|
|
|
|
দু’শো বছরের পুরনো দেবী ঠাকুরানির পুজো |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
আধুনিকতার অহংকার নেই। প্রত্যন্ত গাঁয়ে চাষির ঘর যেমনটা হয়ে থাকে পরম্পরা মেনে ময়নাগুড়ির আমগুড়ি বাজার সংলগ্ন বসুনিয়া পরিবারে সে ভাবেই সেজে উঠেছে দেবী ঠাকুরানির মণ্ডপ। বৃহস্পতিবার দেবী পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এখানেই শুরু হবে ডুয়ার্সের প্রায় দু’শো বছরের প্রাচীন পুজো। রাজবংশী সমাজে ‘উমা’ পরিচিত দেবী। ঠাকুরানি নামে মণ্ডপকে বলা হয় থান। বসুনিয়া পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৮১০ সালে ওই পুজোর সূচনার সময় ‘যাত্রা পুজো’ বলা হত। পরে তা পাল্টে হয়েছে দেবী ঠাকুরানির আরাধনা। |
|
বর্তমানে অবশ্য রাজবংশী সমাজের আধুনিক প্রজন্ম এ পুজোকে, দুর্গা পুজো বলেই ভাবতে অভ্যস্ত হয়েছেন। এখানে দেবী রক্তিম বর্ণের। গোড়ালির উপরে কাপড়। দেবীর চোখ, নাক ও মুখের গড়নে মঙ্গোলীয় জনজাতির ছায়া স্পষ্ট। তাঁতের শাড়ি, হাসি মুখ, সাধারণ অলঙ্কার, রাজবংশী অধ্যুষিত গ্রামের আর দশ জন মেয়ের মত দেবীর আদল। পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম পেশায় শিক্ষক সুনীল বসুনীয়ার দাবি, ডুয়ার্সের এটাই প্রথম দুর্গা পুজো। তিনি জানান, “পূর্বপুরুষ জোতদাক ধনবর বসুনিয়া কোচবিহার থেকে বিতাড়িত হয়ে তত্কালীন চাপগড় পরগনার আমগুড়ি গ্রামে স্থায়ী বসতি স্থাপনের পরে পুজোর সূচনা করেন। এ জন্য কোচবিহার রাজবাড়ির দেবী প্রতিমার সঙ্গে এখানকার প্রতিমার অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।” কেন পুজোর আয়োজন করেন তিনি? গবেষকদের একাংশ মনে করেন বিতাড়িত হওয়ার পরে কৌলীন্য ধরে রাখার জন্য সম্ভবত ধনবর বসুনিয়া পুজোর আয়োজন করেন। আদিতে পুজোর আড়ম্বর নেহাত কম ছিল না। বসুনিয়া পরিবারের পুরনো নথি থেকে জানা গিয়েছে, ওই সময় রংপুর থেকেও পুজো দেখতে আসতেন বাসিন্দারা। সময়ের সঙ্গে জৌলুস কমেছে। তবে পরম্পরা রক্ষার চেষ্টা আজও স্পষ্ট দেবী প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরির কৌশলে। সুনীলবাবু বলেন, “দেবী উমা ঘরের মেয়ে। প্রতিমা রাজবংশী মেয়েদের আদলে তৈরি করা হয়। এখন পুজো দেখতে রংপুর থেকে কেউ আসে না ঠিকই, তবে শিকড়ের সন্ধানে ষষ্ঠী থেকে বহু মানুষ ভিড় করেন।” এ বারও উদ্যোক্তারা আড্ডার আয়োজন করেছেন। আড্ডায় আসবেন গবেষক থেকে গায়ক অনেকেই। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষক দীপক রায় বলেন, “বিরাট ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে বসুনিয়া বাড়ির পুজোর সঙ্গে।” |
ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক। |
|
|
|
|
|