দলে কোণঠাসা মুন্নাভাইয়ের হাত ধরে বন্দর এলাকার হাতছাড়া শ্রমিক সংগঠন পুনর্দখল করল তৃণমূল।
মাস পাঁচেক আগে কলকাতা বন্দরে টিটি ঘাটের প্রায় আড়াইশো অসংগঠিত শ্রমিককে নিয়ে তৃণমূল সংগঠন করেছিল। ওই শ্রমিকরা মূলত বন্দর এলাকায় জাহাজ থেকে পণ্যসামগ্রী ডিঙি নৌকায় করে ঘাটে নিয়ে যান। তার পর তা লরিতে তোলা হয়। দেশি-বিদেশি জাহাজ বন্দর এলাকায় নোঙর করে বলে ওই শ্রমিকরা কাজ পান। তবে তাঁদের স্থায়ী কাজ নেই। বন্দর এলাকায় সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্য ওই অস্থায়ী ও অসংগঠিত শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড-সহ নানা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংগঠন গড়ে তৃণমূল। কিন্তু তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে সংগঠন ছাড়েন বহু শ্রমিক।
মহম্মদ ইকবাল |
তৃণমূল থেকে ছেড়ে বেরনো শ্রমিকদের নিয়ে সংগঠন গড়ে বিজেপি। ফলে টিটি ঘাটের শ্রমিক সংগঠন তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। দলের রাজ্য নেতাদের নির্দেশে বন্দর এলাকার তৃণমূল নেতারা কয়েক বার সংগঠন-ছাড়া শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু ওই শ্রমিকদের তৃণমূলে ফেরাতে রাজি করাতে পারেননি। ফলে স্থানীয় নেতাদের উপর চাপ বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত ওই শ্রমিকদের তৃণমূলে ফেরাতে সমর্থ হন গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে পুলিশকর্মী খুনে অভিযুক্ত স্থানীয় কাউন্সিলর মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না।
বন্দর এলাকার এক তৃণমূল নেতা বলেন, “ওই সংগঠনের অধিকাংশ শ্রমিকই ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। মুন্নাভাই ওই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর। আমরা তাঁকে বিষয়টি জানাই। তিনি ওই শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরই ওই শ্রমিকরা তৃণমূলের ফিরতে রাজি হন। দিন তিনেক আগে আমরা সংগঠনটি পুনর্দখল করি।” বন্দর এলাকার শ্রমিক সংগঠনের নেতা সিরাজুল (বাবলু) করিম বলেন, “মুন্নাভাইকে ওই সংগঠনের সভাপতি করা হয়েছে। ওই সংগঠন এখন থেকে উনিই দেখভাল করবেন। শ্রমিকদের মধ্যে আর কোনও অসন্তোষ নেই।”
গত ফেব্রুয়ারিতে হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে তাপস চৌধুরী নামে এক পুলিশকর্মী দুষ্কতীর গুলিতে নিহত হন। ওই ঘটনায় ১৫ নম্বর বরোর তৎকালীন চেয়ারম্যান মুন্নাকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এখন মুন্না জামিনে মুক্ত। বন্দরের বিধায়ক তথা নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের ঘনিষ্ঠ ছিলেন মুন্না। কিন্তু ওই ঘটনার পর তৃণমূল নেতারা তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন।
মুন্নার বরো চেয়ারম্যানের পদও গিয়েছে। ২০১০ সাল থেকে রমজান মাসে গার্ডেনরিচ এলাকায় ইফতার পার্টির আয়োজন করেন মুন্না। প্রতি বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই পার্টিতে গিয়ে মুন্নার প্রশংসা করতেন। কিন্তু এ বছর তিনি ওই পার্টিতে গেলেও মুন্নাকে মঞ্চে ডাকেননি এবং বক্তৃতা করেননি। কিন্তু বন্দরের হাতছাড়া শ্রমিক সংগঠন উদ্ধার করতে তৃণমূলকে মুন্নারই শরণ নিতে হয়েছে! মুন্নার কথায়, “দলের কয়েক জন নেতা আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। এলাকার বাসিন্দা ওই শ্রমিকদের তৃণমূলে ফেরার অনুরোধ করি। ওঁরা তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন।” |