|
|
|
|
মন্দার জেরে জেল্লা কমেছে দিল্লির পুজোয়
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
আর্থিক মন্দার ছায়া দিল্লির পুজোতেও।
সকালের মিঠে বাতাসে শিউলির ঘ্রাণ? প্রশ্নই নেই। কাশফুল! তারও দেখা মেলে কেবল যমুনার চরেই। রাজনীতির মক্কায় পুজোর গন্ধ খুঁজতে হয় ক্যালেন্ডারের পাতাতেই। তবুও তারই মধ্যে আয়োজন বা আন্তরিকতায় পিছিয়ে থাকে না দিল্লির ছোট-বড় পুজোগুলো। কলকাতার যে কোনও পুজোর সঙ্গেই তারা পাল্লা দিতে পারে। পুজো তো আছেই, সঙ্গে রাতভর বিচিত্রানুষ্ঠান। কিন্তু এ বছর বিশ্বজনীন বেহাল অর্থনীতির জেরে সঙ্কটে দুগ্গাঠাকুর। বিজ্ঞাপন কমে গিয়েছে। পিছিয়ে এসেছে অনেক স্পনসর। যারা রয়েছে, তারাও টাকার অঙ্ক দিয়েছে কমিয়ে।
গত বছর থেকেই রাস্তা জুড়ে গেট বসানো বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লি প্রশাসন। ফলে বিজ্ঞাপন থেকে আয় এমনিতেই কমে গিয়েছিল। আর এ বার তো সরাসরি মন্দার মার! ফলে খরচ কাঁটছাঁটেই সমাধানের রাস্তা খুঁজছে দিল্লির পুজো। যেমন, চিত্তরঞ্জন পার্কের পকেট-৪০-এর নবপল্লি পুজো সমিতি। ধারে, ভারে কিংবা দর্শনার্থীর ভিড়ে কলকাতার সঙ্গে ভালই টক্কর দেয় এই পুজো। কিন্তু তারাও এ বার বাধ্য হয়েছে বাহুল্য কমাতে। ফলে বিভিন্ন খাতে কমেছে খরচ। কোপ পড়েছে বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজনেও।
চলতি বছরে নবপল্লির থিম হল বঙ্গ-চিন সম্পর্ক। মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে দিল্লির বিনয়নগর স্কুলের অঙ্কন শিক্ষক ধীরেন মেটে। সভাপতি উৎপল ঘোষ বলেন, “ধীরেনবাবু এবং ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররাই মণ্ডপ নির্মাণের দায়িত্বে আছেন। কালীঘাটের পটচিত্রকলাকে তুলে ধরা হচ্ছে মণ্ডপের দেওয়ালে।”
|
নয়াদিল্লিতে চিত্তরঞ্জন পার্কের নবপল্লি পুজো সমিতির মণ্ডপ। —নিজস্ব চিত্র।
|
ভিতরে আলো-আবছায়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে ধীরেনবাবুরা ব্যবহার করেছেন কয়েকশো উল্টোনো ছাতা। কিন্তু বাজেট? সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমন চট্টোপাধ্যায় বললেন, “এর আগে প্রশাসন রাস্তায় গেট বানাতে বারণ করেছিল। ফলে বিজ্ঞাপন বাবদ আয় কমে গিয়েছে। এ বার যোগ হয়েছে আর্থিক মন্দা। যে ভাবে জিনিসের দাম বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুজোর বাজেট বাড়েনি।” এ বছর বাজেট বেহাল ওই এলাকারই মিলন সমিতির পুজোতেও। এবং তাদের মুখ্য উপদেষ্টা রতন মুখোপাধ্যায়ও বললেন, “বিজ্ঞাপন থেকে আয় কমে গিয়েছে। সেই অনুপাতে বাজেটও কমাতে হয়েছে।” এর আগে থিম পুজো করলেও এ বার সাধারণ মণ্ডপ বানিয়েই পুজো সারছে মিলন সমিতি। কলকাতা-মুম্বইয়ের শিল্পীদের বদলে জোর দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় শিল্পীদের উপরেই।
একই অবস্থা নিউ দিল্লি কালীবাড়ির পুজোতেও। এ বছর তাদের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী বর্ষ। অথচ পকেটে টানাটানি। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস ভৌমিক বললেন, “ডলারের চেয়ে টাকার দাম কমে যাওয়ায় অনেক বহুজাতিক সংস্থা বিজ্ঞাপন দেবে বলেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছে।” তবে আর এক যুগ্ম সম্পাদক স্বপন গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুজোর এক সপ্তাহ পরে সাধারণত যে বিচিত্রানুষ্ঠান হয়ে থাকে, তা এ বারও হবে। তাঁর কথায়, “১৯ থেকে ২২ অক্টোবর ওই অনুষ্ঠান হবে। আসার কথা রয়েছে শান, অভিজিৎ, মনোময়, কৌশিকীর মতো শিল্পীদের।” পটেলনগর পুজো সমিতির জাঁকজমক কিছুটা কম করার অন্য কারণ আছে। দু’বছর পরেই তাঁদের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। তাই এই বছরটায় একটু রয়েসয়ে। সহ-সভাপতি শেলি ভৌমিক বলেন, “খরচ কমালেও ভোগ বা আন্তরিকতার প্রশ্নে কার্পণ্য নেই। সুবর্ণজয়ন্তী পুজোর কথা মাথায় রেখে আগামী দু’বছর (৪৯তম ও ৫০তম) বড় মাপের পুজো করার পরিকল্পনা নিয়েছি।”
খরচের দিকটা মাথায় রেখেই চলতি পুজোয় প্রকৃতিকে রক্ষা করার বার্তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে নিবেদিতা এনক্লেভ পূজা সমিতি। পুজো কমিটির সচিব রঞ্জন করগুপ্ত বলেন, “গোটা পৃথিবীতেই সবুজায়ন যাতে বাড়ে, সেই আবেদন জানাতেই মণ্ডপটি পুরো সবুজ করা হয়েছে। ” প্রতিমা ও মণ্ডপ নির্মাণের খরচে টাকা খরচ করতে পিছপা না হলেও বিচিত্রানুষ্ঠানে কোপ পড়েছে বলে জানালেন রঞ্জনবাবু। |
|
|
|
|
|