রাস্তা দিয়ে গাড়ি গেলেই পথ আটকাচ্ছে এক দল মেয়ে-বউ। বসিরহাটের মৈত্রবাগান, সন্দেশখালির ন্যাজাট, বাদুড়িয়ার আরশুল্লা গ্রামে দেথা যাবে এমনই ছবি। হাতে বিল বই নিয়ে সবার কাছ থেকে পুজোর চাঁদা তুলছেন তাঁরা।
সংসারের রোজনামচায় এক ঘেয়ে জীবনে এটুকুই আনন্দ পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন ওঁরা। পাড়ায় পুজো করছেন নিজেদের উদ্যোগে।
বসিরহাটের ভবানীপুর মৈত্রবাগান কলাবাড়ি এলাকার পুজো পরিচালনা করেন অভিযাত্রী সঙ্ঘের মহিলারা। কয়েক বছর আগে নাতনিদের আবদার রাখতে দুর্গার মূর্তি তৈরি করেছিলেন ঠাকুমা অঞ্জুরানি মণ্ডল। পুজোর সেই শুরু। অঞ্জুরানি এখন আর প্রতিমা তৈরি করতে পারেন না, তবে উৎসাহ দিতে নাতনিদের সঙ্গে চাঁদা তুলতে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্ঘের পক্ষে সাথী মণ্ডল, বিপাশা হালদার, শ্রুতি চন্দ্র জানান, ঠাকুমার তৈরি প্রতিমা পুজো করার জন্য অভিভাবকেরা সম্মতি দিলেই পুজো শুরু হয়ে যায়। একেবারে অনেকটা টাকা দিতে অসুবিধা হবে ভেবে মাসে দশ টাকা করে জমান তাঁরা। তাই দিয়েই উৎসব হয়। পুজোর ক’টা দিন ছবি আঁকা, শঙ্খ বাজানো, মিউজিক্যাল চেয়ার থেকে ধুনুচি নাচ সবেরই প্রতিযোগিতা চলে। |
পথে নেমে এ ভাবেই চাঁদা তুলছেন মহিলারা। ছবি: নির্মল বসু। |
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা সন্দেশখালির ন্যাজাটে অবশ্য অঞ্জলি দিতে যাওয়া ছাড়া পুজোর দিনগুলিতে বাকি সময়টা ঘরেই কাটাতেন মেয়েরা। পুরুষরা অবশ্য পুজোর সময় বাইরে বাইরে ঘুরতেন। মন খারাপ হয়ে যেত মেয়েদের। তাই ঠিক করলেন, নিজেরাই পুজো করবেন। কেউ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, কেউ পড়ান, কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করেন। রয়েছেন গৃহবধূরাও। সবাই মিলে গড়ে তুললেন আনন্দময়ী মহিলা সমিতি। ন্যাজাটের বটতলায় শুরু হল পুজো। প্রথম দিকে অবশ্য বাড়ির পুরুষদের আপত্তি ছিল। কিন্তু শেষে জয় হল নারীশক্তিরইা। তাই সকাল-দুপুর রান্না, সংসারের কাজ করে বিকেলে চাঁদা তুলতে আর পুজোর জোগাড় করতে নেমে পড়েছেন তাঁরা।
যদিও আর সব কিছু মতোই শুরুর পথটা মসৃণ ছিল না। ন্যাজাটের ওই পুজোর মেয়েরা জানালেন, চাঁদা তুলতে গিয়ে প্রথমে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু পরে বিষয়টা রপ্ত করে ফেলেন তাঁরা। বাড়ির মা, দিদি, কাকিমাকে চাঁদা তুলতে যেতে দেখে খুশি এলাকার শিশুরাও। অবশ্য পুজো করেই সন্তুষ্ট থাকেননি এঁরা। প্রকাশ করেছেন মেয়েদের দেওয়াল পত্রিকাও। সমিতির তরফে শীলা বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্দাকিনী মাহাতো বলেন, “আমরা স্বপ্ন দেখি। অন্যদেরও স্বপ্ন দেখাই।”
বাদুড়িয়ার আরশুল্লা গ্রামের নূতন রাস্তা পুজো কমিটি ও মহিলা সমিতির পুজো এ বার পড়ল ৪৪ বছরে। এক সময়ে পুরুষরা দায়িত্বে ছিলেন। এখন মেয়েরা সেই দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পুজো কমিটির পক্ষে নমিতা হালদার, মিঠু দে বলেন, “আগে ছেলেরা ভাবত, মেয়েরা শুধু ঘরের কাজই করতে পারে। ধারণাটা যে ভুল, তা আমরা প্রমাণ করেছি।” |