শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) বহু কোটি টাকা দুর্নীতির সিবিআই তদন্তের দাবিতে আন্দোলনে নামল দার্জিলিং জেলা সিপিএম। মঙ্গলবার শহরের বিভিন্ন রাস্তাগুলিতে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে হোর্ডিং লাগান হয়েছে দলের তরফে। ইতিমধ্যে এই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস (সমতল)। এবার চাপ বাড়াতে আসরে নেমে পড়লেন বামেরাও। বামেদের অভিযোগ, দু-একজন বাস্তুকার, কয়েকজন ঠিকাদারকে গ্রেফতার করে মূল অভিযুক্তদের আড়াল করা হচ্ছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে এসজেডিএ-এর কত কোটি টাকা যে লুঠ হয়েছে তার হিসেব মিলছে না। অথচ মামলায় জেরা করার পরেও বোর্ডের অন্য সদস্য, মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিককে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। যে তদন্ত চলছে তা কতটা ঠিকভাবে হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আমরা দুর্নীতির সিবিআই তদন্ত দাবি করছি।”
পাশাপাশি, এসজেডিএ এর বিভিন্ন কাজের তদন্তের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুজয় ঘটক। তিনি বলেন, “কেন এখনও পর্যন্ত প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না। আমরা এর বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করছি। পাশাপাশি এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের জনমত তৈরি করতে গণসাক্ষর সংগ্রহ ও লিফলেট বিলি করা হবে।” দলীয় সূত্রের খবর, সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে পৃথকভাবে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস ও সিপিএম। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেছেন, “তদন্ত ঠিক পথে এগোচ্ছে।” |
বামেদের অভিযোগ, তিনটি বৈদ্যুতিক চুল্লি ও মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে তিনজন বাস্তুকার, ও ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার ও এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোন চার্টশিট জমা দিতে পারেনি পুলিশ। শুধু প্রাক্তন সিইও বা চেয়ারম্যান নন, বোর্ড সদস্যদের মধ্যে যাঁরা দুর্নীতি দেখেও নীরব থেকেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছে সিপিএম।
প্রসঙ্গত, শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বাস্তুকার প্রবীণ কুমার, মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পালকে। এ ছাড়া বরাত পাওয়ার কাজে দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোর কর্ণধার অজিত বন্দোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে দেবব্রত বন্দোপাধ্যায়কে। গ্রেফতার হন নিউ ইন্ডিয়ার কর্ণধার তাপস বসু ও অজয় মৈত্র, নন্দিনী কনস্ট্রাকশন-এএর শঙ্কর পাল এবং ঠিকাদার সংস্থার কর্মী অমল কৃষ্ণ সাহাকে। ক্যামেরা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল এমএস কোম্পানির কর্ণধার সুব্রত দত্তকে। তবে তাঁর জামিন হয়ে গিয়েছে। বামেদের দাবি, এমএস-এর কর্ণধার শিলিগুড়িতে ত্রিফলা আলো বসানোর কাজও করেছেন। তা নিয়েও তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে বলে বাম নেতাদের দাবি।
পুলিশ ও এসজেডিএ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত আর্থিক দুর্নীতির নানা মামলার ব্যাপারে বোর্ডের চারজন সদস্যকে ডেকে পাঠিয়ে জেরা করেছেন গোয়েন্দারা। বর্তমানে মালদহের জেলাশাসক তথা এসজেডিএ এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান গোদালা কিরণ কুমারকেও একাধিকবার পুলিশ জেরা করেছে। বোর্ড সদস্য হিসেবে তৃণমূলের কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি চন্দন ভৌমিক, ও কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলার সভাপতি(সমতল) শঙ্কর মালাকারকেও ডেকেছিল পুলিশ। প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকেও ডেকে পুলিশ নানা বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছে।
|