ঢাকে পড়ল কাঠি
গেরস্থালির জিনিস দিয়ে
মণ্ডপসজ্জা বাড়ছে শহর জুড়ে

• মণ্ডপে ঢুকতেই দু’ধারে সার দিয়ে কাশফুল ফুটে রয়েছে। আর সামনে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে হলুদ-সবুজ-লাল রঙের ঝলকে।
• দূর থেকে মনে হচ্ছিল, বিশাল এক মৌচাক। অথচ কাছে যেতেই বদলে গেল মণ্ডপে।
শহরের পুজোয় এ বার এ ভাবেই সেজে উঠছে মণ্ডপ। এবং এই সাজানোর উপকরণ রোজকার গেরস্থালির জিনিসপত্র। কোথাও মণ্ডপ সাজছে বৈদ্যুতিক শিল্পের ইনস্যুলেটরে, কোথাও বা ফুচকা-ঝালমুড়ির ঠোঙায়। তবে এমনটা অবশ্য প্রথম নয়। শহরে এর আগেও এমন জিনিস ব্যবহার হয়েছে। বছর কয়েক আগে কসবার বোসপুকুর শীতলামন্দিরে ভাঁড়ের মণ্ডপ দেখতে উপচে পড়েছিল ভিড়। পেরেক কিংবা রাজমিস্ত্রির কড়াই-ও রূপ পেয়েছে নতুন সাজে। তবে সেগুলি ছিল হাতে গোনা কয়েকটি মণ্ডপে। এ বার সংখ্যাটা অনেকটাই বেড়েছে।
এ বছর হাতিবাগান কাশী বোস লেনে শিল্পী শিবশঙ্কর দাস মণ্ডপ সাজিয়েছেন বৈদ্যুতিক শিল্পে ব্যবহৃত ইনস্যুলেটর আর থার্মোকলের গ্লাস দিয়ে। রয়েছে নানা রঙে সাজিয়ে তোলা বাঁশও। পুজোকর্তা সোমেন দত্ত জানাচ্ছেন, মণ্ডপে ঢুকতেই দু’ধারে চোখে পড়বে কাশফুলের বন। সামনে রঙিন থার্মোকলের গ্লাসের ইনস্টলেশন। শিবশঙ্করই আবার বেলেঘাটা ৩৩ পল্লিতে মাছের রূপ বোঝাতে তুলে ধরেছেন জামার ক্লিপ, রাজমিস্ত্রিদের কর্নিক। তিনি অবশ্য এর আগেও এই ধরনের উপাদান ব্যবহার করেছেন। গত বছরই চক্রবেড়িয়ায় ক্রিস্টাল পাথর দিয়ে বৃষ্টিধারা গড়ে চমক লাগিয়েছিলেন এই তরুণ শিল্পী।
দীর্ঘ দিন ধরেই ইনস্টলেশন-এর উপরে কাজ করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন সনাতন দিন্দা। এ বার যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লিতে মণ্ডপ সাজিয়েছেন শালপাতার ঠোঙা দিয়ে। ফুচকার দোকানের পরিচিত ঠোঙায় সেজে ওঠা ৯৫ পল্লির মণ্ডপ দেখে মনে হতেই পারে মৌচাক। চোখ ধাঁধানোও অসম্ভব নয়! শহরের পুজোর হাল-হকিকত জানা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার সনাতনের কাছ থেকে অন্য ধরনের কাজ দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা।
ফুচকা যদি থাকতে পারে, তবে ঝালমুড়ি নয় কেন! ৯৫ পল্লির কাছেই সেলিমপুরে শিল্পী রিন্টু দাস মণ্ডপ সাজাচ্ছেন ঝালমুড়ির ঠোঙা আর বাতানুকূল যন্ত্রের পাইপে। রয়েছে শোলার গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, প্লাস্টিকের চামচও। রূপচাঁদ মুখার্জি লেনের পুজোয় শিশুদের মনকে থিম করে মণ্ডপ সাজাতে কাচ ব্যবহার করেছেন তিনি।
উত্তরের তেলেঙ্গাবাগানের পুজোতে শিল্পী কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্ত ব্যবহার করছেন খবরের কাগজ, ফাইবার শিট, নাইলন দড়ি, সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ের রং। সেখানে এ বার থিম দুর্গার সঙ্গে জগন্নাথের মিশেল। মণ্ডপ রথের সাজে। সেখানেই এই ধরনের কাজ করছেন কৃষ্ণপ্রিয়বাবু।
গেরস্থালির জিনিস দিয়ে নতুনত্ব এনেছে শিবমন্দিরও। সূর্যই শক্তির উত্‌স এই থিমে মণ্ডপ সাজাতে শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যবহার করছেন বাতানুকূল যন্ত্রে ব্যবহৃত পাইপ। পুজোকর্তা পার্থ ঘোষ জানালেন, এই পাইপ অগ্নি-নিরোধক। অনেকটা একই কায়দা ভবানীপুর অগ্রদূত সঙ্ঘে। সেখানে চাঁদ সদাগর-মনসার উপাখ্যানে সাপ সাজাতে ব্যবহার করা হচ্ছে পিভিসি পাইপ। অগ্রদূতের শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা এর আগে ধাতু, প্লাস্টার অফ প্যারিস নিয়ে কাজ করেছেন। গত বছর উত্তর কলকাতার এক পুজোয় তাঁর মণ্ডপের অন্যতম উপাদান ছিল আলোর কারিকুরি। এ বার সেই ধাঁচে কিছুটা বদল আনতেই নতুন উপাদান বেছেছেন তিনি। দক্ষিণ কলকাতারই ত্রিকোণ পার্কে গেলে দেখা যাবে, গাঁয়ে গেরস্ত ঘরে চাল-ডাল মাপতে ব্যবহৃত শিরপাইয়ের।
উপাদানে নতুনত্ব এনেছেন শহরের প্রথম সারির শিল্পীদের অন্যতম ভবতোষ সুতারও। ২০১১ সালে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘে পিতলের সঙ্গে মেহগনি কাঠ মিশিয়ে প্রতিমা গড়ে চমক লাগিয়েছিলেন। এ বার হাতিবাগান শিকদারবাগানে মণ্ডপ সাজানোর অন্যতম উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছেন কাচ এবং কুপি-কে। সারা মণ্ডপে থাকছে হাজারখানের কুপি। তবে আগুন নয়, আলো ছড়াবে কুপির মাথায় লাগানো টুনি বাল্ব।
শিকদারবাগানের প্রতিবেশী নলিন সরকার স্ট্রিটে শিল্পী সুতনু মাইতি বেছে নিয়েছেন ঘরের টিনের ঝুড়ি, ফাইবারের প্লেট-বাটিকে। মণ্ডপে এক দিকে যেমন থাকছে বাহারি রঙের বৈচিত্র, তেমনই ঝুড়ি বা বাটি-প্লেট দিয়ে তৈরি নানা ধরনের আকৃতি গড়ে তুলেছেন তিনি। কোথাও ঝুড়ির উপর ঝুড়ি সাজিয়ে গড়ে উঠেছে স্তম্ভ, কোথাও বা বাটি দিয়ে মালা গেঁথেছেন সুতনু।
পুজোকর্তারা জানাচ্ছেন, নানা ধরনের উপাদানে কাজ করার পরে শিল্পীরা এখন নিত্য দিনের চেনা জিনিস নিয়ে কাজ করতে চাইছেন। সে কারণেই বছর বছর বাড়ছে এমন ধরনের কাজ। কলকাতার উঠতি এক শিল্পীর মতে, “পুজোর কাজটা নিত্যদিনের কাজের বাইরে। তাই অন্য ধরনের উপকরণ নিয়ে পরীক্ষা করারও সুযোগ থাকে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.