মিউচুয়াল ফান্ড
কোন ছাতাটা আপনার?
নিবার্য এক আস্থা জেতার যুদ্ধ। যার এক দিকে ডেট ফান্ড। অন্য দিকে ফিক্সড ডিপোজিট, মানে ব্যাঙ্ক ও সংস্থার স্থায়ী আমানত। নিশ্চিত রিটার্ন দেওয়ার নিরিখে নিজেকে সেরা বলে দাবি দু’পক্ষেরই। কার উপর ভরসা রাখবেন আপনি? কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চলুন দেখে নিই দু’টিরই ভাল-মন্দ।

ভরসা পূর্তি
যাঁরা শেয়ার বাজারকে স্রেফ ঝুঁকির জায়গা ভেবেই মুখ ঘুরিয়ে থাকেন, তাঁরা ভরসার খোঁজে লগ্নির নানান পথ হাতড়ে বেড়ান। এই পরিস্থিতিরই সুযোগ নিতে চায় ডেট ফান্ড। ফিক্সড ম্যাচুরিটি প্ল্যান (এফএমপি)-সহ বিভিন্ন ধরনের ডেট ফান্ড ‘সাবধানী’ লগ্নিকারীদের অন্যতম সেরা বাজি বলে নিজেদের তুলে ধরে। সঞ্চয়ে আগ্রহীদের খুশি করতে তাদের অস্ত্র দু’টি মোটামুটি স্থায়ী আয় এবং একটু বেশি রিটার্নের সম্ভাবনা।
অন্য দিকে, জীবনে গতি যাঁদের পছন্দ, তাঁরা সাধারণত স্থায়ী আমানতকে দূরছাই করেন। কিন্তু দেশের যে কোনও অর্থনৈতিক অবস্থায় তুলনায় নিশ্চিত রিটার্ন দিতে এর জুড়ি কোথায়? সঞ্চয় শুরুর আগেই আপনি হিসাব করে দেখে নিতে পারবেন, কোনও নির্দিষ্ট মেয়াদি জমায় রাখা টাকা সুদ-আসল মিলিয়ে শেষে ঠিক কত হবে। এটিই ফিক্সড ডিপোজিটের হাতিয়ার। ফলে সঞ্চয় সম্পর্কে যাঁরা বেশ রক্ষণশীল, অর্থাৎ রিটার্ন বাড়াতেও তহবিলের নিরাপত্তাকে বিন্দুমাত্র ঝুঁকির মুখে ফেলতে চান না, তাঁরা এটিকে আঁকড়ে ধরেন।

কার চরিত্র কেমন?
ডেট ফান্ড না ফিক্সড ডিপোজিট? আপনার জন্য কোন লগ্নি বা সঞ্চয় প্রকল্পটি ঠিক? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দু’টিরই সুবিধা-অসুবিধা যাচাই করে দেখা দরকার।

ডেট ফান্ড
এখানে তহবিলের টাকা বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্রে (সিকিউরিটিজ) লগ্নি করা হয় বলে তুলনায় সুরক্ষিত থাকে। কারণ সরকার-সহ বিভিন্ন সংস্থার ঋণের সূত্র এই ঋণপত্র। তারা নির্দিষ্ট সুদে বাজার থেকে এই ঋণ তোলে। তাই এ ধরনের তহবিল থেকে লগ্নিকারীর আয়ও (ইনকাম) বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সুনিশ্চিত (ফিক্সড) এবং সুনির্দিষ্ট। এই সমস্ত ‘ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ’-এর মধ্যে পড়ে বন্ড, ডিবেঞ্চার, গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ (সংক্ষেপে গিল্টস) ইত্যাদি। ডেট ফান্ডের প্রধান লক্ষ্যই হল, ইক্যুইটি ফান্ড থেকে শত হস্ত দূরে থাকা লগ্নিকারীদের প্রায় নিয়মিত ও স্থায়ী রোজগারের বন্দ্যোবস্ত করে দেওয়া।
সুবিধা
• কম ঝুঁকি, মোটামুটি নিয়মিত ও স্থায়ী আয়। যে কারণে লগ্নিকারীদের মধ্যে যাঁরা বেশ পাকা খেলোয়াড়, তাঁরা সব সময়ই লগ্নির একটা অংশ এতে লাগিয়ে রাখেন।
• ভবিষ্যতে ফান্ড কতটা রিটার্ন দিতে পারে সে সম্পর্কে কিছু ক্ষেত্রে আগে থেকেই আভাস পাওয়ার সুবিধা।
• বিভিন্ন মেয়াদের ডেট ফান্ডে লগ্নি করার সুবিধা। যেমন, খুব বেশি সময় টাকা আটকে রাখতে না-চাইলে, শুধু ৩ মাসের এফএমপি করুন। আবার চাইলে বড় মেয়াদেরও করতে পারেন। আরও ফান্ড আছে। নিজের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও টাকা আটকে রাখার সুবিধা অনুযায়ী তার থেকে বেছে নিতে হয়।
• বাজারে সুদ বাড়লে হাতে থাকা ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটির দাম কমে। আবার সুদ কমলে ওই সিকিউরিটির দাম বাড়ে। আর দাম কতটা উঠবে বা নামবে, তা নির্ভর করে সিকিউরিটির সুদ (রেট) ও তার মেয়াদের (ম্যাচিওরিটি) উপর। যার উপর আবার নির্ভর করে বাড়ে বা কমে ফান্ডের মূল্য। ফলে এক দিকে, বাজারে সুদের পরিবর্তন এফএমপি-র মতো ডেট ফান্ডে লগ্নির সুযোগ করে দেয়। আর অন্য দিকে, এই কারণেই রিটার্ন বেশি হওয়ারও সুযোগ থাকে।
• এফএমপি-র মতো ডেট ফান্ডে লগ্নি করা সুবিধাজনক। তহবিল পরিচালনা করাও সহজ। কারণ একটি এফএমপি সেই সমস্ত ঋণপত্রেই লগ্নি করে, যেগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় প্রকল্পটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একই সময়ে। এখানে মুনাফা করার জন্য ফান্ড ম্যানেজারকে বন্ড কেনা-বেচা করতে হয় না। স্রেফ ‘ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ’ কিনতে হয় ও প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া পর্যন্ত ধরে রেখে দিতে হয়।
• তহবিল বাড়ার পাশাপাশি ডিভিডেন্ড পাওয়া যায় ডেট ফান্ডে। যা ইচ্ছে হলে তুলে নেওয়া যায় কিংবা ফের লগ্নি করা যায়।

ফিক্সড ডিপোজিট
এটি ব্যাঙ্ক বা কোনও সংস্থায় স্থায়ী মেয়াদের জমা। লগ্নিকারীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নির্দিষ্ট একটি মেয়াদের জন্য জমা রাখেন। আমানতে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষে সুদ-সহ আসল হাতে পান লগ্নিকারী।
সুবিধা
• বাজারের উপর নির্ভরশীল নয়। ফলে অনেকটাই ভরসাযোগ্য।
• সুদের হার কত পাওয়া যাবে তা আগে থেকেই জানা। ফলে নিশ্চিত ও স্থায়ী আয়।

ঝুঁকির মাপকাঠি
গুণের কথা তো শুনলাম। কিন্তু দোষের দিকটা? সেটা না-জানলে যে আলোচনাটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

ডেট ফান্ড
• ফান্ডে প্রভাব ফেলে ঋণপত্রের বাজারের (ডেট মার্কেট) ওঠাপড়া। আর যে সিকিউরিটিগুলিতে টাকা খাটানো হচ্ছে, তার চরিত্রের উপর নির্ভর করে ঝুঁকির পরিমাণ। অর্থাৎ ফান্ডের রিটার্ন বাজারের উপর নির্ভরশীল বলে কিছুটা অনিশ্চিত তো বটেই। ফলে ঝুঁকিও রয়েছে।
• ফান্ড ম্যানেজারের দক্ষতা এক বড় শর্ত। তিনি তহবিলের টাকা খাটানোর জন্য ভাল ঋণপত্র বাছতে না-পারলে আপনার ক্ষতি।
• যে ফান্ড অতীতে ভাল রিটার্ন দিয়েছে, সে ভবিষ্যতেও দেবে গ্যারান্টি নেই। সুতরাং সেটির আগের রিটার্ন দেখে আপনি কত পেতে পারেন, তা বিচার করার উপায় নেই।

ফিক্সড ডিপোজিট
বেশি সুদের লোভে খারাপ সংস্থায় লগ্নি করলে ঠকতে হতে পারে। কারণ অনেকেই দেখেন না যে, তাঁর ফিক্সড ডিপোজিট করা টাকা সুদ সমেত ফেরত দেওয়ার যোগ্যতা আদৌ ওই সংস্থার আছে কি না।
পাশাপাশি, সংস্থার ক্রেডিট রেটিং যাচাই না-করেও আমানত রাখেন অনেকে। এটা যথেষ্ট ঝুঁকির। প্রসঙ্গত, ক্রেডিট রেটিং হল, কোনও সংস্থাকে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকির, তার মূল্যায়ন। অর্থাৎ রেটিং যত ভাল, ঋণ দেওয়া তত কম ঝুঁকির। আর তা কমার মানে ঋণের অর্থ ফেরত না-পাওয়ার ঝুঁকি বাড়া। বিভিন্ন রেটিং সংস্থা এই মূল্যায়ন দেয়। খুব কম রেটিং-এর সংস্থা বা ‘রেটিং-বিহীন’ সংস্থায় করা ফিক্সড ডিপোজিটে ঝুঁকি বেশি।

দুই-ই থাক
সব কিছুর শেষে অবশ্য একটি কথাই বলা যায় যে, আপনি কোথায় সঞ্চয় করবেন সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। তবে আমার পরামর্শ, দু’টিতেই একটু একটু করে করলে ক্ষতি কি! আলাদা আলাদা পথে লগ্নি ছড়িয়ে দিলে বরং সামঞ্জস্য বজায় থাকবে। কোনও কারণে ডেট ফান্ড মনের মতো রিটার্ন দিতে না-পারলে ফিক্সড ডিপোজিট আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে। আবার সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এক দিকে বাজার নির্ভর রিটার্নে একটু বেশি রোজগার হবে ফান্ড থেকে। আর অন্য দিকে নিশ্চিত আয় হাতে পাবেন স্থায়ী আমানতের সৌজন্যে। মোটমাট সব মিলিয়ে অন্তত মনে যে শান্তি বজায় থাকবে, সেটা নিশ্চিত।

লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর (মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.