জামাই বিভূতিভূষণকে
নিয়ে স্মৃতিমেদুর পানিতর

কধার দিয়ে চলে গিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। তারই মাঝে কাশ ফুলের সারি। ইতিউতি কোথাও ফুটেছে শিউলি। তার সুবাস বেড়ার বাধা ডিঙিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ওপার বাংলার গ্রামেও। ইছামতী নদীর ধারে এ ভাবেই নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে ছোট্ট গ্রাম পানিতর। সুন্দর গ্রামটি অবশ্য আর পাঁচটা সীমান্ত গ্রামের মতো নয়। তার একটা ইতিহাস রয়েছে, বা বলা ভাল একটা মধুর স্মৃতি। যা নিয়ে তার গর্বের শেষ নেই। আর সেই গর্ব হল, পথের পাঁচালির স্রষ্টা বিভূতিভূষণকে নিয়ে। এই গ্রামেই গৌরীদেবীর পাণিগ্রহণ করেছিলেন তিনি। গ্রামের জামাইকে নিয়ে নানা মধুর স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে এখানে-ওখানে।
পানিতরে দুর্গাপুজোর শুরু ১৭৬০ সালে। আর পাঁচটা গ্রামের পুজোর মতো হলেও এই পুজো নজর কাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চরিত্রে। ‘ভজরম’ নামে যার খ্যাতি ছড়িয়েছে অন্যত্রও। হিন্দু-মুসলমান সবারই পাত পড়ে পুজোয় আঙিনায়। আর এই ভোজকেই গ্রামের মানুষ নাম দিয়েছেন ‘ভজরম’ উৎসব। যদিও গ্রামবাসীদের দাবি পুজোয় নয়, ভজরম-এর শুরু তার বহু আগেই। শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র একবার ছাড়া কখনও বন্ধ হয়নি এই উৎসব। গ্রামবাসী রূপেন রায়, তপন পাল জানালেন, “২০০০ সালে বন্যার সময় গ্রামে একমাত্র ধনী ঘর ছাড়া সবই ভেসে গিয়েছিল জলে। ওই সময় বেশিরভাগ মানুষ ভয়ে গ্রাম ছেড়েছিলেন। সে বছর কোনওরকমে নম নম করে দেবীবরণের আয়োজন করা হলেও ভজরম উৎসব আর করা সম্ভব হয়নি। ওই একবারই ছেদ পড়ে উৎসবে।” আজও উৎসবে এক হয়ে যায় দুই বাংলার গ্রামের মানুষ।
এখন কাঁটাতারের বাঁধন থাকলেও এক সময় ওপারের পদ্মশাঁকরা, হাড়োদ্দা প্রভৃতি গ্রাম থেকে মানুষ এ গ্রামে আসতেন বিভূতিভূষণের শ্বশুরবাড়ির পুজো দেখতে। সেই স্মৃতি আজও বয়ে চলেছে পানিতর। দেবীর পুজোর থানের সামনেই রয়েছে বিভূতিভূষণের আবক্ষ মূর্তি। যার নীচে খোদিত, ‘কত দূরে ইছামতীর ধার, তেতলা বাড়ির উপরের ঘর, সেখানে কে যেন আছে, গৌরির সাথে বিয়ে হয় পানিতরে’। নীচে তারিখ, ১৩২৪ সনের ৩১ শে শ্রাবণ।
শ্বশুরবাড়ির সূত্রে বেশ কয়েক বার পানিতরে এসেছিলেন বিভূতিভূষণ। আলাপ হয়েছিল তারাপ্রসন্ন বিশ্বাসের সঙ্গে। পরে যা প্রগাঢ় বন্ধুত্বে পরিণত হয়। স্ত্রী বেঁচে থাকাকালীন দু’দুবার গ্রামে পুজো দেখতে এসেছিলেন বিভূতিভূষণ। তা নিয়ে গ্রামের মানুষের আছে নানা স্মৃতি। একবার পানিতরে এসে বন্ধু তারাপ্রসন্নর স্ত্রী নিভারানিদেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধু পত্নীকে দেখতে চাইলে পারিবারিক কঠোর অনুশাসনের কারণে স্বামীর বন্ধুর সামনে চোখ বন্ধ করে বসার জন্য নিভারানিদেবীকে আদেশ দেন তাঁর শাশুড়ি। বন্ধুপত্নীকে এ ভাবে চোখ বন্ধ করে সামনে বসে থাকতে দেখে রসিক বিভূতিভূষণ হেসে ফেলে বন্ধুর উদ্দেশে বলেন, “কি রে, শেষে কিনা অন্ধ মেয়েকে বিয়ে করলি।” স্বামীর বন্ধুর ভুল ভাঙাতে সঙ্গে সঙ্গে শাশুড়ির আদেশ সত্ত্বেও চোখ মেলে তাকান নিভারানিদেবী।
পুজোর সময় এমনই নানা স্মৃতি ভিড় করে পানিতরে। জামাই বিভূতিভূষণে মোহিত পানিতরের পুজো উদ্যোক্তাদের এমনও দাবি, পথের পাঁচালির স্রষ্টা এখানেই পেয়েছিলেন তাঁর সৃষ্টির রসদ।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.