পুজোর স্টলেও লড়াই সিপিএম-তৃণমূলের
ঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল। এ বার পুজোর স্টলেও সিপিএমকে টেক্কা দিতে চলেছে তৃণমূল। শহর-শহরতলি থেকে গ্রাম, সর্বত্রই শাসক দলের স্টল দেখা যাবে। ইতিমধ্যে কলকাতা থেকে বইপত্রও আনা হয়েছে। মেদিনীপুর থেকে তা বিভিন্ন ব্লকে পাঠানো হচ্ছে। পুজোর সময় বামপন্থী দলগুলো বিভিন্ন এলাকায় স্টল করে। যেখানে নানা পত্র-পত্রিকা-পুস্তিকা থাকে। রাজ্যে পালাবদলের পর এ জেলায় তৃণমূলও এমন স্টল করতে শুরু করে। তবে গত বছর পর্যন্ত তা ছিল হাতেগোনা। পঞ্চায়েতে বিপুল জয়ের পর এ বার জেলা জুড়ে শতাধিক স্টল করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। দলের জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ, প্রতি ব্লকে অন্তত তিনটি করে স্টল করতে হবে। যেখানে থাকবে দলের মুখপত্র, মুখপত্রের শারদীয়া সংখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্য মন্ত্রীদের লেখা বই। শহর এবং শহরতলিতে আরও বেশি সংখ্যক স্টল করতে হবে।
কেন এমন উদ্যোগ?
তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “পুজোর সময় বিভিন্ন এলাকায় স্টল হয়। গত বছরও স্টল হয়েছিল। এ বার স্টলের সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকার কর্মীরা এ নিয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।”
শারদীয়া স্টলের জন্য বই বাছতে ব্যস্ত তৃণমূল কর্মীরা।
দলের এক জেলা নেতার কথায়, “এ বার স্টলের সংখ্যা বাড়ার কারণও রয়েছে। আগে এ জেলার গ্রাম আমাদের দখলে ছিল না। অধিকাংশ পঞ্চায়েতই ছিল সিপিএমের দখলে। ফলে, দলের অনেকেই স্টল নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখাতেন না। বইপত্র যদি বিক্রি না- হয়! এ বার পরিস্থিতি বদলেছে। গ্রাম আমাদের দখলে এসেছে। ফলে, দলের অনেকেই স্টল নিয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।” ওই নেতার কথায়, “ব্লক থেকে যে সংখ্যক বইপত্র চেয়ে পাঠানো হয়েছে, তা পাঠানো যাবে কি না সংশয়। কারণ, আমাদের কাছে ওই সংখ্যক বইপত্রও নেই।” সিপিএম অবশ্য বরাবরই পুজোর সময় বিভিন্ন এলাকায় এমন স্টল করে। এ বারও করছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “দলের উদ্যোগেই বিভিন্ন এলাকায় স্টল হয়। পত্রিকা- পুস্তিকা থাকে। আমাদের কয়েকটি গণ সংগঠনও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। এ বারও হচ্ছে।” দলের এক জেলা নেতার কথায়, “আমরা আচমকা কিছু করি না। যা করি ধারাবাহিক ভাবে করি। ফলে, ছাপিয়ে যাওয়ার কিছু নেই।”
মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরের মীরবাজারে সিপিএমের জেলা অফিসের সামনে এমন একটি স্টলের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন দীপকবাবুই। এদিকে, এ জেলার পঞ্চায়েতে পরিবর্তনের পর এখন স্টল করতে গিয়েও সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সিপিএমকে। কয়েকটি এলাকায় শাসক দলের কিছু কর্মী স্টল করতে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। কেমন? গত রবিবার দুপুরে দাসপুর- ১ ব্লকের এক তৃণমূল নেতাকে ফোন করেন ওই এলাকার সিপিএমের এক লোকাল কমিটির সম্পাদক। ফোনে সম্পাদকের আর্জি, ‘গত বছর যেখানে আমরা স্টল করেছিলাম, এ বার সেখানেই স্টল করব। সেই মতো দলের কয়েকজন জায়গার মাপজোক করতে গিয়েছিলেন। আপনাদের দলের কয়েকজন কর্মী বাধা দিয়েছেন। কর্মীদের বক্তব্য, ওখানে এ বার তৃণমূলের স্টল হবে। তাই সিপিএমের স্টল করা যাবে না। ব্যাপারটা একটু দেখবেন।’
জেলা পার্টি অফিসের সামনে সিপিএমের বইয়ের স্টল।
পুজোর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা- কর্মীরা জড়িয়ে থাকেন। অনেকে কমিটির সামনের সারিতে থাকেন, অনেকে আবার স্রেফ সাধারণ সদস্য হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে যে সব পুজোর নিয়ন্ত্রণ ছিল সিপিএমের হাতে, গ্রামে পালাবদলের পর এ বার সেই সব পুজোর নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছে তৃণমূলের হাতে! পুজো কমিটির সামনের সারিতে এসেছেন শাসক দলের নেতা- কর্মীরাই। তৃণমূল নেতা তথা কেশপুরের এক সর্বজনীন পুজোর উদ্যোক্তা অবশ্য বলছেন, “আমরা সকলকে নিয়েই কাজ করছি। কোনও ভেদাভেদ নেই। কয়েকজন সক্রিয় ভাবে না- থাকলেও পুজোর সঙ্গে আছেন। হয়তো আগের মতো আর কাজ করেন না। তাতে কী! পুজো তো সকলের।”
মেদিনীপুরে মার্কসীয় বইপত্রের গ্রন্থাগার রয়েছে। সিপিএমের উদ্যোগে এই গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছে। ফলে, এখানে সারা বছর বইপত্র থাকে। পুজোর সময় স্টলের জন্য কলকাতা থেকে চাহিদা মতো বই আনা হয়। আসে দলের মুখপত্রের শারদীয়া সংখ্যা। তৃণমূলের অবশ্য এ জেলায় কোনও গ্রন্থাগার নেই। এ বার বেশি সংখ্যক স্টল হবে। তাই সোমবার দুই তৃণমূল কর্মী কলকাতায় গিয়েছিলেন বই আনতে। সবমিলিয়ে ৫ হাজার পত্রিকা-পুস্তিকা আনা হয়েছে। রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কিছু বইও। যেমন ‘অনুভূতি’, ‘অশুভ সংকেত’, ‘ক্রোকোডাইল আইল্যাণ্ড’, ‘লাঙ্গল’ প্রভৃতি। ঝাড়াই- বাছাই করে চাহিদা মতো এ দিন থেকে এই সব বইপত্র ব্লকে পাঠানো শুরু হয়েছে। তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, “এমন স্টলের মাধ্যমে আসলে জনসংযোগই হয়। প্রচুর মানুষ পুজো দেখতে বেরোন। তারমধ্যে স্টলে আসেন।” সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, “জনসংযোগ তো হয়ই। পাশাপাশি, মানুষের কাছে খুব সহজে দলের বার্তা পৌঁছনো যায়। কত মানুষ পথে বেরোন। তারমধ্যে স্টলে আসেন।”
—নিজস্ব চিত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.