টাকা দিলেই ভিআইপি পাশ,
সহজ দুর্গা-দর্শন

ক্ষিণ কলকাতার এক নামী পুজোর পাশ জোগাড়ের জন্য গত বছর বড় সাহেবের ঘরে টানা চার দিন হত্যে দিয়ে থাকতে হয়েছিল বাদলবাবুকে। অনেক কষ্টে একটা পাশ নিয়ে অষ্টমীর দিন সন্ধ্যাবেলা মেয়ে-বউকে নিয়ে ঠাকুর দেখেছিলেন তিনি। অনির্বাণের অবশ্য কপাল এতটা ভাল ছিল না। অনেক চেয়ে-চিন্তে উত্তর কলকাতার দু’টো পুজোর পাশ পেয়েছিল সে। বিয়ের পর প্রথম বার বউকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে গিয়ে ভিড়ে রীতিমতো নাজেহাল হয়েছিল বছর ত্রিশের এই তরুণ। পুজোর সময় বারাসত থেকে গড়িয়া, সব পরিবারের কর্তাকেই জামা-জুতো কেনার পাশাপাশি পাশ জোগাড়ের দৌড়ে নামতে হয়। এ বার অবশ্য সেই ছবিটা বদলাতে চলেছে। পুজোর লাইনে ভিড় এড়াতে এ বার টাকা বের করলেই হবে।
ব্যাপারটা আসলে কী?
শহরের বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা জানালেন, একটি সংস্থা শহরের ২০টি পুজোকে বেছে নিয়ে পাশ বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্থার ওয়েবসাইটে গেলেই মিলবে তালিকা। পুজো প্রতি ৮৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে পাশ। আর ২০টি পুজোর প্যাকেজ পাশ নিলে খরচ ১৭০০ টাকা। একটি পাশে ৪ জন মণ্ডপে ঢুকতে পারবেন। সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দির, সুরুচি সঙ্ঘ, ৯৫ পল্লী, ত্রিধারা সম্মিলনী, উত্তরের নলিন সরকার স্ট্রিট, নবীনপল্লী, কাশী বোস লেন, তেলেঙ্গাবাগানের মতো পুজোগুলির পাশ বিক্রি করছেন তাঁরা। ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে ফোন করেও পাশ কেনা যাবে। সংস্থা জানিয়েছে, ষষ্ঠীর মধ্যে ক্রেতাদের কাছে পাশ পৌঁছে দেওয়া হবে।
উত্তর কলকাতার একটি পুজো কমিটির কর্তা বলছেন, “পাশ বিক্রির টাকার মোটামুটি ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পাবে পুজো কমিটি। তার একটি অংশ পুজোর সঙ্গে যুক্ত আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া লোকজনকে দেওয়া হবে।”
কিন্তু পুজোর ভিআইপি পাশ সাধারণত স্পনসর এবং পরিচিত লোকেদের দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে এই ভাবে ভিআইপি পাস বিক্রি করাটা কতটা নৈতিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। যদিও পাশ বিক্রয়কারী সংস্থার কর্তা কৌশিক দত্তের বক্তব্য, এখন অনেকেই ফাঁকায় ঠাকুর দেখার জন্য টাকা খরচ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভিআইপি পাশ বিক্রি করায় অনৈতিক কিছু দেখছেন না তিনি।
লেক টেম্পল রোডের শিবমন্দির পুজো কমিটির কর্তা পার্থ ঘোষেরও মত, “পুজোর বাজারের যা অবস্থা, তাতে এই ধরনের উদ্যোগ থেকে পুজো কমিটিগুলি আর্থিক লাভের মুখ দেখবে। লাভ হবে ঢাকি কিংবা মণ্ডপে কাজ করা মিস্ত্রি-জোগাড়েদেরও।” প্রশ্ন উঠছে, ভিআইপি লাইনে অতিরিক্ত ভিড় নিয়েও। তেলেঙ্গাবাগানের পুজোকর্তা রানা দাস বলছেন, “হিসেব করেই পাশ দেওয়া হয়েছে।” সন্ধ্যার ভিআইপি লাইনে ভিড় এড়াতেই বিক্রি হওয়া পাশের ক্ষেত্রে কিছু বদল এনেছে নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘ। সুরুচি-র কর্তা ও আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানান, বিক্রি হওয়া পাশ দিয়ে সকাল ৬টা থেকে ৩টে-র মধ্যে সুরুচির ঠাকুর দেখতে হবে।
তবু একটা কিন্তু কিন্তু রয়ে যাচ্ছে পুজো কমিটিগুলির মধ্যে। দক্ষিণ কলকাতার এক পুজো কমিটির কর্তা বলছেন, “উদ্যোগটা ভাল। কিন্তু কতটা বিক্রি হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।” যদিও এই সংশয় মানতে নারাজ কৌশিকবাবু। ৬ অক্টোবর ছিল অনলাইনে টিকিট কেনার শেষ দিন। তিনি জানালেন, রবিবার অন্তত হাজার দুয়েক মানুষ পাশ কিনেছেন। আরও শ’পাঁচেক পাশ বিক্রি হতে পারে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.