জেলখানার চার দেওয়ালেও আগমনীর সুর
শুধু শেষের দু’টো দিন নয়। এ বার পুজোর চারটে দিনই ভুরিভোজ থাকছে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। সর্বজনীন পুজো উদ্যোক্তাদের মতোই এখন দম ফেলার ফুরসত নেই সুরেশ প্রসাদ, পুলিন বাঁশুরি, রাধাকান্ত শীট, অসীম ভট্টাচার্যদের। এঁরা সকলেই সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। এক আবাসিকের কথায়, “অন্য বছর নবমী আর দশমীতে খাওয়াদাওয়া হয়। এ বার চার দিনই পাতপেড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অন্য দিনের খরচ বাঁচিয়েই এই আয়োজন।” জেল সুপার খগেন্দ্রনাথ বীর বলেন, “আবাসিকেরাই সব আয়োজন করেন। আমরা সাধ্যমতো সাহায্য করি।”
মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে দুর্গাপুজো করেন আবাসিকেরা। ইতিমধ্যে পুজোর কমিটি তৈরি হয়েছে। সম্পাদক হয়েছেন মঙ্গল হেমব্রম। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এই আবাসিকের বাড়ি গোয়ালতোড়ে। সহ-সম্পাদক কাঞ্চন পাইনও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। তিনি বাঁকুড়ার বাসিন্দা। কমিটির সভাপতি জেল সুপার খগেন্দ্রনাথ বীর। সহ-সভাপতি জেলের ওয়েলফেয়ার অফিসার মহুয়া বাগচি মিত্র। পুজোর কার্ডও ছাপানো হয়েছে। কার্ডে লেখা, ‘নীল অঞ্জনঘন ছায়ার ঘোমটা সরিয়ে আকাশে বর্ষণক্ষান্ত মেঘের অলস আনাগোনা, কাশের দোলা ও শিউলির সুবাসে মর্তধামে ঘোষিত হয়েছে আগমনীর আগমন বার্তা। সাধ ও সাধ্যের মেলবন্ধনে সীমার মাঝে অসীমকে আহ্বান জানাতে আমরাও ব্রতী হয়েছি মা মহামায়ার বন্দনায়। সারা বছরের মালিন্য মুছে দিয়ে মঙ্গলশঙ্খে ধ্বনিত হোক উৎসবের আনন্দগান’।

পুজোর ভূরিভোজ
সকাল দুপুর রাত
সপ্তমী চা, কচুরি,
আলুর দম
ভাত, মুগের ডাল,
আলু পোস্ত চাটনি, পাঁপড়
রুটি, ছোলার ডাল,
সুজির হালুয়া, মিষ্টি
অষ্টমী চা, মুড়ি,
বোঁদে
গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি,
বেগুনভাজা, চাটনি, পাঁপড়
লুচি, কুমড়োর তরকারি,
মিষ্টি, পায়েস
নবমী চা, মুড়ি,
ঘুগনি
ভাত, মুসুর ডাল,
ছেঁচড়া, মাছ, চাটনি, পাঁপড়
রুটি, বাঁধাকপির তরকারি,
ডাল, মিষ্টি
দশমী চা, মুড়ি,
বোঁদে
ভাত, মুসুর ডাল, কুমড়োর তরকারি,
মাংস, চাটনি, পাঁপড়
রুটি, আলু-পটল,
ডাল, মিষ্টি
জেলে আবাসিকদের রিক্রিয়েশন ক্লাব রয়েছে। ক্লাব চত্বরেই মণ্ডপ বানাচ্ছেন কুমার খামরই নামে এক বন্দি। তাঁকে সাহায্য করছেন অন্যরা। নানা রঙের কাপড়ে মণ্ডপের সেজে ওঠা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এক সময়ে জেলের মধ্যেই প্রতিমা তৈরি হত। চন্দন চন্দ নামে এক আবাসিক প্রতিমা তৈরি করতেন। বছর দুই আগে তিনি কলকাতার এক জেলে স্থানান্তরিত হন। তারপর থেকে উদয় পাত্র নামে খড়্গপুরের এক মৃৎশিল্পী প্রতিমা তৈরি করেন। পুজোর খরচ ওঠে কী করে? জেল সূত্রে খবর, পুজোর জন্য আবাসিকেরা তাঁদের একদিনের পারিশ্রমিক দেন। খাবারের খরচ অন্য দিনের থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। যেমন, কোনও সপ্তাহের মাছ পুজোর দিনের জন্য তুলে রাখা হয়। অর্থাৎ, ওই সপ্তাহে আবাসিকেরা মাছ খেলেন না। ওই মাছ আসে পুজোর দিনে। সঙ্গে জেলের কর্মী-অফিসারেরা যে সাধ্যমতো চাঁদা দেন, নানা ভাবে সহযোগিতা করেন।
মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে এখন ১ হাজার ২৫০ জন আবাসিক রয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৭০০ জন সাজাপ্রাপ্ত। তার মধ্যে ৫০০ জনই আবার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। পুজোর ক’টা দিন সকলেই উৎসবে সামিল হন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। যেমন ছৌনাচ, সাঁওতালি নৃত্য প্রভৃতি। আবাসিকদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া নতুন নয়। মেদিনীপুরেও আবাসিকদের সাংস্কৃতিক দল রয়েছে। আগে যাত্রা হত। আগে আবাসিকরাই যাত্রা করতেন। এখন আর তা হয় না। জেলের মধ্যে পুজো প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। আবাসিকদের সঙ্গে ব্যস্ত সন্তোষ সরকার, অসীম আচার্যরা। সন্তোষবাবু ডেপুটি জেলার। অসীমবাবু ‘চিফ ডিসিপ্লিন অফিসার’। এক আবাসিকের কথায়, “কর্মী-অফিসাররা সব রকম ভাবে সাহায্য করেন। ওঁদের সহযোগিতা ছাড়া পুজোর আয়োজন সম্ভব হত না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.