বেপরোয়া মোটরবাইকের হেলমেটবিহীন উদ্দাম ‘র্যাট রেস’ বন্ধ করতে বলছে গণেশের বাহন। কলকাতার কংক্রিট-অরণ্যে ‘জেব্রা ক্রসিং’-এর বশ্যতা নিঃশর্ত ভাবে মেনে নিচ্ছে পশুরাজ সিংহ। রাতজাগা পুজো-পাগলদের সিগন্যালের রং চিনতে শেখাচ্ছে নিদ্রাহারা লক্ষ্মীপেঁচাটি। গাড়ি চালানোর সময়ে অযথা প্যাঁক-প্যাঁক এড়ানোর সুপরামর্শ সরস্বতীর হাঁসের। স্টিয়ারিং-এ বসে পেখম মেলা ময়ূরও শেখাচ্ছে সিটবেল্ট বাঁধার কার্যকারিতা।
পুজোর মুখে পথ-সচেতনতার এই পঞ্চতন্ত্র পেশ করছে কলকাতা পুলিশ। এখন পুজো শুরুর জন্য কেউ বোধনের পরোয়া করে না। দেবীপক্ষের গোড়ায় সাত-তাড়াতাড়ি পুজো উদ্বোধনের হাত ধরে শারদ-উত্সব এগিয়ে এসেছে। তাই কলকাতা পুলিশও পুজোয় বিশেষ পথ-শাসন আগাম চালু করছে। আগে যে বাড়তি পুলিশ সপ্তমী থেকে পথে নামত, তারা এ বার চতুর্থী থেকেই রাজপথে সজাগ। উত্সবের কলকাতায় বেড়ানো মসৃণ রাখার পাশাপাশি পুজোর আগেভাগে ‘পুজো স্পেশাল’ বিজ্ঞাপনেও নাগরিকদের চোখ টানার চেষ্টা চলছে। ফলে, বাইকবাজদের ‘মৃগয়াক্ষেত্র’ এজেসি বসু রোড উড়ালপুলে হোর্ডিংয়ে ‘র্যাটরেস’ বন্ধের হুঁশিয়ারি। স্কুল-হাসপাতাল এলাকায় হর্নরূপী অসুর দমনের বার্তা। ট্র্যাফিক কনসোল, গুরুত্বপূর্ণ মোড়, পথনির্দেশের গ্যান্ট্রি, বড় পুজোর লাগোয়া এলাকা বাছা হয়েছে। অজস্র হোর্ডিংয়ে দুর্গার সংসারের বাহনদের এই বার্তা শোভা পাচ্ছে। |
পুজোর জন্য ট্র্যাফিক-হোর্ডিং। ছবি: রাজীব বসু। |
ভাবনাটা ট্রাফিক-কর্তাদেরই। পেশাদার অ্যাড এজেন্সিকে দিয়ে ঝলমলে ছবিতে পুরো ভাবনাটা তুলে ধরা হয়েছে। যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) সুপ্রতিম সরকার বলেন, “পুজো এত বড় প্ল্যাটফর্ম। একসঙ্গে অনেকের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছবে। কলকাতা পুলিশই বা কেন বসে থাকবে!” তাই কাঠখোট্টা হুঁশিয়ারির থেকে একটু আকর্ষক ঢঙে বার্তা পৌঁছনোর উদ্যোগ পুলিশের। কিছু দিন হল সমকালীন নানা প্রসঙ্গ তুলে পথ-সচেতনতা প্রচারের ধারা শুরু হয়েছে শহরে। ‘কোলাভেরি ডি’, সচিন তেন্ডুলকরের কার্টুন ঠাঁই পেয়েছে পুলিশের পোস্টারে। কিছু দিন আগে বিটল্সের অ্যালবাম ‘অ্যাবে রোড’-এর কভারে জেব্রা ক্রসিং পেরোনোর ছবি দিয়েও পথচারীদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে কলকাতা পুলিশ।
টলিউডের খোকাবাবুকে মনে রেখে একটা ছড়া হয়েছিল, ‘খোকাবাবু যায়, হেলমেট কোথায়?’ লালবাজারের দাবি, বাচ্চাদের হেলমেট পরাতে অভিভাবকদের সচেতন করায় কাজে আসে ছড়াটি। কিন্তু বিটল্স-এর অ্যালবামের বিষয়টা আমনাগরিকদের অনেকেরই মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। এ বার পুজোর মুখে পুলিশ তাই বাঙালিয়ানার দিকে ঝুঁকছে।
এ নিয়েও মতান্তর আছে। বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ রাম রে-র কথায়, “ঠাকুরের বাহনদের ব্যাপারটা বাঙালিকে যতটা ছোঁবে, কসমোপলিটান শহরে অন্য ভাষাভাষীদের ততটা না-ও টানতে পারে। বিজ্ঞাপনে ছবি ও লেখা দু’টোই জরুরি।” তা ছাড়া, শুধু বিজ্ঞাপনে কতটা চিঁড়ে ভেজে? বিদেশের কোথাও কোথাও এর থেকে মোটা জরিমানার অর্থদণ্ড কি বেশি কার্যকর হত না? রামের মত, “কোনও প্রচার সফল হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকে। শুধু বিজ্ঞাপনকে দায়ী করা ঠিক নয়। তবে দেখতে হবে, বিজ্ঞাপনের চটকে বিষয়টা যেন খেলো না হয়ে যায়।”
কলকাতার ঠাকুর দেখা শুরু হতেই অবশ্য হোর্ডিংয়ে বাহনরা অনেকের চোখ টানছে। পুলিশের বক্তব্য, পুজোর পরেও আমেজটা বেশ কিছু দিন থাকে। তখনও বাহনদের বার্তা অপ্রাসঙ্গিক মনে হবে না কলকাতাবাসীর। |