তিলে তিলে তাল
ষ্ঠীর সকালেও সঞ্চয়ের দুনিয়ায় আপনি স্বাগত!
মণ্ডপে বোধন আর ঢাকের বাদ্যি কানে যাওয়া এই মন উড়ুউড়ু দিনেও চায়ের ফাঁকে এক বার সঞ্চয়ে শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলব আমরা। জেনে নেব, দীর্ঘমেয়াদি কোনও লক্ষ্য ছুঁতে ঠিক কেমন অবিচলিত, নাছোড় মনোভাব প্রয়োজন আমাদের। আসুন, এসআইপি (সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) নিয়ে আড্ডায় বসি।

গোড়ার কথা
এসআইপি বা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান কী, সেটা এত দিনে অসংখ্য বার বলে ফেলেছি আমরা। তবু আলোচনা যখন হচ্ছেই, তখন শুরুতে ব্যাপারটা এক বার মনে করে নেওয়া ভাল।
কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে নিয়মিত (প্রতি দিনে, সপ্তাহে, ১৫ দিনে, মাসে, তিন মাসে ইত্যাদি) টাকা ঢেলে যাওয়ার পদ্ধতিই হল এসআইপি। এই সঞ্চয়ের ধাঁচ তাই অনেকটা অধ্যবসায়ী পড়ুয়ার মতো। যে অনেক আগে থেকে ধৈর্য ধরে একটু-একটু করে নিজেকে তৈরি করে বড় কোনও লক্ষ্য ছোঁওয়ার জন্য। আর এর মস্ত সুবিধা হল, দেখেশুনে বুদ্ধি করে ফান্ড বাছাইয়ের পর একটা লম্বা সময় ধরে সেখানে এ ভাবে অল্প-অল্প টাকা লগ্নি করে যেতে পারলে, প্রায় অজান্তেই তৈরি হয়ে যায় মোটা অঙ্কের তহবিল। যা অনায়াসে ব্যবহার করা যায় কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের কাজে।
এসআইপি-র সংজ্ঞা যখন মনে করে নেওয়া গেল, তখন ফান্ডের রকমফেরও এক বার ঝালিয়ে নেওয়া যাক। এসআইপি-র টাকা মূলত খাটানো যায় তিন ধরনের ফান্ডে
• ইক্যুইটি ফান্ড: এই ফান্ডের তহবিলের বেশির ভাগটাই লগ্নি করা হয় শেয়ার বা ইক্যুইটিতে। শেয়ারের দরে প্রতিনিয়ত যে ওঠা-পড়া চলে, তাতেই ফুলে-ফেঁপে ওঠে আপনার ফান্ডের বিনিয়োগ। তাই এই ফান্ডে রিটার্ন যেমন চড়া হওয়ার সম্ভাবনা, তেমনই কিছুটা বেশি ঝুঁকিও। বেশি রিটার্নের জন্য অধিকাংশ এসআইপি-র টাকা ঢালা হয় এই ধরনের ফান্ডেই।
• ডেট ফান্ড: এই ধরনের ফান্ডের টাকা পুরোটাই খাটে সরকারি ও বেসরকারি ঋণপত্রে (বন্ড, ডিবেঞ্চার, সিকিউরিটি ইত্যাদি)। ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইক্যুইটি ফান্ডের তুলনায় এর রিটার্ন কম হতে পারে। তেমনই অনেকটাই কম ঝুঁকিও।
• মিক্সড (মিশ্র) ফান্ড: এই ফান্ডের তহবিলের টাকা লগ্নি করা হয় মিলিয়ে-মিশিয়ে। শেয়ার ও ঋণপত্রে। গ্রাহকের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বুঝে।
একটা কথা এখানে স্পষ্ট করে দেওয়া ভাল। তা হল, কোনও ধরনের ফান্ডেই কিন্তু ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের মতো নিশ্চিত রিটার্ন বলে কোনও বস্তু নেই। শেষ পর্যন্ত আপনি কত টাকা পাবেন, তা পুরোটাই নির্ভর করে শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজার ওঠা-নামার উপর। হয়তো সেই কারণেই আপনারা প্রশ্ন করেছেন, ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের নিশ্চিত ছাতা ছেড়ে এমন ‘অযথা’ ঝুঁকি নেব কেন? চলুন, উত্তর খুঁজি।

পেঁয়াজ কিনছেন কততে?
ইলিশ-গলদা-পাবদার কথা না হয় বাদই দিলাম। এই ক’দিন আগেও কত টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনছিলেন আপনি? ৭০/৮০-র কম তো নয়ই, তাই না? কাঁচালঙ্কার কেজিও ১০০ টাকা। ফলে বুঝতে পারছেন, কী গতিতে দাম বাড়ছে সব জিনিসের? এই উল্কা গতির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে শুধু সুদের অস্ত্রে এঁটে উঠতে পারবেন কি? সম্ভবত না। আর সেই কারণেই এসআইপি-র পারমর্শ।
ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে যে সুদ আপনি পাচ্ছেন, জিনিসপত্রের দর যদি তার থেকে বেশি হারে বাড়ে, তার মানে তো আসলে জমানো টাকা কমছে আপনার। এমনিতে দেখে মনে হবে দিব্যি তো সুদ পাচ্ছি আমি। কিন্তু মেয়াদ শেষে হাতে পাওয়ার সময় বোঝা যাবে যে, তখন ওই টাকার মূল্য নেহাতই কম। মোটা খরচের চিঁড়ে তাতে ভিজছে না। ঠিক এ জন্যই আয়ের একটা অংশ লগ্নির ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি হয়তো নিতেই হবে আপনাকে। ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) বা রেকারিং ডিপোজিটের (আরডি) পাশাপাশি টাকা ঢালতে হবে এসআইপি-তেও। যাতে মূল্যবৃদ্ধির অসুরের সঙ্গে এঁটে ওঠা যায়।

ন্যাভ আর ইউনিট
এ পর্যন্ত না হয় বোঝা গেল। কিন্তু এসআইপি-র টাকা খাটে কী ভাবে? কীসের উপর নির্ভর করে তার রিটার্ন? ইক্যুইটি ফান্ডের একটা উদাহরণ নিয়েই না হয় বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করা যাক। তবে তার আগে ন্যাভ আর ইউনিট সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট থাকা জরুরি।

ন্যাভ কী?
নেট অ্যাসেট ভ্যালু বা ন্যাভ হল কোনও ফান্ডের সম্পদ (অ্যাসেট) থেকে তার মোট দায়ের (লায়াবিলিটি) বিয়োগফল।
যে যে শেয়ার, বন্ড ইত্যাদিতে ফান্ড টাকা লাগিয়েছে, প্রত্যেক দিনের শেষে দেখা হয়, তাদের মোট দাম কত দাঁড়াল। ওই মোট দামই হল ফান্ডের সম্পদ। উল্টো দিকে, তেমনই কিছু দায়ও থাকে ফান্ডের। যেমন, তা পরিচালনার খরচ, কর ইত্যাদি। সম্পদ থেকে ওই দায় বাদ দিয়ে যে নিট আয় হাতে থাকে তা-ই হল ফান্ডের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (ন্যাভ)।

তা হলে ইউনিট কী?
নথিবদ্ধ সংস্থার যেমন শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ডের তেমনই ইউনিট। কোনও ফান্ড বা তহবিল বাজারে ছাড়ার সময় শেয়ারের মতোই ছাড়া হয় ইউনিট। সাধারণত প্রাথমিক দাম হয় ১০ টাকা। এ বার ধরা যাক ১০ জনের প্রত্যেকে ১০০০ টাকা করে বিনিয়োগ করলেন সেই তহবিলে। ফলে ১০ টাকা দামে প্রত্যেকের হাতে এল ১০০টি করে ইউনিট (ভাবুন শেয়ার)। এ বার যে ১০ হাজার টাকার (১০X১০০০) তহবিল তৈরি হল, সেই টাকা বাজারে খাটাতে শুরু করল সংস্থাটি। এক বছর পর পরিচালনার খরচ-সহ যাবতীয় খরচাপাতি বাদ দিয়ে সেই তহবিল হয়তো বেড়ে দাঁড়াল ১৫ হাজার টাকায়। তা হলে ফান্ডের সম্পদ মূল্য এখন ওই ১৫ হাজার টাকা।
এ বার ওই তহবিলে টাকা ঢেলেছেন ১০ জন। তাঁরা একযোগে ১০০০ ইউনিটের মালিক। ফলে প্রতি ইউনিটের দাম দাঁড়াবে ১৫ টাকা। অর্থাৎ ইউনিটের নিট সম্পদ মূল্য (ন্যাভ) প্রাথমিক ১০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াল ১৫ টাকায়। সুতরাং ইউনিট পিছু লাভ ৫ টাকা বা ৫০%।
মনে রাখবেন, সাধারণত ন্যাভ বলতে কিন্তু ইউনিট-পিছু ন্যাভের কথাই বলি আমরা। যা মোট ন্যাভকে ফান্ডের ইউনিট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলেই পাওয়া যায়।
এ বার ধরুন, কোনও ফান্ডের ন্যাভ যখন ১০ টাকা, তখন প্রতি মাসে ১০০ টাকার একটা এসআইপি শুরু করলেন। অতএব প্রথম মাসে ঢাললেন ১০০ টাকা। পেলেন ১০টি ইউনিট (১০০/১০)। দ্বিতীয় মাসে যখন ফের ১০০ টাকা লগ্নি করলেন, তখন বাজার নেমেছে। ফলে কমেছে ন্যাভও (ধরুন, ৭ টাকা)। পেলেন ১৪টি ইউনিট। তৃতীয় মাসে বাজার আরও পড়ায় ন্যাভ হল ৫ টাকা। ফলে হাতে ইউনিট এল ২০টি। আবার চতুর্থ মাসে যখন আপনি ১০০ টাকা দিলেন তখন ন্যাভ ফের বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা। ফলে সে বার ইউনিট পেলেন ১০টি।
সুতরাং চার মাসে আপনার মোট ইউনিট ১০+১৪+২০+১০=৫৪টি। ১০ টাকা ন্যাভ থাকাকালীন ওই মাসেই ফান্ড ভাঙিয়ে নিলে হাতে পাবেন ৫৪X১০=৫৪০ টাকা। যেখানে আপনার লগ্নি (১০০X৪)=৪০০ টাকা। অতএব লাভ ১৪০ টাকা।
অবশ্য সব সময় যে লাভ হবে এমনটা নয়। ভুল ফান্ড বাছলে কিংবা বাজার সামান্য পড়তেই চটজলদি ফান্ডে লগ্নি ভাঙিয়ে নিলে অনেক সময় লোকসানও গুনতে হতে পারে।

সুবিধার সাত-সতেরো
এসআইপি-র বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন
• বুদ্ধি করে ফান্ড বাছাইয়ের পর দীর্ঘ মেয়াদে নিয়মিত টাকা ঢালতে পারলে চড়া রিটার্নের সম্ভাবনা। ফলে সন্তানের উচ্চশিক্ষা, সচ্ছল অবসরের মতো দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য পূরণের জন্য এই অস্ত্র যথেষ্ট কার্যকর।
• ফান্ডে একলপ্তে লগ্নি করতে হলে অন্তত ৫,০০০ টাকা বার করতে হবে। সেখানে এসআইপি-র কিস্তি ৫০০ টাকারও হতে পারে।
• টাকা জমা দিতে পারেন প্রতি দিনে/সপ্তাহে/ ১৫ দিনে/ মাসে/ তিন মাসে। যেমনটা আপনার সুবিধা।
• নিজের সুবিধা অনুযায়ী ঠিক করতে পারেন মোট কত টাকা ঢালবেন।
• টাকা রাখার মেয়াদও বাড়াতে পারেন ইচ্ছেমতো।
• অসুবিধায় পড়লে এসআইপি মাঝপথে বন্ধও করে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তত দিন পর্যন্ত জমা দেওয়া টাকাই ফান্ড বাজারে খাটাতে থাকবে।
• জমা টাকার একাংশ তুলে নিলেও বাকিটুকু কিন্তু বাড়তে পারে ফান্ডের রিটার্ন অনুযায়ী।
• প্রয়োজনে যে কোনও সময় পুরো টাকা ভাঙিয়েও নিতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে রিটার্ন কম হওয়ার সম্ভাবনা। লোকসানও হতে পারে।
• হয়তো আপনার স্বল্প পুঁজি শেয়ার বাজারে লগ্নি করতে চান। কিন্তু তার সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা তেমন স্পষ্ট নয়। কিংবা সময় নেই শেয়ার দরের ওঠা-পড়া নিয়মিত খেয়াল রাখার। সে ক্ষেত্রে এসআইপি মন্দ নয়।

করাবেন কোথায়?
• যে মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার থেকে ফান্ড কিনতে চান, সরাসরি তার কাছে যেতে পারেন।
• যে ব্যাঙ্কে আপনার অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং সেই সূত্রে নিয়মিত যাতায়াত, সেখানে গিয়ে আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কই আপনাকে বলে দেবে যে, ঠিক কী করতে হবে।
• যেতে পারেন কোনও নথিভুক্ত এজেন্ট বা আর্থিক উপদেষ্টার কাছে। তবে তাঁর বিশ্বস্ত হওয়া জরুরি।

করবেন কী ভাবে?
(১) প্রথমে ঠিক করুন কোন ধরনের ফান্ডে (ইক্যুইটি, ডেট না মিক্সড) এসআইপি করবেন।
(২) খোঁজখবর নিয়ে বেছে ফেলুন ফান্ড। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কথা বলুন অভিজ্ঞদের সঙ্গে।
(৩) নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে। মাসের একটি নির্দিষ্ট তারিখে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেবে ফান্ডই।
(৪) এমনিতে এসআইপি-র কোনও নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। কিন্তু কত দিনের জন্য এসআইপি করছেন, তা উল্লেখ করতে হবে। কারণ, সেই অনুযায়ী ইসিএস (ইলেকট্রনিক ক্লিয়ারিং সিস্টেম) মারফত ফান্ডকে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটতে দেবে ব্যাঙ্ক।
(৫) উল্লিখিত সময়ের পর নবীকরণ (রিনিউ) না-করালে, অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটা বন্ধ করে দেবে ফান্ড। ফলে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি।
(৬) মাঝে কোনও কারণে লগ্নিতে ছেদ পড়লেও ফান্ডের জিম্মায় জমা টাকা রেখে দিতে পারেন। পরে আবার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে, এসআইপি চালু করা যায়।
(৭) ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস ফান্ডের (ইএলএসএস) ক্ষেত্রে অবশ্য তিন বছরের আগে টাকা তোলা যায় না। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক মাসের কিস্তিকেই তিন বছর জমা থাকতে হয় (লক ইন পিরিয়ড)। প্রসঙ্গত, ইএলএসএস হল এমন এক ধরনের ফান্ড, যেটি তার বেশির ভাগ তহবিল শেয়ার বাজারে খাটায় এবং এই ফান্ডে লগ্নি করলে ৮০সি ধারায় আয়করে ছাড় মেলে।
কী লাগবে?
এসআইপি করা জটিল নয়। বিশেষত ‘নো ইওর কাস্টমার’ (কেওয়াইসি) ব্যবস্থা চলে আসার পর। নথিপত্রের তালিকা মোটামুটি এই রকম
• ব্যাঙ্ক, ফান্ড সংস্থা বা উপদেষ্টার কাছে আবেদনপত্র ভর্তি করতে হবে।
• যত টাকা কিস্তির এসআইপি করবেন, সেই অঙ্ক লেখা একটি চেক আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
• যে ব্যাঙ্কের চেক দিচ্ছেন, তার অ্যাকাউন্ট থেকেই ইসিএস ব্যবস্থায় এর পর টাকা কেটে নেবে ফান্ড। তবে আপনি অন্য কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটাতে চাইলে, সেই ব্যাঙ্কের ইস্যু করা একটি ক্যান্সেলড চেক-এর ফোটো কপি দিতে হবে।
• জমা দিতে হবে কেওয়াইসি ফর্ম।
• লাগবে ছবি, ঠিকানার প্রমাণ, প্যান কার্ড, ছবি-সহ পরিচয়পত্র ইত্যাদি।

মনে রাখবেন
চড়া রিটার্নের সম্ভাবনা বেশি হওয়ায় প্রচারের আলো বেশি পড়ে ইক্যুইটি ফান্ডের উপর। কিন্তু এসআইপি-র জায়গা হিসেবে ডেট বা মিক্সড ফান্ডও মন্দ নয়। যেমন, মান্থলি ইনকাম প্ল্যান (যেখানে তহবিলের বড় অংশ ঢালা হয় উচ্চমানের ঋণপত্রে), ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্ল্যান (তহবিলের পুরোটাই লগ্নি করা হয় উচ্চমানের ঋণপত্রে) ইত্যাদি। খুব অল্প দিনের জন্য টাকা রাখতে রয়েছে শর্ট টার্ম ইনকাম ফান্ড বা ইনকাম ফান্ডও।

দাঁড়িপাল্লায় রিটার্ন
যে চড়া রিটার্নের জন্য এসআইপি-র এত গুণগান, ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের তুলনায় কি তা সব সময়ই অনেকখানি বেশি?
এক কথায় এর উত্তর দেওয়া শক্ত। কারণ, এসআইপি-তে আপনার রিটার্ন নির্ভর করে অনেকগুলি জিনিসের উপর। যেমন, ফান্ড বাছাই, শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজারের ওঠা-পড়া ইত্যাদি। আসলে এসআইপি থেকে বড়সড় লাভের কড়ি ঘরে তুলতে কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখা জরুরি। তাই নীচের বিষয়গুলি খেয়াল রাখুন
• এসআইপি-তে লগ্নির জন্য প্রথমেই দরকার ধৈর্য, শৃঙ্খলা আর বাজারের ওঠা-পড়ায় অবিচল থাকার কল্জে। কিছু দিন ন্যাভ টানা পড়লেই যদি টেনশনে ফান্ড ভাঙিয়ে ফেলেন, তা হলে কিন্তু মোটা টাকা কখনওই ঘরে তুলতে পারবেন না। লম্বা সময় ধরে টাকা আপনাকে লাগাতেই হবে।
• অনেকের ধারণা, পাঁচ-ছ’বছর সময়ই এসআইপি-র পক্ষে যথেষ্ট। আদপে তা নয়। চোখে পড়ার মতো রিটার্ন পেতে অন্তত ৮-১০ বছর লাগাতার লগ্নির জন্য তৈরি থাকুন।
• যদি মনে করেন ইক্যুইটি ফান্ডে রাতারাতি মোটা মুনাফা করব, তা অসম্ভব। আসলে বাজারের সঙ্গে সঙ্গে এসআইপি-র ন্যাভ যত ওঠা-নামা করবে, তত তহবিল বাড়বে আপনার। কারণ ন্যাভ পড়লে, তবেই আপনার হাতে বেশি ইউনিট আসবে। আবার তার পর যখন তা উঠবে, তখন ওই ইউনিট থেকেই বেশি টাকা পাবেন আপনি।
• ফান্ডে লগ্নির একটা মস্ত সুবিধা হল, সেখানে ঢালা টাকা সাধারণত বিভিন্ন শিল্পের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। বিশেষত ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে। অনেক সময় লাগানো হয় ঋণপত্রেও। হয়তো পশ্চিমী দুনিয়ায় মন্দার জন্য মার খাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। কিন্তু তখন আপনার রিটার্নকে কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে দিয়ে যাচ্ছে দেশে চাঙ্গা ব্যাঙ্কিং শিল্প। কখনও বা মুষড়ে পড়া পরিকাঠামো শেয়ারের ক্ষতি সামলে দিচ্ছে ওষুধ শিল্পে লগ্নি। এসআইপি মারফত ফান্ডে লগ্নি মানে এই নয় যে প্রতি মাসে প্রতি শিল্পে কেনা সব ইউনিট লাভের মুখ দেখছে। কিন্তু আমরা লগ্নি করি এই ভরসায় যে, দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির তুলনায় লাভের ঘরেই বেশি থাকব আমরা। সব মিলিয়ে ফুলেফেঁপে উঠবে তহবিল। সম্ভব হবে মুনাফার মুখ দেখা।
• কেন লাভের ঘরে থাকার কথাই বেশি ভাবছি আমরা? এ ভাবে ভাবুন, চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে পরেই আপনি যে বেতন পেতেন, ১০ বছর পরেও কি তা-ই পান? নিশ্চয়ই না। তা বেড়ে যায় অনেকখানি। তেমনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সংস্থার আয়ও। মাঝেমধ্যে তাতে ছেদ পড়লেও যে কোনও ভাল সংস্থার ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে তা বাড়বে, এমনটাই প্রত্যাশিত। আর আয় ও মুনাফা যদি বাড়ে, তবে দর বাড়বে তার শেয়ারেরও। সুতরাং আগে থেকে যদি সেই সংস্থার শেয়ার তুলনায় কম দামে কেনা থাকে, তবে পরে দাম বাড়লে তাতে লাভের মুখ দেখারই সম্ভাবনা। মূলত এই যুক্তিতে ভর করেই এসআইপি করি আমরা। আশা রাখি চড়া রিটার্নের।
• তা বলে অনন্ত কাল ন্যাভ ওঠার আশায় বসে থাকা কোনও কাজের কথা নয়। পরিস্থিতি বুঝে অনেক সময় ফান্ডে লগ্নির টাকা ভাঙিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষত যখন দেখবেন দীর্ঘ দিন যাবৎ বাজার ওঠার সুবিধাটুকুও ওই ফান্ড ঘরে তুলতে পারছে না। পিছিয়ে পড়ছে সূচকের থেকে। প্রশ্ন থাকছে তা পরিচালনার বিচক্ষণতা নিয়ে। এ সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের থেকেও কম রিটার্নে ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নির ঝুঁকি আপনি নেবেন কেন? এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে নিয়মিত অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টের দিকে নজর রাখুন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.