|
|
|
|
নবমীতে মন্ডাই গ্রাম ভাসে বলির রক্তে
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
একদিনে কয়েক হাজার ছাগবলি। আর এটাই বিশেষত্ব রাজমহলের মন্ডাই গ্রামের মা পাগলি-দুর্গা মন্দিরের। বলি উৎসর্গ করতে ঝাড়খণ্ড, বিহার আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে নবমীর দিন রাজমহলের মণ্ডাইয়ে ভিড় করে আসেন ভক্তরা।
ব্রিটিশ আমলে লঙ্কার বিরাট হাট বসত সাহেবগঞ্জের রাজমহল ব্লকের এই ছোট্ট গ্রামে। জায়গাটির আসল নাম ছিল ‘মির্চা মন্ডি’। পরে লোক মুখে হয়ে যায় ‘মন্ডাই’। সাহেবগঞ্জ জেলার রাজমহল আর তিন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ছোট্ট গ্রাম মণ্ডাই। সব মিলিয়ে দেড়শো থেকে দু’শো পরিবারের বাস। গ্রামের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে মা পাগলি-দুর্গার মন্দিরে নাম ছড়িয়ে গিয়েছে ঝাড়খণ্ড এবং আশপাশের রাজ্যেও। তার অন্যতম কারণ নবমীর এই ছাগবলি।
মন্ডাইয়ের বাসিন্দাদের দাবি, জাগ্রত পাগলি-দুর্গা মন্দিরে মানত করলে তার ফল পাওয়া যায়। আর সেই বিশ্বাস থেকেই নবমীর দিন পাঁঠা উৎসর্গ করতে ছুটে আসেন মানুষ। তবে অনেকে আবার শুধুমাত্র রেওয়াজ হিসেবেও প্রতি বছর নবমীতে এখানে পাঁঠা বলি দিতে আসেন। আর সেই বলি দেখতে প্রতি বছরই মানুষের ঢল নামে। গ্রামের মানুষ জানিয়েছেন, দু’শো বছর আগে প্লেগে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছিল। প্রাণভয়ে মানুষ যখন গ্রাম, ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন, তখন গ্রামের এক ব্রাহ্মণ মহিলা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্ডাইয়ে এই পুজোর শুরু করেন। ঘটনাচক্রে, তারপরে ওই গ্রামে আর প্লেগ ছড়ায়নি। পরবর্তীকালে ওই ব্রাহ্মণের উত্তর পুরুষ জনৈক চিরঞ্জীব ঠাকুর ও রাজমহলের জমিদার পরিবারের উত্তরপুরুষ, রতন সিংহ নবমীর বলির প্রচলন করেন।
মন্দিরের পুরোহিত স্বপন অবস্থি জানান, নবমীর দুপুর থেকে শুরু হয় বলি। আড়াই থেকে তিন হাজার পাঁঠা বলি হয়। গ্রামের মানুষের দাবি, সংখ্যাটা আরও বেশি। সাত থেকে দশ জন ভক্ত থাকেন বলি দেওয়ার জন্য। নবমীর রাত পার হয়ে দশমী পর্যন্ত গড়িয়ে যায় বলি। রক্তে লাল হয়ে ওঠে মন্দিরের চাতাল। বর্তমান পরিস্থিতিতে বলি বন্ধের কোনও পরিকল্পনা? অমঙ্গলের আশঙ্কায় কেঁপে ওঠেন স্থানীয় মানুষ, যাই হোক, বন্ধ করা যাবে না বলি। ঐতিহ্য বলে কথা! |
|
|
|
|
|