বেথুয়াডহরি কলেজে মঙ্গলবার এসএফআই এবং টিএমসিপি-র সমর্থকদের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে জখম হলেন ৫ ছাত্র। টিএমসিপি-র ওই আহত সমর্থকদের বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গণ্ডগোল ঠেকাতে গিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধাপক-সহ অন্য অধ্যাপকরাও এস এফ আই সমর্থকদের দ্বারা প্রহৃত হয়েছেন বলে অভিযোগ।
কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথিও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল ৫টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে নাকাশিপাড়ার বেথুয়াডহরি কলেজে। ঘটনার পর ৬ জন ছাত্রের বিরুদ্ধ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধাপক অলোককুমার দাস। এই ঘটনার পর তৃণমূল সমর্থকরা বেথুয়াডহরি হাসাপাতালের পাশে সি পি এমের নাকাশিপাড়া জোনাল কমিটির দফতরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ সেখান থেকে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে ২ জন ছাত্র। |
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন কলেজের ওয়েবসাইট উদ্বোধন, বিবেকান্দ কক্ষ উন্মোচন-সহ একাধিক অনুষ্ঠান ছিল। সেই উপলক্ষে অনেক অতিথি কলেজে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান পর্ব মিটে যাওয়ার পর কলেজে নবীনবরণ করা যায় কিনা তা নিয়ে কলেজ শিক্ষকরা বৈঠকে বসেছিলেন। সেই বৈঠকে ছিলেন কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি কালীপ্রসন্ন দাস। তখনই ৫ জন টিএমসিপি সদস্য ছুটতে ছুটতে শিক্ষকরা যেখানে বৈঠক করছিলেন সেখানে ঢুকে পড়ে তাঁদের বাঁচানোর জন্য আর্জি জানায়।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধাপক অলোকবাবু বলেন, “ওই ছাত্রদের পিছনে পিছনে লাঠি ও রড হাতে বেশ কয়েক জন এসএফআই সমর্থককে ছুটে আসতে দেখি। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আমরা ওই ৫ ছাত্রকে বাঁচাতে দরজা বন্ধ করে দিই। বাইরে থেকে ওরা অশালীন ভাষায় গালি দিতে থাকে। তারপর ওরা দরজা ভেঙে ঘরের ভিতরে ঢুকে লাঠি ও রড দিয়ে ওই ৫ জনকে পেটাতে থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে আমরা ঠেকাতে যাই। ওরা আমাদেরও রেয়াত করেনি। আমি ও আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মী আহত হয়েছি। ওরা যথেচ্ছ ভাঙচুর করেছে ও নথিপত্র নষ্ট করেছে।” কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চোখের সামনে নিজেদের ছাত্রকে রক্তাক্ত হতে দেখে স্থির থাকতে পারিনি। ছুটে গিয়েছিলাম ঠেকাতে। কিন্তু আমাদেরও ছেড়ে কথা বলল না। ছাত্রদের হাতে এ ভাবে মার খেতে হবে তা ভাবিনি কখনও।” এরই মধ্যে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ পৌঁছনোর আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত ৫ ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ৫ জনের মাথায় আঘাত লেগেছে। আহত প্রথম বর্ষের ছাত্র অঙ্কিত চৌধুরি বলেন, “প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী স্কলারশিপের জন্য ফর্ম ফিল আপ করছিল। সেই সময় এসএফআই-এর এক সমর্থক ওই ছাত্রীর ওড়না ধরে টানে। আমরা প্রতিবাদ করতেই ওরা বাঁশ, লাঠি, রড নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসে। প্রাণ বাঁচাতে টিচার্স রুমে ঢুকেও শেষ রক্ষা হল না। শিক্ষকরা না থাকলে ওরা আমাদের মেরেই ফেলত।”
টিএমসিপি জেলা সভাপতি জয়ন্ত পাল বলেন, “ওই কলেজ দখল করার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে এস এফ আই চেষ্টা চালাচ্ছে। গত নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী পর্যন্ত দিতে দেয়নি। সামনে নির্বাচন, তাই সেই সন্ত্রাস ভয়ঙ্কর আকার নিতে শুরু করেছে।” এসএফআই-এর জেলা সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, “বেথুয়াডহরি কলেজে ঠিক কী ঘটেছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে ওই ধরনের ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত নয়।” আহতদের বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিত্সা করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় টিএমসিপির সমর্থকরা সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ের সামনে এসএফআই-এর ৩ জনকে দেখতে পেয়ে তাড়া করলে তারা জোনাল কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। তখন টিএমসিপির সমর্থকরা ওই কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে। পুলিশ গিয়ে ওই ৩ জন এসএফআই সমর্থককে গ্রেফতার করে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও পলাশিপাড়ার বিধায়ক এস এম সাদি বলেন, “অধ্যাপকদের উপরে হামলার অভিযোগ সঠিক নয়। তবে আজ আমাদের দু’জন ছাত্রকে মারধর করা হয়েছে।” স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের কল্লোল খাঁ বলেন, “আমাদের ছাত্রদের খুনের চেষ্টা করেছিল। আমাদের ছেলেরা সংযত আচরণ করেছে। সিপিএমের ওই কার্যালয় ঘেরাও করে রাখার ঘটনা বানানো। এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।” জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “বেথুয়াডহরি কলেজে টিএমসিপি-র ছেলেদের মারধর করেছে এসএফআই-এর ছেলেরা। আমরা ৪ জনকে গ্রেফতার করেছি।” |