আজ থেকে প্রায় ১৩ বছর আগের এক রাতে সিউড়ি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে এক চিকিত্সাধীন যুবককে গুলি করে খুন করেছিল টাইগার। সেই টাইগার ওরফে আফরোজ খানই এ বার সিউড়ির সংশোধানাগারের পুজোর অন্যতম হোতা। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত টাইগার-সহ ওই সংশোধনাগারের অন্য বন্দিরাও জাতিধর্মের ভেদাভেদ ভুলে মেতে উঠেছেন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উত্সব দুর্গা পুজোয়। ওই সংশোধনাগারের প্রায় ৩০০ বন্দির সংখ্যাগরিষ্ঠই মুসলিম হলেও তাঁরাই সেখানকার দুর্গোত্সবের মুখ্য পরিচালক। তাই সর্বজনীন পুজো উদ্যোক্তাদের মতোই এখন দম ফেলার ফুরসত নেই মোস্তাক হোসেন, মোহন সোরেন ও ভৈরব চক্রবর্র্তীদের।
বন্দিদের আবেদনে রাজ্যের কয়েকটি সংশোধানাগারের ভিতরে দুর্গাপুজো চালু হয়েছে। সিউড়িতে তা গত চার বছর ধরেই চলছে। সংশোধনাগারের ওয়েলফেয়ার অফিসার শুভদীপ মুখোপাধ্যায় বলছেন, “বন্দিরা দুর্গোত্সবের চার দিন কবে কী খাবেন, তার মেনু ঠিক হয়ে গিয়েছে। টাইগার ছাড়াও সংশোধনাগারের তিন পঞ্চায়েত সদস্য মোস্তাক হোসেন, মোহন সোরেন ও ভৈরব চক্রবর্তীরাই মূল ব্যাপারটা দেখছেন।” প্রত্যেকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী। পুজোর মেনুতে থাকছে খিচুড়ি, পাঁচমেশালি তরকারি, ডিমের কারি, খাসির মাংস, রুইমাছের কালিয়া, মাছের মাথা দিয়ে বাঁধাকপির ঘণ্ট, বোঁদে, রসগোল্লা, পায়েসের মতো জিভে জল আনা সব খাবার। পুজো উপলক্ষে মহিলা বন্দিরা ফলের ডালি সাজান, ফুলের মালা তৈরি করেন। বহু মহিলা বন্দিই প্রতিমা বিসর্জনের বিকেলে সিঁদুর খেলেন। এ বারেও সাত জন সিঁদুর খেলবেন বলে জানিয়েছেন সংশোধনাগারের সুপার সরোজকুমার ঘোষ। একই সঙ্গে সপ্তমীর দিন বিকেলে বাউল গানের অনুষ্ঠান করবেন কয়েদিরাই। জোরকদমে মহড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। বছরের পর বছর পরিবারের থেকে বহু দূরে চার দেওয়ালেই ওঁদের দিন কাটে। কিন্তু পুজোর সময় ওঁদের মনও কেমন করে ওঠে। যন্ত্রণার মেঘকে দূরে সরিয়ে সকলেই উত্সবে মাতেন। এক আবাসিকের কথায়, “পুজোর সময় মনেই হয় না, আমরা পরিবার-পরিজনদের থেকে দূরে আছি। বরং মনে হয়, জেলের মধ্যেই আমাদের একটা পরিবার আছে। উত্সবের দিনগুলো এই পরিবারের সঙ্গেই কাটাই।” |