প্রহর মেনে রাগরাগিণীর আসর কাছাড়ে দেবলস্কর বাড়ির পুজোয়
পুজো মানেই ঢাকের বাদ্যি, সঙ্গে ক্যাসেট বা সিডি-র গান।
কিন্তু, কাছাড়ের বড়খলায় দেবলস্কর (উজির) বাড়ির পুজো তার ব্যতিক্রম। পুরোহিতের হাঁকে দু’এক বার ঢাকে কাঠি পড়লেও, ক্যাসেট বা সিডি একেবারেই নয়।
সে সব বাজানোর প্রয়োজনই তো নেই সেখানে!
পুজোর চারদিন ওই বাড়িতে যে ঠাট-চৌতালা হয়, তিথি অনুযায়ী পৃথক গানও। প্রহরে প্রহরে রাগবিশেষ সঙ্গীত পরিবেশন করেন পরিবারের সদস্যরা। দেবলস্কর বাড়ির পুজো মানেই চারদিনের গান-বাজনার আসর। একইসঙ্গে থাকে নাটক, নৃত্যনাট্য, গীতিনাট্য, লীলাকীর্তনও।
কত গান যে গাওয়া হয় তার কোনও হিসেব নেই। ‘বাড়ির পুজো’ নামের স্মারকগ্রন্থের ১৪১৫ বঙ্গাব্দের সংস্করণটি টেনে নেন ওই পরিবারের সদস্য সঞ্জীব দেবলস্কর। তাঁর উদ্যোগে ১৪১৪ সাল থেকে তিন বছর তিনটি ‘বাড়ির পুজো’ প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় সংখ্যায় ১৪টি আগমনী গানের উল্লেখ রয়েছে। আছে ৭টি ঠাট, ২টি চৌতালা, ৬টি নির্বাচিত বিজয়ার গান। সঞ্জীববাবুর কথায়, “সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী মিলিয়ে গানের সংখ্যা শতাধিক।”
দেবলস্কর বাড়ির বক্তব্য—
শোন শোন গিরিবর, রজনী প্রভাতে স্বপন দেখিনু
উমা আসিয়াছে ঘরে’, ‘বুঝি মায়ে পাশরিল মোরে
ভোলানাথ
অরণ্য পর্বতে বাস প্রতিবেশি নাহি পাশ
মন ব্যথা জানাই কাহারে

এ সব বহু গান দীর্ঘ দিন ধরে পুজোর সময় এ বাড়িতে গাওয়া হয়।
বাড়ির দুর্গোৎসবের খুঁটিনাটির দিকে লক্ষ্য রাখেন অসীম দেবলস্কর। তিনি জানান, “আমার বাবা প্রয়াত যতীন্দ্রমোহন দেবলস্করের লেখা লীলাকীর্তন, নাটকই এখন পরিবেশিত হয়। প্রতিপদ থেকে প্রতিদিন ‘আগমনী-লীলা’, অষ্টমীতে ‘চণ্ডীলীলা’, নবমীতে ‘অকালবোধন’ এবং দশমীতে ‘বিজয়া’ মঞ্চস্থ করা হয়।”
ঠিক কবে এই বাড়িতে পুজোর সূচনা, তা স্পষ্ট করে কেউ-ই বলতে পারেন না। অনুমান করা হয়, ১৮০০ সালের কয়েক বছর আগে বা পরে ওই বাড়িতে প্রতিমা তৈরি করে দুর্গাপূজা চালু হয়। সঞ্জীব-অসীমবাবুদের যুক্তি , “বাবার কাছে জেনেছি, তাঁর ঠাকুরদা তিনমূর্তির কাঠামো গড়ে বাড়িতে পুজো শুরু করেন। তিনি ১৭৮০ সাল নাগাদ জন্মেছিলেন।” তাঁরা জানান, ওই বংশের পূর্বপুরুষরা ডিমাসা রাজার উজির ছিলেন। রাজার চরম সংকটের সময় উজিরবাড়িতে দুর্গাপূজা শুরু হতে পারে না। ১৮১৭ সালে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের মৃত্যুর পর ডিমাসা রাজ্যে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়। ১৮৩০ সালে গোবিন্দচন্দ্র গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন। সে কারণেই সঞ্জীববাবুদের অনুমান, কৃষ্ণচন্দ্রের আমলেই তাঁদের বাড়িতে দুর্গাপূজার প্রচলন হয়।
তখন থেকেই কি পুজোর সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলত?
দেবলস্কর পরিবারের প্রবীণতম সদস্য ৭৬ বছরের জগদীশচন্দ্র দেবলস্কর বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই দেখছি বাড়িতে পুজোয় গানের আসর বসছে। ঠাকুমার কাছে শুনেছি, উজিরবাড়ির বৌ হয়ে এসে তিনিও এমনটাই দেখতে পেয়েছিলেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.