ঝলক দেখে রাখি।

তবে তার আগে...
পরিবর্তন কোথায়, সে নিয়ে তো কথা বলবই। তার আগে এক বার ঝালিয়ে নিই সিবিলের বিভিন্ন খুঁটিনাটি। যা না জানলে হয়তো কোথায় বদল হয়েছে, তা বুঝতে সমস্যা হবে আমাদের।
অনেকেই জানেন না যে, যখন আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন কিংবা কোনও ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছেন, তার সমস্ত হিসাব জমা পড়েছে সিবিলের খাতায়। ঋণ বাতিল হলে, ঠিকমতো শোধ না-করা হলে কিংবা ক্রেডিট কার্ডের টাকা ঠিক সময়ে না-মেটাতে পারলে, সেই বিবরণও থাকে সিবিলে।
সিবিলের সদস্য ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিই নিজেদের গ্রাহকদের (ব্যক্তি এবং সংস্থা) ঋণ শোধ সম্পর্কে সেই সব তথ্য জমা দেয় সেখানে। প্রতি মাসে ওই তথ্যগুলি যাচাই করার পর প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার জন্য নির্দিষ্ট রিপোর্ট তৈরি করে সিবিল। যা ‘সিবিল ইনফর্মেশন রিপোর্ট’ (সিআইআর) নামে পরিচিত। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে আবার প্রত্যেক ঋণগ্রহীতাকে আলাদা নম্বরও দেয় তারা। যার পোশাকি নাম সিবিল ট্রান্স ইউনিয়ন স্কোর।

বদল কোথায়
গোড়াতেই বলেছি সিবিল বদল এনেছে রিপোর্ট ও নম্বর পাওয়ার পদ্ধতিতে। ঠিক কোথায় পরিবর্তন, তা বুঝতে আসুন সেই পদ্ধতিতে নজর দিই। দেখি কী করে রিপোর্ট ও স্কোর পেতে পারেন আপনি। আগের সাথে এখনকার তফাৎই বা কোথায়।

ব্যক্তির ক্ষেত্রে বদল
১) নিজের স্কোর পেতে আপনি প্রথমেই যান সিবিলের ওয়েবসাইট www.cibil.com-এ।
২) সেখানে রিপোর্ট ও নম্বর কেনার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় মাউস ক্লিক করলেই খুলে যাবে একটি নতুন উইন্ডো। এটাই আপনার আবেদনপত্র।
৩) আবেদনপত্র পূরণ করুন। দেখবেন যেন কোনও কিছু বাদ না পড়ে অথবা ভুল না হয়।
৪) ক্রেডিট কার্ড/ ডেবিট কার্ড/ ক্যাশ কার্ড অথবা নেট ব্যাঙ্কিং ব্যবহার করে জমা দিন টাকা। সেই টাকা যে সিবিলে জমা পড়েছে, তার রসিদটারও প্রিন্ট নিয়ে রাখুন।
৫) পরিচয় নিশ্চিত করতে সিবিল জানতে চাইবে আপনার ঋণ সংক্রান্ত দু’টি প্রশ্নের উত্তর। আগে এর থেকে বেশি উত্তর দিতে হত আপনাকে।
৬) সঠিক উত্তর দিলে সঙ্গে সঙ্গে আপনি নিজের সিবিল স্কোর ও রিপোর্ট ডাউনলোড করে দেখতে পারবেন। পাশাপাশি, ই-মেলের মাধ্যমেও আপনাকে তা পাঠিয়ে দেবে সিবিল।
মস্ত ফারাক এখানেও। কারণ এত দিন শুধুমাত্র ই-মেলেই এই তথ্য পাঠাত সিবিল, তা তখনই ডাউনলোড করে দেখার সুযোগ ছিল না।

ভুল সংশোধনে ফারাক
আপনার দেওয়া তথ্য ঠিক থাকলে তো রিপোর্ট ও নম্বর পেয়েই গেলেন। কিন্তু যদি তথ্যে কোনও ভুল থাকে, তা হলে কিন্তু ওই রিপোর্ট বা স্কোর তখনই দেখতে পাবেন না। পাশাপাশি, সিবিল ই-মেল মারফতও সেই তথ্য পাঠাবে না। সে ক্ষেত্রে ওই রিপোর্ট পেতে আর একটু খাটাখাটনি করতে হবে আপনাকে।
তবে সেই খাটুনিও কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে সিবিল। এত দিন এ জন্য সমস্ত প্রমাণপত্র ফের ডাকযোগে সিবিলের কাছে পাঠাতে হত। কিন্তু এখন স্ক্যান করা কপি ইন্টারনেটের মাধ্যমেই আপলোড করে দেওয়া যাবে সিবিলের ওয়েবসাইটে। যার প্রত্যেকটিতেই আবেদনকারীর সই থাকা বাধ্যতামূলক। ওয়াবসাইটটির লিঙ্ক: https://www.cibil.com/submit-kyc-online/ (পাশের ছবি)। এখানে নিজের ‘ট্রান্জাকশন আইডি’ দেওয়ার পর মূলত তিনটি জিনিস পাঠাতে হবে
১) আপনি যে টাকা জমা দিয়েছেন, তার রসিদের কপি।
২) পরিচয়ের প্রমাণপত্র।
৩) ঠিকানার প্রমাণ।
এই তথ্য যাচাই করে ডাকযোগে আপনার কাছে ট্রান্স ইউনিয়ন স্কোর ও রিপোর্ট পাঠাবে সিবিল।

সংস্থার বেলা?
ব্যক্তির ক্ষেত্রে রিপোর্ট ও নম্বর পাওয়া কথা তো বললাম। সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে কিন্তু আগের নিয়মই বহাল থাকছে। যার বিস্তারিত বিবরণ দেখে নিতে পারেন সিবিলের ওয়াবসাইটে।
ইন্টারনেট না থাকলে?
এখনও পর্যন্ত সিবিলের আবেদনপত্র শুধুমাত্র ইন্টারনেটেই পাওয়া যায়। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা না থাকলে আপনি সেই আবেদনপত্রের প্রিন্ট নিয়ে, তার পর সেটা ভর্তি করে ডাকযোগেও পাঠাতে পারেন। সে জন্য মুম্বইয়ে সিবিলের নামে ব্যাঙ্কের ডিমান্ড ড্রাফ্ট তৈরি করে তার সঙ্গে পাঠাতে হবে।
খরচ এখন কত?
• ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সিবিলের রিপোর্ট ও নম্বর কিনতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ৪৭০ টাকা দিতে হয়।
• শুধু রিপোর্ট কিনতে চাইলে ১৫৪ টাকা লাগে। তবে তা পাঠাতে হয় ডিমান্ড ড্রাফ্টে।
• সংস্থার ক্ষেত্রে অনলাইনে ২,৫৬০ টাকা দিতে হয়। এই পরিমাণ আগে ছিল ২,৫০০ টাকা।

পুরনো কথা
সিবিল সম্পর্কে আমরা অনেকে তেমন জানি না বলেই তার রিপোর্ট ও নম্বর কী কাজে লাগে এবং এতে কী কী থাকে, তা নিয়ে আগের বার বিশদে আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু কথা যখন হচ্ছেই, তখন তা আরও এক বার দেখে নিতে তো কোনও অসুবিধা নেই, তাই না?
ক্রেডিট রিপোর্ট মোট ছ’টি ভাগে বিভক্ত
১) সিবিল ট্রান্স ইউনিয়ন স্কোর এই ক্রেডিট স্কোর ৩০০ থেকে ৯০০ পর্যন্ত হতে পারে।
২) পরিচয়পত্র এই অংশে থাকে আপনার নাম, জন্মদিন, প্যান, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ।
৩) যোগাযোগের ঠিকানা এখানে আপনার প্রাক্তন এবং বর্তমান ঠিকানা, ফোন/ মোবাইল নম্বর, ই-মেল ইত্যাদি থাকে।
৪) চাকরি এবং আয়ের অন্যান্য সূত্রের তথ্য ঋণ নেওয়া বা ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করার সময় আপনি যে চাকরি বা ব্যবসার কথা জানিয়েছেন, সেই
বিবরণ মেলে এখানে।
৫) অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য সাধারণত তিন বছরের প্রত্যেক মাসের বিস্তারিত তথ্য দেখা যায় এখানে। এর বিভিন্ন ভাগ থাকে:
• কোন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন। অথবা ব্যবহার করেন কাদের ক্রেডিট কার্ড।
• সেই ঋণ কী ধরনের (গৃহ, গাড়ি, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি)।
• একা নিয়েছেন না যৌথ ভাবে।
• কবে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, ঋণের পরিমাণ কত, শেষ কবে ঋণের টাকা শোধ করা হয়েছে, আর কতই বা বাকি রয়েছে।
• ঋণ শোধ হয়ে গিয়েছে কি না অথবা কোনও আইনি সমস্যা রয়েছে কি না। না কি সম্পদ থেকে তা মুছে ফেলা হয়েছে (রিটেন অফ) ইত্যাদি।
৬) কারা খোঁজ নিয়েছেন আপনার সম্পর্কে ক্রেডিট কার্ড বা ঋণ দেওয়ার জন্য প্রায়ই ফোন বা ই-মেল পান আপনি। সেই ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিও কিন্তু আপনার সম্পর্কে জানতে আগে সিবিলেই খোঁজ নেয়। তাই এখানে পাবেন কারা আপনার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে, সেই তথ্য।
আপনি চাইলে নম্বর না নিয়ে শুধু নিজের রিপোর্ট দেখতে পারেন।

জরুরি কেন?
এত ক্ষণ তো অনেক কথাই হল। কিন্তু কেন সিবিল নিয়ে এত আগ্রহ, তা নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে আপনাদের মনে। এই অংশে রইল তারই উত্তর।
১) সিবিলে থাকা আপনার ধারের ইতিহাসের উপর ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়া অনেকটাই নির্ভর করে। অর্থাৎ নতুন ঋণের যোগ্যতা কেমন, তা জানার জন্য এই রিপোর্ট দরকার।
২) কোথাও ধার শোধ দেওয়া বাকি থেকে গিয়েছে কি না। সাধারণত বড় অঙ্কের ঋণ না নিলেও, ক্রেডিট কার্ড তো ব্যবহার করেন অনেকেই। তা কিন্তু আসলে ঋণই। তাই ক্রেডিট কার্ডের টাকা ঠিক সময় না মেটালে, বিরূপ প্রভাব পড়বে পরবর্তী কালে ঋণ নেওয়ার উপর।
৩) আপনার নামে অন্য কেউ ধার নিয়ে জালিয়াতি করলে, তা-ও ধরা পড়বে এখানেই।
এটা ঠিক যে, ঋণের আবেদন করার সময় ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেই এই তথ্য মেলে। কিন্তু আগে জানা থাকলে সুবিধা আপনারই।
সংক্ষেপে বলতে পারি, আগে থেকে জানলে ঋণ নেওয়ার সময় ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে সুবিধা হবে আপনার। নিজের ঋণের ইতিহাস জানা থাকলে ভবিষ্যতে আরও সচেতন হতে পারবেন ধার শোধের বিষয়ে। অথবা নম্বর খারাপ হলে, তা বাড়াতে উদ্যোগী হতে পারবেন। এ ছাড়া, কোনও ধরনের জালিয়াতি হলে, নিতে পারবেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও।

সিবিলের ঠিকানা
ক্রেডিট ইনফর্মেশন ব্যুরো (ইন্ডিয়া) লিমিটেড

ওয়েবসাইট www.cibil.com


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.