ক্রীড়াপ্রেমী বাঙালির পুজোর আগে দু’টো প্রশ্ন।
এক, পুজোতেও বৃষ্টি চলবে কি না? দুই, শ্রীনি কবে যাবেন, পুজোর আগেই কি?
প্রথম প্রশ্নের নিখুঁত উত্তর আবহাওয়া অফিসের পক্ষেও সম্ভব নয়। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর, শ্রীনি গোটা পুজো লটকে থাকলেন। তাঁর ভাগ্য ঠিক হবে দশেরার পর সুপ্রিম কোর্ট খুললে।
এমনিতে তাঁর ভাগ্য চতুর্থীতেই স্থির হওয়ার কথা। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলেও ছিল মঙ্গলবার শুনানি ফের চালু হবে। কিন্তু তালিকায় এই মামলা চলে গিয়েছে ৭০ নম্বরে। ওঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বিরোধীপক্ষ এমন লিস্টিংয়ে যৎপরোনাস্তি উল্লসিত। এ দিন তাঁদের হয়ে সওয়াল করার জন্য হরিশ সালভে ছিলেন না। পরের শুনানির দিন অবশ্যই থাকবেন। বিরোধীপক্ষের বিশ্বাস তাদের পঞ্চাশ ভাগ কাজ সোমবারই বিচারপতির রায়ে হয়ে গিয়েছে। পরের দিন বাকিটা। |
দুই সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তিকর। প্রথমত, তারা বোর্ড প্রস্তাবিত প্যানেলের নাম তছনছ করে দিয়ে বলেছে তদন্ত হতে হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে। এমন লোকেরা সেই কমিটিতে থাকবেন যাঁদের বোর্ডের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয়ত, তদন্ত কমিটিতে তাঁর চিরনির্ভরযোগ্য অরুণ জেটলির নাম প্রস্তাব করেছিলেন শ্রীনিবাসন। বোর্ডের কৌঁসুলি বলেন, “জেটলি বোর্ডের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান। তাঁকে এখানে রাখা হোক।” আদালত সেই নাম খারিজ করে দিয়ে বলেছে, জেটলি এই তদন্তের পক্ষে অনেক বেশি হাইপ্রোফাইল। তৃতীয়ত, কোর্ট বলে দিয়েছে যাঁরাই কমিটিতে থাকুন না কেন তাঁদের রিপোর্ট দিতে হবে সুপ্রিম কোর্টের কাছে। রিপোর্ট বোর্ডের কাছে জমা পড়বে না। এটাও শ্রীনির কাছে একই দিনে তৃতীয় বিশাল ধাক্কা।
সুপ্রিম কোর্ট আনন্দবাজারে গতকাল প্রকাশিত প্রাক্তন বিচারপতি মুকুল মুদগলের নামটাই চূড়ান্ত করেছে তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে। অন্য সদস্য হিসেবে তারা নিলয় দত্ত-র নাম রেখেছিল। কিন্তু পরের দিন বিরোধী পক্ষ এই নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাবে। কারণ, নিলয় শুধু অসম ক্রিকেট সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্টই নন, প্রকাশ্য শ্রীনি সমর্থক। এমনকী তাঁর পক্ষে টিভি বিতর্কেও অংশ নিয়েছেন। আদিত্য বর্মার পক্ষে তিন-চার জনের নাম প্রস্তাব করা হবে কমিশনের সদস্য হিসেবে। আর এস সোধী। নীরজ কউল। আর সর্বশেষ কলকাতার উষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারপতিরা এ দিন বারবার জানতে চান, শ্রীনিকে যদি আদালত আটকে দেয় তা হলে বোর্ড চলবে কী করে? আদালত কোনও ভাবেই চায় না ভারতীয় বোর্ডের কাজকর্ম ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলে থাক।
বিরোধীপক্ষের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এর জবাবে বলেন, “বোর্ডে গত চার মাস অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট ছিল। মিস্টার জগমোহন ডালমিয়া দিব্যি চালিয়েছেন। ওঁর আমলে ভারত বিদেশে একাধিক ট্রফি জিতেছে। আইসিসি বৈঠকে ডালমিয়া নিজে অংশ নিয়েছেন। বিদেশ সফরের ক্রীড়াসূচি চূড়ান্ত করেছেন। শ্রীনিকে আটকে দিয়ে অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট পুনর্নিয়োগ করতে সমস্যা কোথায়?” এ-ও বলা হয়, শ্রীনিবাসন বম্বে হাইকোর্টে এফিডেভিট দিয়েছিলেন যত দিন না তদন্ত কমিটির কাজ শেষ হচ্ছে, বোর্ড থেকে দূরে থাকবেন। এখন ফের তাঁকে বহাল রাখলে বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশের অবমাননা করা হবে।
রাতে দিল্লিতে কথা বলে জানা গেল, বিরোধীপক্ষ উল্লসিত। স্বাধীন প্যানেল নিয়োগের প্রস্তাব মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু শ্রীনিকে আদালতের নির্দেশে তদন্ত না শেষ হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতা থেকে সরানো বাকি। অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এঁরা দু’টো নামও ভেবে নিয়েছেন। প্রথম পছন্দ শশাঙ্ক মনোহর। শ্রীনির আগে ভারতীয় ক্রিকেটের হাল যাঁর হাতে ছিল। দ্বিতীয়, জগমোহন ডালমিয়া।
কে বলতে পারে দশেরার পর দেবীর আশীর্বাদে আবার আলিপুরের দিকেই যে ক্রিকেট-রাজনীতির ঢাক বাজবে না?
|