রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া জট নিয়ে বৃহস্পতিবারই মহাকরণে সংস্থার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনে রাজ্য যে কঠোর মনোভাব নেবে, তা-ও রবীন্দ্রনাথবাবুকে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকের পরেই তৎপরতা শুরু হল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের অন্দরে। প্রয়োজনে সর্বদল বৈঠক ডাকারও ইঙ্গিত মিলেছে। এত দিন যা করা হয়নি।
শুক্রবারই ওই জট কাটানোর লক্ষ্যে ডিভিসি-র রঘুনাথপুর প্রকল্পের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করলেন জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। বৈঠকে ছিলেন রঘুনাথপুর প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়র দেবাশিস মিত্র, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকার, রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিন এবং পুরুলিয়ার বিধায়ক তথা বিধানসভার স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কে পি সিংহ দেও। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা থেকে প্রকল্পস্থলে জল নিয়ে আসার পাইপলাইন বসানোর (ওয়াটার করিডর) জন্য অধিগৃহীত জমি নিয়ে জটের জেরে ডিভিসি-র প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে। স্থায়ী চাকরির দাবিতেও আন্দোলনে নেমেছে জমিহারাদের একাংশ। এই জট কাটাতে আগামী ৯ অক্টোবর জেলাশাসকের দফতরে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আন্দোলনকারী জমি মালিকদের সঙ্গে ডিভিসি কর্তারাও থাকবেন। ওই বৈঠকে বসার আগে সমস্যা এই মুহূর্তে ঠিক কোন কোন জায়গায়, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ছবি পেতেই এ দিনের বৈঠক বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
দীর্ঘ বৈঠক শেষে জেলাশাসক বলেন, “প্রশাসন ডিভিসি-কে সব দিক দিয়ে কী ভাবে সাহায্য করতে পারে, তা নিয়ে কথা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে।” বস্তুত, সরকার যে সব রকম ভাবে তাঁদের পাশে আছে, সেই বার্তা বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন ডিভিসি-র চেয়ারম্যানকে। প্রশাসনের ভূমিকায় খুশি ডিভিসি কর্তৃপক্ষও। চিফ ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, “বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হল। সমস্যা কিছু রয়েছে ঠিকই। তবে, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করব। এটকু বলতে পারি যে, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।”
সম্প্রতি ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জট না কাটলে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে রঘুনাথপুরে আর বিনিয়োগ না করে তাঁরা তা সরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন ঝাড়খণ্ডে। এ দিনের বৈঠকের পরে অবশ্য প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, সে কথা মেনেও দেবাশিসবাবু বলেন, “আমার বিশ্বাস তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ও রঘুনাথপুরেই হবে!” সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর কথায়, “কাজ কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ নেই। প্রকল্পের কাজ যাতে তাড়াতাড়ি শেষ করা যায়, সেই লক্ষ্যেই এ দিনের বৈঠক।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে বলেছি, নিয়োগে যেন স্থানীয়রা অগ্রাধিকার পায়।” জট কাটাতে প্রয়োজনে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়েও বৈঠক হবে বলেও সভাধিপতি জানিয়েছেন।
|