|
|
|
|
ভোলাগিরি আশ্রমে ভিড় জমে অষ্টমীতে
আশিস বসু • আগরতলা |
ত্রিপুরার রাজা বীর বিক্রম মাণিক্যের আহ্বানে হরিদ্বার থেকে এ রাজ্যে এসেছিলেন সাধু ভোলানন্দ গিরি। কুঞ্জবনের যে জায়গায় ভোলাগিরি আশ্রম গড়ে উঠেছে, ওই সময়ে তা ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। প্রচলিত বিশ্বাস, এক চিলতে পথ ধরেই রাজার সঙ্গেই টিলায় উঠে ‘ধ্যানমগ্ন’ হয়েছিলেন সাধু ভোলাগিরি। জনমানসে সেই টিলা ‘পবিত্র স্থান’ হিসেবে আজও পূজিত হয়। ১৯৮০-৮১ সাল থেকে ওই টিলার সবুজ গাছগাছালির সমারোহে, আশ্রমিক পরিবেশে করা হচ্ছে দুর্গা পুজো। অষ্টমীর দিন হয় ‘কুমারী পূজা’ও।
দেশভাগ এবং ত্রিপুরার ভারতভুক্তি--এ সব পর্বের বহু দিন পর, ১৯৬২ সালে ভোলাগিরির শিষ্যের শিষ্য স্বরুপানন্দজি মহারাজ, ত্রিপুরার রানি কাঞ্চনপ্রভাদেবীর সাহায্যে কুঞ্জবনে ‘ভোলাগিরি আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে আশ্রমের পরিধি বৃদ্ধি হয়েছে। আধ্যাত্মিক চর্চা ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কাজেও আশ্রম কর্তৃপক্ষ নিযুক্ত।
সেখানে আশ্রমিকেরা থাকেন। পড়াশুনো করেন। পাশাপাশি চলে সংস্কৃত শিক্ষা চর্চা। ‘সস্বরে বেদ উচ্চারণের’ পাঠ্যক্রম। আশ্রমের সেবাইত স্বামী সেবানন্দ গিরি বলেন, ‘‘সর্ব ধর্মের সমন্বয়ে আমরা বিশ্বাসী। মানবজাতির সেবা করাই আমাদের উদ্দেশ্য।’’ মা সারদা, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে স্বরুপানন্দ সরস্বতী, রামঠাকুর, স্বামী প্রণবানন্দ, স্বামী মহাদেবানন্দ, কৃপানন্দজি সবাইকেই উচ্চাসনে বসিয়েছেন আশ্রবাসীরা। আজও ‘মুষ্টিভিক্ষা’ এবং ব্যক্তিগত সাহায্যে আশ্রম চলে, এ কথাও জানান সেবানন্দ।
ভোলাগিরি আশ্রমের সাধু কৃপানন্দজির হাত ধরেই আশ্রমে দুর্গা পুজোর প্রচলন শুরু হয় ১৯৮০-৮১ সালে। ‘ঘট’ বসিয়ে দুর্গার পুজো হয়। সামনে থাকে দুর্গামূর্তির একটি ছবি। অষ্টমীর সকালে এখানে শুরু হয় ‘কুমারী পূজা’। সেবাইত স্বামী সেবানন্দগিরি জানান, ‘‘প্রায় ৩৩ বছর ধরে দুর্গা পুজোর সময়ে ভোলাগিরি আশ্রমে ‘কুমারী পূজা’ হয়ে আসছে।’’ শহর বা শহরতলির কোনও পরিবারের কন্যাশিশুকে ‘কুমারী পূজা’র জন্য নির্বাচিত করা হয়। এ বছরে যাকে নির্বাচিত করা হয়েছে, সেই শিশুটির বয়স ৬-৭ বছর। প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। শিশুটি রাজসিক, তামসিক গুণে প্রভাবিত হলে হবে না। যে কন্যাসন্তান সাত্ত্বিক গুণে প্রভাবিত, এমন শিশুকেই আশ্রম কর্তৃপক্ষ ‘কুমারী পূজা’র জন্য নির্বাচিত করেন। সেই ‘নির্বাচনের’ প্রস্তুতি চলে সারা বছর ধরে। শিশুটির বয়স হবে ৬ থেকে ১০ এর মধ্যে।
সেবানন্দ গিরির আরও বলেন, ‘‘সমাজে নারীকে মাতৃরূপে আরাধনার নীতি শিক্ষার প্রতীকী কুমারী পুজো।’’ সেবানন্দ গিরির গুরু ছিলেন কৃপানন্দজি মহারাজ। ওঁর দেখানো পথেই শহরের ভোলাগিরি আশ্রমে আজও ‘কুমারী পুজো’ হচ্ছে সমান উৎসাহ, উদ্দীপনায়। এই আশ্রমের সান্নিধ্যেই বড় হয়েছেন, সংস্কৃত শিক্ষা পেয়েছেন শিক্ষক মণিদীপা দত্তগুপ্ত। স্মৃতি হাতড়ে তিনি জানান, কুমারী পুজোর নির্বাচিত শিশুটি পরবর্তী কালে সাত্ত্বিক গুণের প্রধান্য নিয়েই বড় হয়ে উঠবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। পরিবেশের চাপে সে রাজসিক, তামসিক গুণের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে, এমনও দেখা গিয়েছে। প্রতি আশ্বিনে দুর্গা পুজোয় ‘কুমারী পূজা’র পরম্পরা ধরে রাখাটাই আশ্রমবাসীদের কাছে আনন্দের এক উৎস, সে কথাও তিনি জানান।
|
|
|
|
|
|