এক সময় বেশ কিছু পুজো শুরু হয়েছিল রাজা, জমিদারদের উদ্যোগে। এখন রাজা নেই! জমিদারের জমিদারি গিয়েছে। কিন্তু কয়েকশ বছর আগে শুরু হওয়া ওই পুজোগুলি বন্ধ হয়ে যায়নি। কোথাও পুজোগুলির দায়িত্ব নিয়েছেন পরিবারের উত্তর পুরুষরা। কোথাও হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। পুজোগুলিতে ঝলমলে আলোর রোশনাই নেই। নেই থিমের ছোঁয়া বা সুন্দর মন্ডপও। তার পরেও মালদহের চাঁচল মহকুমা জুড়ে সামন্ত যুগের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ একাধিক পুজো আজও দর্শনার্থীদের কাছে সমানভাবেই আকর্ষনীয়। যেমন পাহাড়পুর চন্ডীমন্ডপে চাঁচল রাজবাড়ির পুজো। ৯ হাজার টাকা বরাদ্দে ৩০০ বছরের ওই পুরানো পুজো এখন করছে ট্রাস্টি বোর্ড। কিন্তু সামান্য বাজেটেও ঐতিহ্য বদলায়নি। ষষ্ঠীর ১২দিন আগে কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে শুরু হয় দেবীর আরাধনা। অষ্টমীতে কুমারী পুজোয় গোটা চাঁচল কার্যত ভিড় করে পুজো মন্ডপে। আবার জমিদার ঈশ্বরচন্দ্রের মালতিপুর কালীবাড়ির দুর্গাপুজোয় ভক্তি ও নিষ্ঠার টানে একবারের জন্য হলেও হাজির হন দর্শনার্থীরা।
চাঁচল থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে কলিগ্রাম কাঁসারিপাড়া চন্ডীমন্ডপের পুজোও শুরু হয়েছিল নবাব আলিবর্দি খাঁ-এর আমলে। ১৭৬০ সালে ওই পুজো শুরু করেছিলেন নবাবের ইজারাদার ভোদল রায়চৌধুরী। কলিগ্রাম মধ্যপাড়ায় জমিদার বদনরাম চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত পুজোও আজও আকর্ষনীয়। ডাকের সাজের প্রতিমা ছাড়াও সিংহ সাদা রঙের। দশমীর সন্ধ্যায় রীতি মেনে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় রানী নদীতে। কথিত রয়েছে, খাজনা দিতে না পারায় নবাব সিরাজদৌল্লা বদনরাম চৌধুরীকে বাক্সবন্দি করে ভাগীরথী নদীতে ভাসিয়ে দেন। এক ফকিরের চেষ্টায় প্রান ফিরে পাওয়া বদনরামকে দেখে মুগ্ধ নবাব তাকে ৫টি পরগনা পুরস্কার দেন। তার পরেই পুজো শুরু করেন তিনি।
বগচড়া চৌধুরী বাড়ির পুজোয় দেবী আনন্দময়ী মা। জমিদার ঘনশ্যাম রায় চৌধুরী ওই পুজো শুরু করেছিলেন। রতুয়ার কাহালা শিবপুর সর্বজনীনের পুজো ৩০০ বছরের পুরনো। পুজো শুরু করেছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সৌরীন্দ্রমোহন মিশ্রের পূর্বপুরুষরা। ওই এলাকায় তাঁদের জমিদারি ছিল। রীতি মেনে আজও নবমীতে কয়েকশ পাঁঠাবলি হয়। রতুয়ার সবথেকে বড় মেলা হয় এখানেই। ২৫০ বছরের পুরনো রতুয়ার বাখরা সর্বজনীন পুজোর একসময় শুরু হয়েছিল প্রয়াত গনিখান চৌধুরীর মামাবাড়ি তথা নুপুরের খান জমিদারদের উদ্যোগে। সেখানে সমস্ত দেবদেবীর রং হয় সোনালী। আবার চাঁচলের রাজা প্রবর্তিত সামসি দুর্গাতলা সর্বজনীন পুজোয় আজও দেবীর মাথায় শিবগঙ্গা ও দুই পাশে দুই পরি থাকে। হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকাবাজারে পুজো শুরু করিছিলেন জমিদার হরিমোহন মিশ্র। জমিদার রামপ্রসন্ন রায়ের পুজো এখন ভিঙ্গোল সর্বজনীন দুর্গা পুজো। ত্রিবেণীর জল ছাড়া এই পুজো হয় না। |