আসানসোলে হোটেল
নতুন জেলা হলে কাটবে মন্দা, আশায় ব্যবসায়ীরা
পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ায় ব্যস্ততা চারিদিকে। দম ফেলার ফুরসত নেই ব্যবসায়ীদের। আসানসোলে হোটেল ব্যবসায় মন্দার চিত্র অবশ্য কাটল না এ বছরেও।
এক যুগ আগে শহরে হোটেল ব্যবসায় আশার আলো জাগিয়েছিল ইস্কোর আধুনিকীকরণ প্রকল্প। প্রকল্পের কাজে লোকজনের আনাগোনা বেড়েছিল শহরে। থাকার ভাল জায়গার চাহিদা মেটাতে গড়ে উঠেছিল বেশ কয়েকটি আধুনিক হোটেল। কিন্তু সেই ব্যবসায় এখন ভাটার টান আসানসোলে।
ইস্কোর কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছনোই হোটেল ব্যবসায় মন্দার অন্যতম কারণ বলে হোটেল মালিকদের দাবি। তবে অদূর ভবিষ্যতে আসানসোল-দুর্গাপুর পৃথক জেলা চালু হয়ে গেলে বা সরকারের উদ্যোগে আসানসোল শহর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠলে সুদিন ফিরবে, এই আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন তাঁরা।
ছোট-বড় মিলিয়ে আসানসোলে এখন হোটেলের সংখ্যা ৬৫। এর মধ্যে ২০০০ সাল বা তার পরপর গড়ে উঠেছে ১৫টি। সেই সব হোটেলের মালিকেরা জানান, ইস্কোর কাজের জন্য যে ধরনের লোকজন তখন শহরে যাওয়া-আসা শুরু করেন, তাঁরা শহরের ঘিঞ্জি বাজার এলাকার সাধারণ হোটেলগুলিতে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন না। স্থান সঙ্কুলানও হত না অনেক সময়ে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হোটেল ব্যবসায় নামেন অনেকে। নতুন ঝকঝকে হোটেলগুলিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর-সহ নানা সুবিধা মেলায় সেখানে ভিড়ও হতে শুরু করে।
২০০০ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে বার্নপুর রোডে পাশাপাশি তিনটি হোটেল তৈরি হয়। এ ছাড়াও শহর ও লাগোয়া এলাকায় চালু হয় কয়েকটি নতুন হোটেল। সেই সব হোটেলের মালিক পাপ্পু ঢল, শচীন রায়, সুব্রত দত্তেরা জানান, তখন বেশির ভাগ দিনই তাঁদের হোটেলের সব ঘর ভর্তি থাকত। কিন্তু বছর দুয়েক আগে থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। এখন সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতেও অর্ধেক ঘর ফাঁকা থাকে। সপ্তাহান্তে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সুব্রতবাবু বলেন, “যাঁদের ব্যাঙ্কোয়েট হল রয়েছে, নানা অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দিয়ে চালাচ্ছে তারা।” হোটেল মালিকদের সংগঠন সূত্র জানা যায়, বছর পাঁচেক আগেও ২৫-৩০ ঘরের হোটেলগুলি বছরে গড়ে সাড়ে চার লক্ষ টাকা করে আয় করত। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে গড়ে দেড় লক্ষ টাকায়।
কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল? ১০-১২ বছর আগে ব্যবসা শুরু করা হোটেল মালিকদের কয়েক জন জানান, তাঁদের হিসেব ছিল, যে টাকা বিনিয়োগ করছেন, ইস্কোর আধুনিকীকরণ চলার সময়েই তা বাজার থেকে উঠে আসবে। আসানসোল মহকুমায় প্রস্তাবিত কয়েকটি শিল্প তার মধ্যে কাজ শুরু করে দিলে ইস্কোর কাজ শেষের পরেও ব্যবসা চালাতে অসুবিধা হবে না বলে মনে করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বাস্তবে, শুরুর কয়েক বছরে মুনাফা হলেও প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলি নানা কারণে রূপায়িত না হওয়ায় সমস্যা শুরু হয়েছে, দাবি তাঁদের।
ব্যবসায় ভাটা পড়ার পিছনে আরও কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে বলে তাঁদের মত। প্রথমত, বাস ও রেল পরিষেবা আগের তুলনায় উন্নত হওয়ায় এখন আসানসোল থেকে কলকাতা যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, নানা সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা প্রতিনিধিদের ভ্রমণ-ভাতা কমানোয় তাঁরা এক দিনেই কাজ সেরে ফিরে যাচ্ছেন। তৃতীয়ত, আগে বিভিন্ন পানীয় ও ওষুধ সংস্থা প্রতিনিধি পাঠিয়ে শহরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। এখন সংস্থাগুলি ক্যুরিয়রের মাধ্যমে কাজ সারছে।
এই পরিস্থিতিতেও শহরে পাঁচটি নতুন হোটেল তৈরি হয়েছে বলে জানান হোটেল মালিক সংগঠনের সভাপতি পাপ্পুবাবু। ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকটি কারণে তাঁরা ব্যবসায় সুদিন ফেরার আশা করছেন। প্রথমত, পৃথক জেলা চালু হলে শহরের চালচিত্রই পাল্টে যাবে। দ্বিতীয়ত, সদ্য চালু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শহরে বাইরের লোকজনের আসা-যাওয়া বাড়বে। তৃতীয়ত, অন্ডালে বিমাননগরী চালু হয়ে গেলে দুর্গাপুর ও আসানসোলদুই শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নত হবে, লাভ হবে হোটেল ব্যবসায়। চতুর্থত, আসানসোল শহর ও তার আশপাশে কয়েক বছরের মধ্যে নানা রকম হাব ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রসারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন হোটেল মালিকেরা।
সংগঠনের সম্পাদক সুব্রতবাবু জানান, শহরের আশপাশে মুক্তাইচণ্ডী, কল্যাণেশ্বরী মন্দির, মাইথন ও পাঞ্চেত বাঁধ, নেহরু পার্ক, ঘাঘরবুড়ি মন্দির, মহকুমা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা জৈন মন্দিরের নানা নিদর্শন পর্যটক টানতে পারে। তাঁরা পর্যটন দফতরকে ইসিএলের সহায়তায় খনিগর্ভে পর্যটনের ব্যবস্থার আবেদনও জানিয়েছেন। আসানসোলকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা।
ব্যবসা খারাপ চললেও তাই এখনই হাত গোটাতে নারাজ আসানসোলের হোটেল ব্যবসায়ীরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.