জগজ্জননী বন্দনার প্রস্তুতি গাঁধী আশ্রমে
কেউ প্রতিমার অঙ্গসজ্জায় ব্যস্ত। কেউ ঝাঁটা হাতে পরিষ্কার করছে মণ্ডপ। জগজ্জননীর আরাধনার আয়োজনে দম ফেলার ফুরসতটুকুও নেই হলদিয়ার বাসুদেবপুর গাঁধী আশ্রমের আবাসিকদের।
মহাত্মা গাঁধী স্মৃতি বিজড়িত এই আশ্রমের তিনটি ভবনে ৬ থেকে ১৮ বছরের ১৭৫ জন ‘অনাথ’ ও মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেমেয়ে থাকে। ট্রাস্ট কমিটির সদস্য তথা সেবা প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক দুলাল সামন্ত বলেন, “স্কুলের সময়টুকু ছাড়া এরা থাকে ওই ঘেরাটোপের মধ্যে। নিজেদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এই আবাসিকদের বিশেষ আনন্দ দেওয়ার লক্ষ্যে ২০০১ সালে শারদোৎসবের সূচনা হয় আশ্রমে।”
আবাসিকরা বাদে আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত সকলেই এবং স্থানীয় লোকজন অর্থ ও নানা সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেন পুজোর জন্য। আশেপাশে কয়েক কিলেমিটারের মধ্যে কোনও পুজো না হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই পুজোয় ভিড় জমান অঞ্জলি দিতে, প্রসাদ নিতে। গাঁধী আশ্রম ট্রাস্ট কমিটির সম্পাদক অশীতিপর প্রাক্তন শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “আবাসিক ও এলাকাবাসী সকলেই আনন্দময়ীর আনন্দোৎসবে মাতেন, এটাই বড় কথা। খুবই ভাল উদ্যোগ। এর মধ্য দিয়ে জীবনে অনেক শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ থাকে।” স্থানীয় সামাজিক পরাণচক্র শিক্ষানিকেতনের প্রধান শিক্ষক দীপনারায়ণ জানা বলেন, “এই উৎসবকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পায় আবাসিকরা। এই সুযোগে আশ্রমের সঙ্গে এলাকাবাসীর একটা যেন পারিবারিক বা আত্মীয়তার যোগসূত্র গড়ে ওঠে। আধুনিক ভাবে হলেও বাইরের বৃহত্তর সমাজ জীবনে প্রবেশের একটা মহড়া যেন হয়ে যায়।”
দুর্গার সাজ দেখছে আশ্রমের আবাসিকরা। —নিজস্ব চিত্র।
পুজোর কাজে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে আশ্রমের ছেলেরা। বিশ্ব শান্তি থিমে ছবি এঁকে একটি আন্তর্জাতিক সেবাসংস্থার রাজ্য স্তরের প্রথম হয়েছে নবম শ্রেণির দেবাশিস পট্টনায়ক। প্রয়াত বাবার শিল্পীসত্তাকে বয়ে বেড়িয়ে মাতৃমূর্তি গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছে সে। জল চিকচিকে চোখ নিয়ে সে বলে, “এর আগে আশ্রমের সরস্বতী মূতি বানিয়েছি। বাবাকে খুঁজে পাই বলে ওই শিল্পকর্ম আমার ভাল লাগে।” পুজোর পুরোহিতের সহকারী হিসেবে ছ’বছর ধরে প্রায় একাই দায়িত্ব পালন করে আসছে দশম শ্রেণির হীরা পাত্র। তার সহযোগীর ভূমিকা নেয় সহপাঠী সরিফুল ইসলাম। অষ্টমী পুজোর অঞ্জলির ডালার দায়িত্ব নিয়ে আসছে দশম শ্রেণির রঞ্জন অধিকারী। গ্রামবাসীদের খিচুড়ি ভোগ, অন্নভোগ বিতরণ, অতিথি আপ্যায়ন, সাংস্কৃতিক মঞ্চের দায়িত্ব সবই সামলায় বগান মুর্মু, সুবর্ণকান্তি ঘড়া, চন্দর দাসরা। নবমীতে হয় কুমারী পুজো। ওই দিন ব্যস্ততার শেষ নেই আবাসিকদের। আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত সারদা মাইতি, কাজল সামন্তরা বলেন, “কাজের দায়িত্ব কমলেই ওদের মুখ ভার। বাবা-মা হারা ওই ছেলেমেয়েদের এমন অনাবিল আনন্দ দেখলে সবাই খুশি। সাংস্কৃতিক মঞ্চে ওদের অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় জমান আশপাশের প্রায় পাঁচটি মৌজার লোকজন।” এ বার গীতিআলেখ্য ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ ও নাটক ‘মহেশ’-এর রিহার্সাল চলছে জোর কদমে। মঞ্চস্থ হবে নাচ, গান, আবৃত্তি, মূকাভিনয়, যোগব্যায়াম, কথা বলা পুতুল, ম্যাজিক ইত্যাদি।
পিছিয়ে নেই আশ্রমের মেয়েরাও। ফুল তোলা, মালা গাঁথা, ফল কাটা, নাড়ু তৈরি, প্রসাদ বিতরণের কাজে রয়েছে পৌলমী জানা, মালা ভুঁইয়া, সুমিত্রা মণ্ডলদের। গীতি-আলেখ্যটিতে দুর্গা হয়েছে রাখি রাউল, ‘এ বার নবীন মন্ত্রে জননী হবে তোর উদ্বোধন’-সহ অনেক গান গাইবে প্রতিমা মাণ্ডিরা। আবাসিকরা যোগ দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। পুজোর উদ্বোধন করবেন সাংসদ শিশির অধিকারী। এ বছরও আবাসিকদের জন্য নতুন পোশাক কিনে দিয়েছেন সাংসদ তথা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, “সরকার ওদের সঙ্গে আছে। জগৎ মাতাও ওদের সহায় হোন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.