প্রতিবাদ নেভেনি, কামদুনিতে প্রদীপ ভাসাল হাজারো মানুষ
রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে রবিবার সন্ধির বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সোমবার, গণধর্ষণ ও খুনের সেই ঘটনার ঠিক চার মাস পূর্তির দিনে কামদুনি বোঝাল, প্রতিবাদ-আন্দোলন প্রত্যাহারের প্রশ্ন নেই। ঠিক চার মাস আগে, ৭ জুন কামদুনির কলেজ ছাত্রীটিকে খুন করা হয়। কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চ এ দিন স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। রবিবার তৃণমূল-প্রভাবিত কামদুনি শান্তিরক্ষা কমিটির রক্তদান শিবিরের পর এ দিনের কর্মসূচি নিয়ে তেমন কোনও প্রচার বা পূর্ব-প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের ঢল বুঝিয়ে দিল, কামদুনির আগুন নেভেনি। কামদুনির প্রতিবাদের মুখ হিসেবে পরিচিত, মঞ্চের সম্পাদিকা মৌসুমী কয়াল বলেন, “আমরা কখনও শক্তি পাচ্ছি, আবার কখনও শক্তি হারিয়ে ফেলছি। আজ আবার কিছুটা বল পেলাম।”
সোমবার কামদুনিতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
রবিবারই শান্তিরক্ষা কমিটির রক্তদান শিবিরে যোগ দিয়ে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী সংঘাত ছেড়ে একযোগে উন্নয়নে সামিল হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। সেই শিবিরে মৌসুমী ও প্রতিবাদী মঞ্চের কয়েক জনও কিছু ক্ষণের জন্য ছিলেন। তখন রাগ-বিদ্বেষ সরিয়ে রেখে প্রতিবাদী মঞ্চকেও কাছে টানার বার্তা দিয়েছিলেন মন্ত্রীরা। এ দিন প্রতিবাদী মঞ্চের কর্মসূচিতে অবশ্য শান্তিরক্ষা কমিটির কাউকে দেখা যায়নি। এ দিন সন্ধ্যায় শান্তিরক্ষা কমিটির তরফে এলাকায় পাল্টা মিছিল বার করা হয়। তারাও নিহত ছাত্রীর স্মরণে নির্মিত বেদীতে মালা দেয়।
রবিবারের রক্তদান শিবিরে ছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি এ দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, “সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি বাইরে থেকে এ দিন প্রচুর লোককে কামদুনিতে নিয়ে গিয়েছিল। মজিদ মাস্টারকে ঘরে ঢুকিয়ে যে রকম শিক্ষা দিয়েছি, চাইলে সেটা কামদুনিতেও করতে পারি। কিন্তু আমরা তা চাই না।” রবিবারের অনুষ্ঠানে অভিযুক্তের পরিবারের লোকজনকে সামিল করা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা অস্বীকার করেন তিনি।
সোমবার সকালেই প্রতিবাদী মঞ্চ ঠিক করে, কিছু ফুলের মালা কিনে ছাত্রীর স্মরণে তৈরি হওয়া বেদীতে পরানো হবে এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হবে বেদী-লাগোয়া ভেড়ির জলে। ঠিক হয়, বিকেল চারটেতে কামদুনি স্কুলমাঠ থেকে মৌনী মিছিল শুরু হবে। কিন্তু সে জন্য তেমন কোনও প্রচার করা হয়নি। ওই অল্প সময়ের মধ্যে প্রচার করা সম্ভবও ছিল না। তার উপরে সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টি-বজ্রপাত। বেলা যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে আবহাওয়ার প্রতিকূলতা। তা সত্ত্বেও লোকমুখে খবর ছড়াতেই কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে যান কামদুনিতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি কলকাতা, এমনকী কৃষ্ণনগর থেকেও মানুষ এসেছিলেন। এসেছিলেন সুটিয়া এবং বারাসত প্রতিবাদী মঞ্চের প্রতিনিধিরা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবাসী ও সুরেন্দ্রনাথ কলেজের প্রচুর ছাত্রছাত্রী এবং মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর কর্মীরাও ছিলেন।
বিকেল চারটে নাগাদ কামদুনি স্কুলমাঠ থেকে মিছিল শুরু হয়। চার কিলোমিটার দূরে, কামদুনি বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছতে সময় লেগে যায় দেড় ঘণ্টারও বেশি। পথেই পড়েছে পাঁচিল ঘেরা সেই জায়গা, যেখানে ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ওইখানটি দিয়ে যাওয়ার সময়ে মিছিল আর মৌন থাকেনি। মিছিল থেকে ছিটকে অনেকেই বেরিয়ে চলে যান ঘটনাস্থলে। নিহত ছাত্রীর নাম করে স্লোগান ওঠে ‘তুমি প্রতিবাদের মুখ, তোমাকে আমরা ভুলছি না, ভুলব না।’ ওঠে ‘শেম শেম’ ধ্বনিও।
স্মৃতিবেদীতে মালা পরানোর পর ভেড়ির জলে নিহত ছাত্রীর স্মরণে প্রদীপ ভাসানো হয়। ওই ভেড়ির জল থেকেই উদ্ধার করা হয়েছিল নিহত ছাত্রীর ব্যাগ, তাঁর অন্তর্বাস। প্রদীপ ভাসাতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ভাস্কর মণ্ডল। আকাশের দিকে চেয়ে ওই ছাত্রীর নাম করে ভাস্কর বলে ওঠেন, “জানি, তুমি আকাশ থেকে সব দেখতে পাচ্ছ। কত যন্ত্রণা আমাদের সহ্য করতে হচ্ছে, সেটাও বুঝতে পারছ। তুমি আমাদের শক্তি দাও।” এই ভাস্করের খোঁজেই কয়েক দিন আগে পুলিশ গ্রামে হানা দিয়েছে। তাঁর নামে এফআইআর হয়েছে। ভাস্করের আর্তি শুনে অনেকেই কেঁদে ফেলেন এ দিন।
কিন্তু রবিবারই যেখানে দু’পক্ষের মধ্যে একটা সন্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, এ দিন সেটা ভেঙে গেল কেন? এলাকার মানুষের অভিযোগ, রবিবার সন্ধ্যায় রক্তদান শিবিরের পরেই কামদুনি শান্তিরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে ছাপানো একটি বুলেটিন গ্রামে বিলি করা হয়।
সেখানে কামদুনি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে বলা হয়, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের টাকায় ভারতভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন। মৌসুমীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মঞ্চের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ দিন প্রদীপবাবু বলেন, “দোষীদের শাস্তি ও এলাকার উন্নয়নের দাবিই যদি মূল হয়, তা হলে তো আমাদের সঙ্গে কারও বিরোধের প্রশ্ন উঠছে না। তবে আমাদের সম্পর্কে কুৎসা করা হচ্ছে কেন?” একই প্রশ্ন তোলেন সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দারও।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.