|
|
|
|
নজরে প্রধানমন্ত্রীর পদ, মুলায়ম চান তৃতীয় ফ্রন্ট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা ভোটের পর কংগ্রেসের সঙ্গে দর কষাকষির পথ খুলে রাখতে ফের তৃতীয় ফ্রন্টের সম্ভাবনা উস্কে দিচ্ছেন এই জোট অঙ্কের পুরনো কুশীলবেরা। আর এই সম্ভাব্য জোটের নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে গোড়া থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সমাজবাদী পার্টি নেতা মুলায়ম সিংহ যাদব।
ইতিমধ্যেই অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। যেখানে সমাজবাদী পার্টির নেতারা তো থাকছেনই, সিপিএমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা হচ্ছে জয়ললিতা, নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক এবং দেবগৌড়ার সঙ্গেও। অনেকেই মনে করছেন, এই সম্মেলন থেকেই আরও একবার তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার চেষ্টা চালাবেন ওই সব দলের নেতারা। এই আবহেই আজ মুলায়ম বলেন, “নির্বাচনের পর তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন হবে। সরকার গড়বে এই ফ্রন্টই। প্রধানমন্ত্রীও হবেন এই জোট থেকেই।”
এই জোটের অঙ্ক স্পষ্ট। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গড়ার মতো পর্যাপ্ত সংখ্যা জোগাড় করতে পারবে কি না, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। তবে এই দলগুলির নেতাদের অঙ্ক, বিজেপির আসন বাড়লে কমবে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা।
ফলে তখন কংগ্রেসের সঙ্গে দর কষাকষি করে একটি তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার গড়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সে কারণে গা গরম করার কাজটি সেরে রাখলেও এই নেতারা কিন্তু গত কয়েক বারের মতো এ বারে ভোটের আগে কোনও ফ্রন্ট তৈরিতে আগ্রহী নন। বরং ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নেওয়ার কৌশল নিয়েই এ বারে এগোতে চাইছেন তাঁরা। মুলায়মের এ দিনের মন্তব্যেও সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। তিনি বলেন, “জোট হলে তা নির্বাচনের পরে হবে। কেন না আগে হলে দলগুলির আসন সমঝোতা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হবে। ঐক্য নষ্ট হবে।” সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরিও ভোটের ফল দেখেই এই ফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনার কথা বলেন। তিনি বলেন, “সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঠেকাতে অ-কংগ্রেসি ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
সমাজবাদী পার্টি সূত্রের খবর, যে দলগুলিকে নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার অঙ্ক কষা হচ্ছে, তারা কেউই এই মুহূর্তে কোনও রকম প্রাক্-নির্বাচনী সমঝোতায় যেতে রাজি নয়। প্রত্যেকেই ভোটের ফল দেখে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবছে। অনেকেই বলছেন, এখনও পর্যন্ত যে নেতারা সাম্প্রদায়িকতা রোখার কথা বলছেন, মোদী ভাল ফল করলে তাঁদের অনেকেই আবার বিজেপির দিকে ঝুঁকতে পারেন।
আবার কংগ্রেসও এই আঞ্চলিক দলগুলিকে পাশে পেতে চাইছে। সে কারণে ফলাফল দেখেই এগোনোর কৌশল নিচ্ছে সব দল।
অঙ্কের বিচারে এমন অবস্থা থাকলেও ভোটের পরে তৃতীয় ফ্রন্টের গঠনের পরিস্থিতি অনুকূল হলে তখন যাতে ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে, সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন মুলায়ম। সমাজবাদী পার্টির এক নেতার কথায়, “তৃতীয় ফ্রন্টের বিকল্প তো রয়েছেই। যদি কংগ্রেস সরকার গড়ার মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছে যায়, সে ক্ষেত্রে বিজেপিকে রুখতে দল সনিয়া-রাহুলের পাশে থাকবে। আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুপ্ত বাসনা তো রয়েইছে মুলায়মের। তাই চলতি নির্বাচনের আগে তৃতীয় ফ্রন্টের সম্ভাবনা উস্কে দিয়ে কার্যত অন্য দলগুলিকে বার্তা দিয়ে রাখলেন নেতাজি।”
বিজেপি নেতাদের অবশ্য দাবি, এ ধরনের জোটের চেষ্টা আগেও হয়েছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এ বারেও এই নেতাদের আশা পূরণ হবে না।
বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেনের কথায়, “লোকসভা নির্বাচনে শরিক টানার জন্য কংগ্রেসের কাছে সিবিআই-ই সবথেকে বড় ভরসা। সিবিআইকে ব্যবহার করে কংগ্রেস কখনও মুলায়ম, কখনও মায়াবতীকে বাগে আনার চেষ্টা করে। এ বারে সেই দলে যোগ দিতে চলেছেন নীতীশ কুমার। সমর্থন পাওয়ার জন্য নীতীশের বিরুদ্ধেও সিবিআইকে কাজে লাগানো হচ্ছে। আর তৃতীয় ফ্রন্টের হাস্যকর চেষ্টার মূল কারিগর ছিল বামেরা। তারা নিজেরাই এখন দুর্বল। সামনের ভোটে দশের বেড়া কী করে টপকাবেন, তা নিয়েই বরং ভাবনাচিন্তা করুন বাম নেতারা!”
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের উদ্যোগ নিলেও ভোটের ফলে মুখ পুড়িয়েছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। যা নিয়ে পরে দলের মধ্যেই তীব্র অসন্তোষের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তাই দলের একটি বড় অংশ চাইছে, বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি আগে নির্বাচনে জিতে আসুক। তার পরেই পদক্ষেপ করুক দল। তবে সিপিএমের অন্য একটি অংশ আবার রাজ্যভিত্তিক আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট গঠনে আগ্রহী। ওই অংশের মতে, সে ক্ষেত্রে সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল রাজ্যগুলিতে আসন বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকবে। দলীয় সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত রণকৌশল কী হবে, তা আগামী ডিসেম্বরে আগরতলায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।
|
পুরনো খবর: তৃতীয় ফ্রন্ট, মুলায়মের স্বপ্ন নিয়ে মমতার কাছে অখিলেশ |
|
|
|
|
|