ডিভিসি-র নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পকে ঘিরে তৈরি হওয়া জট নিয়ে এ বার পুরুলিয়া জেলা পুলিশের কাছে রিপোর্ট চাইল রাজ্য পুলিশের ডিজি-র দফতর। মঙ্গলবারের মধ্যেই রঘুনাথপুর ও নিতুড়িয়া থানা থেকে বিশদ রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে জেলায়। তা খতিয়ে দেখে ডিজি-র দফতরে পাঠানো হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “পুরুলিয়ায় এসে মুখ্যমন্ত্রী আলোচনার মাধ্যমেই ডিভিসি-র সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু, প্রয়োজনে পুলিশ মোতায়েন করে কাজ করানো হলে কী সমস্যা হতে পারে, তা নিয়ে রিপোর্ট জানতে চাওয়া হয়েছে।”
সম্প্রতি মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন। রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র প্রকল্পের সমস্যা মেটাতে রাজ্য সরকার তাঁদের পাশেই রয়েছে বলে রবীন্দ্রনাথবাবুকে আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তার পরেই পুলিশের শীর্ষস্তরে নড়াচড়া শুরু হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, জেলা পুলিশের কাছে মূলত জানতে চাওয়া হয়েছে এই মুহূর্তে পরিস্থিত কতটা জটিল, ওয়াটার করিডর (প্রকল্পে জলের পাইপলাইন) ও রেল করিডরের কাজে কী কী ধরনের বাধা আসছে।
ঘটনা হল, আগে ওয়াটার করিডরের কাজ পুলিশ মোতায়েন করে শুরু করা হলেও জমি মালিকদের একাংশের বাধায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর পুলিশ পাঠানো হয়নি। কাজও থমকে। সেই প্রেক্ষিতেই পুলিশের স্থানীয় স্তর থেকে জেলায় পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশ দিয়ে জোর করে কাজ করাতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হবে। এলাকায় আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতির অবনতি হওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে। একই কারণে জোর করে কাজ বন্ধ করার পরে জমিরক্ষা কমিটি বা ল্যান্ডলুজারস কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ জানালেও তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেও ওই রিপোর্টে জানিয়েছে দুই থানা।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আজ, বুধবার জট মেটাতে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের দফতরে জমি মালিকদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে জেলা প্রশাসন ও ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে ডাকা হয়েছে ওই প্রকল্পে শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’কেও। উপস্থিত থাকার কথা স্থানীয় রঘুনাথপুর ও পাড়া কেন্দ্রের বিধায়কের। স্থির হয়েছে, প্রতিটি সংগঠনের সঙ্গে পৃথক ভাবে আলোচনায় বসবে পুলিশ, প্রশাসন এবং ডিভিসি। বুধবার বৈঠকা হবে প্রকল্পের মূল গেট আটকে আন্দোলন করা ‘ল্যান্ডলুজারস কমিটি’র সঙ্গে। পরের ধাপে বৈঠকে থাকবেন ওয়াটার করিডরের কাজ বন্ধ করে দেওয়া ‘জমিরক্ষা কমিটি’র প্রতিনিধিরা। পরে বসা হবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলনের বিরোধিতা করে এলাকায় গড়ে ‘জীবন-জীবিকা রক্ষা কমিটি’র সঙ্গেও।
পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “ডিভিসি-র প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সমস্ত সংগঠনের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে। আলোচনাতেই সমস্যা মিটবে বলে আমরা আশাবাদী।” ডিভিসি-র মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস মিত্রও বলেন, “সব সংগঠনের দাবি এক নয়। ফলে, পৃথক ভাবে বসার সিদ্ধান্ত আলোচনার পরিবেশের পক্ষে স্বাস্থ্যকর।”
|