নিজস্ব সংবাদদাতা • সিউড়ি |
দুর্গাপুজোকে ঘিরে বাঙালিদের নানা পার্বণ শুরু হয় বীরভূমেও। আদিকাল থেকে নলহাটি থানার কুরুমগ্রাম, মেহেগ্রাম, বানিওড়, দুবরাজপুরের হেতমপুর প্রভৃতি গ্রামে দশমীর বিকেলে শুরু হয় গরু দৌড় উত্সব। ওই সব গ্রামে প্রান্তিক, মাঝারি, ক্ষুদ্র চাষিরা তাদের গরু (মূলত বলদ) নিয়ে জড়ো হন গ্রামের শেষ মাথায়। তারপর সকলের সমবেত উল্লাসের শব্দে ছুটতে শুরু করে গরু। কোনও গরুই কিন্তু পথ হারায় না। সবাই নিজের নিজের গোয়ালে গিয়ে পৌঁছয়।
অনেকের মতে দশমীর রাতে প্রতিমা বিসর্জনের রাস্তাকে ‘শুদ্ধ’ করতে এর আয়োজন করা হয়েছিল। এখনও তা বহাল রয়েছে। তবে আগের মতো উত্সবের মেজাজে নেই বলে মনে করেন কুরুমগ্রামের প্রৌঢ়া শিবানী সিংহ, মধ্যবয়সী সলিল চট্টোপাধ্যায়, মেহেগ্রামের সিপিএম নেতা বৃদ্ধ অজয় সিংহ প্রমুখ। তাঁরা জানালেন, “অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারের সামান্য জমি থাকলেও অনেকের বাড়িতেই এখন আর গরু রাখার চল নেই। ট্রাক্টর বা প্রান্তিক চাষিদের লাঙল ভাড়া নিয়ে জমি চাষ হয়।” যদিও কৃষি যন্ত্রপাতি আজও রয়ে গিয়েছে অনেকের বাড়িতে। দশমীর সকালে যন্ত্রপাতি ধুয়েমুছে আলপনা দেওয়া হয়। আবার একাদশীর ভোরে সিউড়ির বিভিন্ন পুকুরে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার উত্সবও চালু আছে। ওই দিন বিকেলে নলহাটি থানার গোয়ালা প্রধান বাহাদুরপুর গ্রামের দু’টি প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের শেষ প্রান্তের একটি মাঠে। সেখানে কয়েক ঘণ্টার মেলা বসে। এলাকার চার পাঁচটি গ্রামের আদিবাসীরা প্রতিমা দর্শন করতে আসেন। একসঙ্গে নাচগান হয়। একই দিন বিকেলে লাঠির মেলা হয় দুবরাজপুরের যশপুর গ্রামে। হাজির হন স্থানীয় ৮-১০টি গ্রামের মানুষ। বেশিরভাগই কিন্তু মুসলিম। কয়েক ঘণ্টার মেলায় ৪০ থেকে ১,৫০০ টাকায় এক একটি লাঠি বিক্রি হয়। স্থানীয় লাঠি বিক্রেতা আব্বাস হুসেন, হেলাল মল্লিকদের বক্তব্য, “জেলার নানা প্রান্ত ছাড়াও অন্য জেলা থেকেও শৌখিন খদ্দের আসেন। লাভ তেমন কিছু হয় না। কিন্তু আনন্দটাই আসল।” |