|
|
|
|
পুজো দেখে যাও কলকাতা, বলছে মুম্বই
তীর্থ আচার্য • কলকাতা |
গানের দুনিয়া তাঁকে ঠোঁটকাটা বলেই চেনে। সেই চেনা মেজাজেই অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলছেন, “কলকাতা পুজোটাও ঠিকঠাক করতে পারে না। সারা বছর ‘থিম থিম’ করে মাথা খুঁড়ে মরে।” মুম্বইয়ের লোখণ্ডওয়ালা সর্বজনীন দুর্গাপুজোর প্রাণপুরুষ অভিজিৎই। পুজো তাঁর পাঁচতারা। “গোটা কলকাতাকে আমন্ত্রণ। এক বার এসে ডি এন নগরের দুর্গাপুজো দেখে যান।” বক্তা আন্ধেরি লিঙ্ক রোড সর্বজনীনের সর্বময় কর্তা কৃষ্ণেন্দু সেন। এটাও পাঁচতারা পুজো। যদিও অভিজিৎ ও কৃষ্ণেন্দু বলছেন, “ও সব তারা-ফারা বুঝি না!”
মাতৃমূর্তির সামনে বসবে পাক্কা পাঁচ কিলোর নিখাদ চাঁদির ঘট। দুর্গার নাকের বিশাল নথ, মরাঠি মহিলারা যেমন পরেন। দূর থেকেও ঝিকমিক করছে। হীরক-দ্যুতি! গলায় বিশাল হার। হিরের! দুল হিরের! টিকলি নিখুঁত কাটের হিরের। এটা জাভেরি বাজারের স্বর্ণশিল্পীদের পুজো। তাঁরাও বলছেন, “কলকাতাকে নিমন্ত্রণ।” “পুজো তো পওয়াইয়ে। ৭৫ ফুট উঁচু চামুণ্ডেশ্বরীর মন্দির, ১৫ ফুটের কষ্টিপাথরের নন্দী! নিখুঁত। এক কিলোমিটার এলাকা চন্দননগরের আলোয় ভাসবে। তিন দিন ১০ হাজার মানুষ ভোগ খাবেন। বাজেট সওয়া কোটিরও বেশি।” পওয়াই বেঙ্গলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর অন্যতম উদ্যোক্তা পিনাকী দত্ত এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন। এবং তিনিও আহ্বান জানিয়ে রাখলেন কলকাতাকে।
|
পওয়াই বেঙ্গলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের
পুজোয় মহীশূরের চামুণ্ডেশ্বরীর মন্দির। —নিজস্ব চিত্র।
|
“গত বছর আমাদের বাজেট ছিল প্রায় চার কোটি টাকা। এ বার একটু কমেছে। এমন পুজো কলকাতায় হয় না। আসুন না, দেখে যান।”বলছেন অসিত ঘোষ। বেঙ্গল ট্রাস্ট, ভাসি সর্বজনীনের সভাপতি। ভাসি সেক্টর ১০-এ এনএমএমসি ফুটবল মাঠে গড়ে উঠছে কামাখ্যা মন্দির। এখানেও তিন দিন ভোগের ব্যবস্থা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শিল্পী উদিত নারায়ণ, কুণাল গাঞ্জাওয়ালা, মহালক্ষ্মী আইয়ার-রা। অস্থায়ী প্রেক্ষাগৃহ পুরো অগ্নি নিরোধক। ঠান্ডা ঠান্ডা।
সবাই বলছেন, “এসে দেখে যাও কলকাতা।” কলকাতাকে কি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে মুম্বই? দুর্গাপুজো নিয়েও?
চার উদ্যোক্তার অবশ্য বক্তব্য, “শুধু এটাই বলতে চাইছি, কলকাতা পুজোটাও ভাল ভাবে করতে পারে না। যেমন চুনি-পিকের মতো ফুটবল বা সৌরভের মতো ক্রিকেটটাও এখন খেলতে পারে না। শুধু থিম-ভাবনা। আন্তরিকতা ও অভিজাত্যটাই উধাও।’
কেন তাঁরা বলছেন এমন কথা? কেমন পুজো হয় মুম্বইয়ে?
ধরা যাক, ডি এন নগর সর্বজনীন। এটা কৃষ্ণেন্দু সেনের পুজো। ভারতের এই একমাত্র পুজো যেখানে অমিতাভ বচ্চন সপরিবার অঞ্জলি দিতে আসেন। গত পাঁচ বছর এই পুজোর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। বাজেট? কৃষ্ণেন্দু একটু ইতস্তত করে বলছেন, “দেড় কোটি তো হবেই। ভোগ-এর দায়িত্বে সহারা স্টার হোটেল। রাজভোগ বেঙ্গল সুইটসের। পুজোর প্রধান স্পনসর সহারা।”
পুজো কেমন হবে? কৃষ্ণেন্দু বলছেন, “২২ ফুট উঁচু প্রতিমা! দামি বেনারসি প্রতিটি প্রতিমার অঙ্গে। মেদিনীপুর থেকে ২১ জন ঢাকি আসছেন, বেনারস হিন্দু ইউনির্ভাসিটি থেকে ১১ জন ব্রাহ্মণ। জানেন, আরাধ্যা হওয়ার আগে ঐশ্বর্যা এখানেই পুজো দিয়েছিলেন? এ বারও বীরাষ্টমীর দিন বেলা একটায় অমিতাভ বচ্চন সপরিবার আসবেন।”
মুইম্বয়ের আদি পুজো কলবাদেবী সর্বজনীন। জাভেরি বাজারের বাঙালি স্বর্ণশিল্পীদের এই পুজোর বয়স ৯৪। এশিয়ার বৃহত্তম সোনা ও হিরের বাজারের এই পুজোয় সপ্তমীতে রজনীগন্ধা, বীরাষ্টমীতে গোলাপ, নবমীতে জবা ও দশমীতে শিউলির মালা পরানো হয় দুর্গাকে। দশ অস্ত্র খাঁটি রুপোর। তার ভারে প্রতিমার হাত যাতে খুলে না-পড়ে, তার জন্য লোহার শলাকার ঠেকনা দিতে হয়!
বৃহন্মুম্বই পুরসভা ও পুলিশের বিচারে সেরা পুজোর শিরোপা পেয়েছে পওয়াইয়ের জল-বায়ু বিহারে পিনাকীদের পুজো। তিনি বলেছেন, “হিন্দি ছবির সেট যাঁরা বানান, তাঁরাই এ বার মণ্ডপ তৈরি করছেন। তত্ত্বাবধানে সুদীপ্ত লাহিড়ী। চন্দনগরের আলো তো আছেই। অন্তত দশ হাজার মানুষ ভোগ খাবেন। বাজেট কোটি ছাড়ালেও অসুবিধে নেই।” পঞ্চমীতে সেখানে আসছে শোভনসুন্দর বসুর আবৃত্তির ব্যান্ড ‘বৃষ্টি’। সন্ধেগুলোর অনুষ্ঠানের জন্য খরচ শুনলে সমীহ হবে। মুম্বই পারে বটে!
অভিজিতের পুজো সাজানোর দায়িত্বে এ বারও শিল্প নির্দেশক বিজন দাশগুপ্ত। মণ্ডপ সাজবে ঝাড়বাতি-প্রদীপ-ফানুস-লন্ঠনের আলোয়। প্রতিমা এ বারও ধাতব। পুরো পুজো প্রাঙ্গণে কাঠের প্যানেল। বিপুল বাজেট। যদিও অভিজিৎ বলছেন, “মায়ের পুজোয় আবার বাজেট কী? যা খরচা হয়, হবে। সেরা শিল্পীদের নিয়ে চার দিন সেরা অনুষ্ঠান। লাবড়া-বেগুনি-খিচুড়ি-চাটনি-পাঁপড়-মিষ্টি— দারুণ ভোগ-প্রসাদ। হাজার ১৫ মানুষ খাবেন! চাঁদা তো তুলি না। পুরো পুজোটাই স্পনসরশিপে। কলকাতার মতো থিম-ফিম নেই। দুর্গাই আমাদের সেরা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর।”
মুর্শিদাবাদ থেকে এ বার ৪১ জন ঢাকি আসছেন এখানে! বিজয়াও ব্র্যান্ডেড। পুরুষরা লোখণ্ডওয়ালা-ব্র্যান্ড পাঞ্জাবি পরবেন। মহিলারা ব্র্যান্ডেড শাড়ি। অভিজিৎ বলেই ফেললেন, “পুজোর সেরা ব্র্যান্ড লোখাণ্ডয়ালা। কলকাতাকে বলি, আসুন, দেখুন মায়ের পুজো কী ভাবে করতে হয়।”
রানি-কাজলের মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো, বিশ্বজিতের জুহু স্কিম সর্বজনীন, ঠাণে বঙ্গীয় পরিষদ-এর ৫১ বছরের ৫০ লাখি পুজো, বম্বে দুর্গাবাড়ি সমিতি-র ৮৪ বছরের পুজোগুলোও জাঁকজমকে কিছু কম নয়। সেগুলোর কথা আর না-ই বা বললাম।
কিন্তু কলকাতা, কিছু বলবে? |
|
|
|
|
|