বাজার আগুন, সঙ্কটে পারিবারিক পুজো
থিম পুজোর রমরমার যুগে পিছিয়ে পড়ছে প্রাচীন পুজোগুলি। যার পিছনে বাজারের অগ্নিমূল্যকেই দায়ী করছেন অধিকাংশ পারিবারিক এবং পাড়া পুজোর কর্তারা। সদস্য ছাড়া অন্য কারও থেকে আয়োজনের খরচ তুলতে পারেন না বলে ঐতিহ্যবাহী ওই সব দুর্গাপুজো টিকিয়ে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন বেশিরভাগ পুজো কর্তাই। তবু উত্‌সাহে ভাটা নেই একটুও।
এমনিতে পুরুলিয়া জেলায় এখনও পর্যন্ত তেমন ভাবে থিম পুজোর চল শুরু হয়নি। পারিবারিক পুজোর সংখ্যাই বেশি। গত তিন দশকে সর্বজনীন নাম দিয়ে অবশ্য কয়েকটি নতুন পুজো চালু হয়েছে। পুলিশ সত্র অবশ্য বলছে, জেলার প্রায় ৭০০ পুজোর মধ্যে তার সংখ্যা মাত্র ৫০-৬০টি। একটি পারিবারিক পুজোর কর্তা বলছেন, “গত কয়েক দশকে পুজোর খরচ বেড়েছে বহুগুন। কিন্তু সে অনুপাতে আয়োজনের টাকা তোলার কোনও নতুন উপায় হয়নি। ফলে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।”
বিপুল পরিমাণের খরচ তবে ওই সব পুজো সামলায় কী করে?
মানবাজারের দত্ত বাড়ির পুজো।—নিজস্ব চিত্র।
মূলত দু’ ভাবে পাড়া বা গোষ্ঠী কিংবা পারিবারিক পুজোগুলির খরচ উঠে আসে। এক, পরিবারের সদস্যের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে। দুই, মা দুর্গার নামে জমি বা বাড়ি ভাড়ার আয় থেকে। পুঞ্চার ধাদকি গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজো প্রায় ২০০ বছরেরও অধিক প্রাচীন। পরিবারের অন্যতম কর্তা শঙ্করীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “তিন দশক আগেও আমাদের পুজোর বাজেট ছিল ২-৩ হাজার টাকা। এখন সেই পুজোর খরচ লক্ষ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে!” আবার এ বারে ৯৫ বছরে পা দিয়েছে মানবাজার সুবর্ণবণিক সমিতির পুজো। শহরের চৌমাথার ওই পুজো এলাকার অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র। সমিতির সম্পাদক আনন্দময় সেন চার দশক আগের পুজোর খরচের হিসেব টেনে বললেন, “১৯৬৮ সালে আমাদের পুজোয় মোট খরচ হয়েছিল ৩,৩৪২ টাকা ৭৩ পয়সা। তখন প্রতিমা কেনা হয়েছিল ৩৩৮ টাকায়, আলোর খরচ ছিল ৭৩ টাকা। আর এ বছর আমাদের মোট ৫৫ হাজার টাকা বাজেটের ২০ হাজার টাকা চলে গিয়েছে শুধু মাত্র প্রতিমা কিনতেই!”
মেলায় বাক্সে রাখা পুজোর সামগ্রী মিলিয়ে দেখছিলেন শহরের দত্ত বাড়ির পুজোর অন্যতম কর্তা তিমির দত্ত। তিনি বলছেন, “পূর্ব পুরুষের চালু করা এই পুজো আয়োজনের সমস্তটাই আমাদের করতে হয়। বাজার অগ্নিমূল্য হওয়ায় বড় রকমের চাপ তো তৈরি হয়েইছে।” আবার ময়রা মেলা কমিটির কর্তা মঙ্গলময় দত্ত স্বীকার করে নিচ্ছেন, “এই চড়া বাজারে পুজো টিকিয়ে রাখা দায়। পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রাখতে গিয়ে অবস্থা সঙ্গীণ হয়ে উঠছে। কিন্তু পরিবারের অকল্যাণের ভয়ে এই পুজো তো বন্ধ করতেও পারি না!” বড় বড় বাজেটের থিম পুজো না-ই থাকুক। শাস্ত্রীয় রীতি মেনে বহু যুগ ধরে এই সব পারিবারিক পুজো চলে আসছে। বাহারি আলো কিংবা চটকদার আতসবাজির প্রতিযোগিতাও না-ই বা থাকল। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উত্‌সব টিকিয়ে রাখার লড়াইটা কিন্তু দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন পুরুলিয়া জেলার ওই সব পুজো কর্তারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.