ডি-ম্যাটে বিমা
কাগজ ছাড়াই বিমা
শেয়ার কিনলে কাগজ রাখা এখন প্রায় ইতিহাস। একই ভাবে এ বার আমরা প্রবেশ করতে চলেছি কাগজহীন বিমা পলিসির জমানায়। শেয়ার ও বন্ডের মতো এখন থেকে ডি-ম্যাট করা যাবে বিমা পলিসিও। বিমার জন্য খুলতে হবে আলাদা ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট। বিমাপত্রের ডি-ম্যাট ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে ইনশিওরেন্স রিপোজিটরি সিস্টেম। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এই ব্যবস্থার সূচনা করেছে বিমা নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ।
এই প্রসঙ্গে যে-প্রশ্নটি তাৎক্ষণিক ভাবে মাথায় আসবে, তা হল বিমা পলিসি ডি-ম্যাট করার কী প্রয়োজন? বিমা তো আর শেয়ারের মতো বাজারে লেনদেন হয় না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মতো জমা-খরচেরও কোনও প্রশ্ন নেই। তবে বিমাপত্র ডি-ম্যাট করার সুবিধাগুলি জানলে মনে হবে, ডি-ম্যাট করে নেওয়াটাই সম্ভবত ভাল।

সুবিধার খতিয়ান
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিমা ডি-ম্যাট করার সুবিধাগুলি
• পলিসি একবার ডি-ম্যাট করা হয়ে গেলে কাগজের আকারে তা বহু বছর ধরে রাখতে হয় না।
• হারিয়ে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, জল-ঝড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।
• বিমাপত্র হারিয়ে গেলে তার ডুপ্লিকেট পেতে যে ঝক্কি পোহাতে হয়, তা এড়ানো সম্ভব ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে পলিসি ধরা থাকলে।
• বিমা সংক্রান্ত যে-সব সুবিধা (বেনিফিটস) পাওয়া যায়, তার অনেকখানি সরাসরি পৌঁছে যেতে পারে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। যেমন ‘মানি ব্যাক’-এর টাকা আপনার ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে নথিবদ্ধ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা হতে পারে। এর জন্য কাগজপত্র নিয়ে বিমা কোম্পানির দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন থাকবে না।
• একই অ্যাকাউন্টে আপনি রাখতে পারবেন জীবনবিমা, স্বাস্থ্যবিমা, দুর্ঘটনাবিমা, গাড়িবিমা এবং বাড়িবিমার পলিসি। নিজের অ্যাকাউন্ট কম্পিউটারের পর্দা খুলে এক নজরে দেখে নিতে পারবেন সব ক’টি পলিসিকে।
• অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যাবে পরের প্রিমিয়ামের তারিখ, বকেয়া প্রিমিয়াম ইত্যাদি তথ্য।
• ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে একবার কে ওয়াই সি করলেই হল। নতুন নতুন পলিসি নেওয়ার সময়ে বারবার কে ওয়াই সি করার প্রয়োজন নেই।
• ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে বিমাপত্র ডাউনলোড করা যায়। নেওয়া যাবে প্রিন্ট।
• ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টেই নথিবদ্ধ করা যাবে নমিনেশন এবং পরে পরিবর্তনও করা যাবে নমিনেশন সংক্রান্ত তথ্য।
• দেখা যাবে পলিসি জমা রেখে নেওয়া ঋণের তথ্য।
• ঠিকানা ইত্যাদি পরিবর্তনের জন্য আবেদন জানানো যাবে অন-লাইনে। কমবে ঝক্কি।
• প্রিমিয়াম জমা করা যাবে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।

কোথায় খোলা যাবে
বিমা নিয়ন্ত্রক আই আর ডি এ পাঁচটি সংস্থাকে অনুমোদন দিয়েছে ই-ইনশিওরেন্স অ্যাকাউন্ট, অর্থাৎ ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার। সংস্থাগুলি হল এনএসডিএল ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট, সেন্ট্রাল ইনশিওরেন্স রিপোজিটরি, ক্যামস রিপোজিটরি সার্ভিসেস, কার্ভি ইনশিওরেন্স রিপোজিটরি এবং এসএইচসিআইএল প্রজেক্টস। এদেরই কারও কাছে খোলা যাবে ওই অ্যাকাউন্ট।
এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, একজন একটির বেশি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদন করতে হবে যে-কোনও একটি সংস্থা অথবা আপনার নিজের বিমা কোম্পানির মাধ্যমে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য দাখিল করতে হবে কে ওয়াই সি কাহজপত্র। অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেলে নতুন অ্যাকাউন্টের মালিক পাবেন একটি ‘ওয়েলকাম কিট’। এতে থাকবে ১৩ সংখ্যা অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং লগ-ইন আই ডি। থাকবে অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের নিয়মাবলি। আলাদা করে পাঠানো হবে ‘পিন’ নম্বর। অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেলে আপনার নেওয়া পলিসিগুলি এক এক করে ডি-ম্যাট করিয়ে নিতে পারেন। এর জন্য এখন কোনও মাসুল লাগবে না। ডি-ম্যাট করার খরচ জোগাবে আপনার বিমা কোম্পানি। ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টকে জনপ্রিয় করতে মাসুল মকুবের ব্যাপারটি সহায়ক হবে। নতুন বিমা পলিসি কেনার সময়ে আপনি আবেদনপত্রেই বলে দিতে পারেন নতুন পলিসি আপনার ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে জমা করার জন্য। প্রথম দিকে একমাত্র জীবনবিমা পলিসিই ডি-ম্যাট করা যাবে। কয়েক মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে অন্যান্য পলিসি ডি-ম্যাট করার সুবিধা।

নমিনেশন
বিমা পলিসির একটি বড় অসুবিধা হল, নমিনি অনেক সময়ে জানেনই না যে অন্য কারও পলিসিতে তাঁকে নমিনি হিসাবে দেখানো আছে। এই সমস্যা কিছুটা দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে ই-ইনশিওরেন্স ব্যবস্থায়। ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে আপনি একজন কাছের লোককে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন, যিনি আপনার সব পলিসির ব্যাপারে জানবেন। বিমা গ্রাহকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই প্রতিনিধি ক্লেম আদায়ের ব্যাপারে নমিনিকে পরামর্শ দিতে পারবেন।

বিমা ডি-ম্যাট বাধ্যতামূলক নয়
বিমাপত্র রাখার জন্য ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা মোটেও বাধ্যতামূলক নয়। যাঁরা কাগজ দেখে এবং স্পর্শ করে সুখ অনুভব করেন, তাঁরা সনাতন বিমা পলিসিই চাইতে পারেন। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, নানা সুবিধা আছে বলেই মানুষ ঘরে নগদ টাকা না রেখে ব্যাঙ্কে জমা করে, শেয়ার থাকে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে। শেয়ারের ক্ষেত্রেও প্রথম দিকে মানুষ ডি-ম্যাট ব্যবস্থা সম্পর্কে একটু সন্দিহান ছিল। পরে এর সুবিধা বুঝতে পারায় ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিমার ব্যাপারে ডি-ম্যাটের প্রয়োজন ঠিক ততটা না হলেও এর বিশেষ কয়েকটি সুবিধা থাকায় আশা করা যায়, কালক্রমে এই ব্যবস্থাও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। এর জন্য চাই জোরালো প্রচার। তবে বহু পলিসি যেহেতু প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ কেনেন এবং যেখানে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের তেমন প্রসার ঘটেনি, সেই কারণে বিমা সংক্রান্ত ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টের চাহিদা প্রথম দিকে শুধু বড় শহরেই তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পরামর্শদাতা ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি (মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.