এবার দুর্গা আসছেন পালকিতে।
‘‘কিন্তু তাতে কি কিছু বদলাবে?” কথা শেষ না হতেই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন কালীগঞ্জের ঘোড়াইক্ষেত্র গ্রামের প্রবীণ জীতেন সর্দার। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর কালীগঞ্জ কাটোয়া মোড় থেকে আট কিলোমিটার দূরে ঘোড়াইক্ষেত্র। তবে সরকারি খাতায় নাম যাই হোক না কেন এই গ্রামকে আশপাশের সকলে ‘পালকি গ্রাম’ বলেই চেনেন। এক কালে এই গ্রামের মানুষ পালকি টেনেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এখন সেই পালকিও নেই, নেই সেই জোয়ান বেহারারাও। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ পালকি বিক্রি করে দিয়েছেন। যা দুই একটি এখনও রয়েছে সেগুলোও কাঁধে ওঠেনি বহুদিন।
|
জীতেনবাবুর আক্ষেপ, “একটা সময় বিয়ে, অন্নপ্রাশন কিংবা দুর্গার ঘট নিয়ে যাওয়ার সময় পালকিই ছিল শেষ কথা। এখন কতবারই তো দুর্গা পালকিতে আসেন, যান। কিন্তু আমাদের পালকিগুলোর স্থবিরতা কাটে না। সুদিন ফেরে না পালকি গ্রামেরও।” তাঁর কথায়, “অনেক আগে থেকেই বুঝতে পারছিলাম পালকির কদর কমছে। ভাড়া মিলছে না। এতদিন বাড়িতেই তো ছিল। কেমন যেন মায়া বসে গিয়েছিল। তবে শেষমেশ আর আটকাতে পারলাম না। কাঠের দামে বিক্রি করে দিতে হল। এখন সে সব ভুলে মাঠে চাষ করছি।” |
সাধের পালকি পড়ে থাকে ঘরেই।—নিজস্ব চিত্র। |
তবে শত কষ্টেও পালকিটা এখনও বাড়িতে রেখে দিয়েছেন যদু দেবনাথ। সাধের পালকির গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে যদুবাবু বলেন, “এখনও কেমন জেল্লা দিচ্ছে দেখেছেন। ভাড়ার জন্য মাঝে মধ্যে দু’ একজন বাড়িতে হাজির হন বটে তবে সবাই ভাড়া করতে চান না।” কেন? যদুবাবু বলেন, “খরচে সকলের পোষায় না। পালকির ভাড়া, বেহারার খরচ, দূরে যেতে হলে পালকি নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া, সব মিলিয়ে খরচের ধাক্কাটা এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যায়। তবে সখ, আহ্লাদ করে কেউ কেউ মাঝে মধ্যে বিয়েতে ভাড়া নেন। তাই বিয়ের মরসুমের আগে কষ্ট করে হলেও পালকিতে নতুন রং করিয়ে নিই।”
তাতে পালকির শ্রী ফিরলেও পালকির মালিক কিংবা বেহারাদের কোনও পরিবতর্ন হয় না। জেট গতির যুগে পালকি সত্যিই ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। দেবীর পালকিতে আগমনও তাই ভরসা দিতে পারে না পালকি গ্রামকে। |