দয়াল সেনগুপ্ত • দুবরাজপুর |
বহু দূর থেকে ভেসে আসা ‘তোপধ্বনি’ এখন আর শুনতে পাওয়া যায় না। সঠিক সময় নির্ধারণের জন্য ‘জল ঘড়িটাও’ আর নেই। তাই অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণ বুঝতে সাহায্য নেওয়া হয় অন্তত গোটা পাঁচেক ঘড়ির। তবুও দুবরাজপুরের চামুণ্ডা মন্দিরে সন্ধিপুজোর বলি হওয়ার ঢাক শোনার পরেই এলাকার সমস্ত দুর্গা পুজোয় বলি হয়ে থাকে। বহু প্রাচীন এই প্রথার এখনও কোনও বদল নেই।
দুবরাজপুরের চার নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত এই মন্দিরে অবশ্য কোনও প্রতিমা হয় না। দেড় ইঞ্চি চওড়া ও দু ইঞ্চি লম্বা একটি অষ্ট ধাতুর দুর্গা মূর্তি এবং নবপত্রিকা রেখেই হয় দেবীর পুজো। কবিরাজ পরিবারের দুই শরিকের দায়িত্বেই এখন চামুণ্ডা পুজো। শরিকদের মধ্যে বড় অনন্তদেব কবিরাজ মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবার ও গণেশলাল কবিরাজের পরিবার পালা করে পুজো করে আসছেন। বর্তমানে দুই পরিবারের মধ্যে প্রবীণ গণেশবাবু বলেন, “কবে থেকে এই পুজো চলে হয়ে আসছে, তা সঠিক ভাবে বলতে পারবো না। |
তবে বাপ-ঠাকুরদার কাছ থেকে শোনা এই পুজো অন্তত তিনশো বছরের প্রাচীন।” সন্ধি পুজোকে ঘিরে এই রেওয়াজ প্রসঙ্গে, গণেশবাবু বলেন, “বহু আগে জনসংখ্যা এত কম ছিল এবং সন্ধি পুজোর সময় চারদিক এত নিশ্তব্ধ থাকতো। শুনেছি বর্ধমানের পানাগড়ের কাছে থাকা গড়জঙ্গলের দুর্গা পুজোর তোপধ্বনি শুনতে পেতেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। সঙ্গে থাকত জল ঘড়ি। এলাকার প্রাচীন পুজো হওয়ায় সন্ধিক্ষণ নির্ধারণের জন্য এই এলাকার বাকিরা আমাদের পুজোর উপরে নির্ভর করতেন। সেটাই সম্ভবত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” বর্তমানে দুবরাজপুরে বাড়ি ও সর্বজনীন পুজোর সংখ্যা কমবেশি ৪০টি। কিন্তু কেউ প্রথা অমান্য করেননি। ওই সময় প্রচুর মানুষ ভিড় জমান মন্দিরের সামনে। শুধু তাই নয়, নিয়ম মেনে চার মাস ধরে চলে পুজোর প্রস্তুতি। ব্যতিক্রম বলতে দেবীকে বলি হওয়া বাসি মাংস এবং পান্তাভাতের ভোগ দেওয়া হয় দশমীর সকালে। |