ঢাকে পড়ল কাঠি
মণ্ডপে হারানো পুতুলের দেশ
মেয়ে আসছে ঘরে। সঙ্গে পুত্র, কন্যা, বাহন। ফি বছর তো কি! অভ্যর্থনায় তো নতুনত্ব চাই। পাড়ায় পাড়ায় ওঠা এই দাবিতেই পাল্টে যায় চেনা শহর। কোনও জিয়ন কাঠির ছোঁয়ায় শহরের নামটাও বদলে যায় ওই চার দিনে। ‘আজবনগর’। যেখানে বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা দর্শনের কঠিন তত্ত্ব ভাসে চোখের সামনে। যেখানে ‘ফেলনা’ কিছু নেই। সেখানে উঠে আসে নিত্য নতুন শিল্প। যেখানে মেলে হারিয়ে যাওয়া জিনিস। এমনই কিছু প্রস্তুতি নিয়েই আজকের গল্প।
জীবন নৌকার পালে সুখ দু:খের হাওয়া লাগিয়ে অদৃষ্টের টানে চলছি। ‘টালা বারোয়ারি দুর্গোৎসবে’র এ বছরের দর্শন এটাই। হাওয়া পেরিয়ে মণ্ডপে ঢুকতে বেতের ভুলভুলাইয়ার ঘূর্ণি কাটাতে হবে দর্শককে। মায়াবী আলোয় তৈরি নদী বা সমুদ্রের ঢেউয়ের মুখোমুখি দাঁড়ালে মিলবে বজরাকৃতি নৌকোয় আসীন সপারিষদ সাবেক দেবীর দেখা। আশপাশে থাকবে প্রায় ৩০/৩৫টা পাল তোলা নৌকো। প্লাইয়ের তৈরি নৌকোর গায়ে থাকছে রঙিন সুতোর কাজ। আলোর দুলুনিতে নৌকো আর আলোর সমুদ্র ছুঁয়ে যাবে দর্শককে।
‘কামারহাটি নীলগঞ্জ রোড সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি’র পুজোয় ১৫ টন পিতল দিয়ে তৈরি হয়েছে সিকিমের রা-বাংলার বৌদ্ধমন্দির।
উত্তর কলকাতার ‘সন্ধানী দুর্গোৎসব সমিতি’র মণ্ডপে ঢুকলে দর্শকরা দেখবেন জলপ্রপাত, গুহা আর বন্য পশু। বলছেন উদ্যোক্তারা। বাঁশ, পাট, নারকেল দড়ি, প্লাস্টার অফ প্যারিস, থার্মোকল আর রঙে সাজছে সেই অনন্য প্রকৃতি।
জল রঙের উৎসবে মেতে উঠছে ‘বাঁশদ্রোণী রায়নগর উন্নয়ন সমিতি’। জলের গতির অবনমনকে দর্শকের সামনে তুলে ধরতে উদ্যোক্তারা আমদাবাদ থেকে এনেছেন স্বচ্ছ পাইপ। ফাইবার শিট আর প্লাইয়ে তৈরি জলাধার আকৃতির মণ্ডপ। সঙ্গে আলোর খেলা। জল অপচয় সম্পর্কে সচেতনতার বার্তাও থাকছে।
বেহালার ‘মুকুল সঙ্ঘ’-এর পুজোয় টায়ার রঙ করে হচ্ছে ময়ূর, সিংহ, গণেশ, পাখি, মহিষ। থাকছে টায়ারের ঝাড়বাতি। প্রতিমা সাবেক ভিডিও গেমসের দৌলতে শৈশব থেকে সরছে পুতুলের সংসার। রায়বাহাদুর রোডের ‘চণ্ডীতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি’র পুজোয় মিলবে হারিয়ে যাওয়া হরেক পুতুল। কাঠের পুতুল, গালার পুতুল, পোড়া মাটির পুতুল, হাতে টেপা মাটির পুতুল। পুতুল দিয়ে হচ্ছে চালচিত্র ও প্রতিমার বেদী।
‘বারুইপুর ভট্টাচার্য পাড়া দুর্গাপুজো কমিটি’ থার্মোকল, প্যারিস আর রঙ দিয়ে হচ্ছে অসংখ্য পুতুল, পশু, পাখি। মূল মণ্ডপে আসীন দেবী পুতুল গড়নের।
আলোর এ কাল সে কাল নিয়ে আসছে ‘দক্ষিণ ৪১ পল্লি দুর্গোৎসব কমিটি’। হ্যারিকেন থেকে ল্যাম্প শেড সবই হাজির মণ্ডপে। ক্যানভাস পেন্টিং আর আলোর রোশনাইয়ে দেবী এখানে লাল পেড়ে শাড়িতে।
তন্ত্রম ও যন্ত্রম নিয়ে মণ্ডপ সাজাচ্ছে ‘আদি লেক পল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি’। স্টোনডাস্ট, প্লাই, বাঁশে হচ্ছে মণ্ডপ। ৯৯তম বর্ষের পুজোয় প্রতিমা অস্ত্রহীন। হাতে থাকবে নির্দিষ্ট মুদ্রা।
পুজোর পঞ্চ উপাচারের একটি কদলী বা কলা। সেই কদলী থাকছে শোভাবাজারের ‘বেনিয়াটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি’র পুজোয়। মোচার খোলা থেকে বেরিয়ে আসবে দুর্গা। থার্মোকলের মোচা আর কলায় হচ্ছে দেব-দেবীর বাহন। দেওয়াল সাজাতে থাকছে কলার ভেলাও।
প্রতীক্ষার প্রহর গোনা প্রায় শেষ। তাই শরতের নীল সাদা মেঘের মাঝে বরুণদেবের চোখ রগরানিকে আর ভয় পাওয়া নয়। আনন্দের ভেলায় চেপে শুধু বেরিয়ে পড়া।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.