হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে রাজ্য সরকারের শেয়ার কিনতে চেয়ে দরপত্র জমা পড়ল মাত্র একটি। সোমবার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম দফতরে আয়োজিত নিলাম-পর্বে দরপত্র জমা দেয় ইতিমধ্যেই পেট্রোকেমের ১৫ কোটি শেয়ারের মালিক ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি)। তবে এ দিন সেই দরপত্র খোলা হয়নি। একটি মাত্র দরপত্র জমা পড়ায় কোনও আইনি জটিলতা হবে কিনা, তা আগেই খতিয়ে দেখে নিতে চায় রাজ্য। ১০ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিগোষ্ঠী ও শিল্পোন্নয়ন নিগম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
হলদিয়া পেট্রোকেমে সরকারি শেয়ার কেনার ব্যাপারে প্রাথমিক আগ্রহ দেখিয়েছিল তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আইওসি, গেল, ওএনজিসি এবং দু’টি বেসরকারি সংস্থা রিলায়্যান্স, কেয়ার্ন ও এসার। শিল্পমহলের কেউ কেউ মনে করছিলেন, পেট্রোকেম কেনার জন্য ঝাঁপাতে পারে মুকেশ অম্বানীর সংস্থা। কারণ, পেট্রোকেম কিনে নিলে পলিমার দ্রব্যের বাজার রিলায়্যান্সের মুঠোয় চলে আসতে পারত। মুম্বইয়ে মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প সম্মেলনে মুকেশ অম্বানীর উপস্থিতি সেই জল্পনায় ইন্ধন জোগায়। কিন্তু পেট্রোকেম সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েও শেষ পর্যন্ত নিলামে যোগ দিল না তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এ দিন সকাল এগারোটা নাগাদ রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর তরফে শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তাদের ফোন করে এই খবর জানিয়ে দেওয়া হয়। কেন তাদের এই সিদ্ধান্ত, তা জানা যায়নি।
সোমবার সকাল থেকেই ক্যামাক স্ট্রিটে নিগমের দফতরে ছিল সাজসাজ রব। সাড়ে দশটার মধ্যে পৌঁছে যান মন্ত্রিগোষ্ঠীর চার সদস্য শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আসেন শেয়ার নিলামের পরামর্শদাতা সংস্থা ডেলয়েট এবং আইওসি-র প্রতিনিধিরা।
নিলাম প্রক্রিয়া কিছুটা এগোনোর পরে চার মন্ত্রীই চলে যান নতুন মহাকরণ নবান্নে। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গোটা পরিস্থিতি জানিয়ে পরামর্শ নিতে যান তাঁরা। ঘণ্টা দেড়েক পরে মন্ত্রীরা যখন ফেরেন, তখনও বোর্ড রুমে ডেলয়েটের প্রতিনিধি ও শিল্প দফতরের আমলাদের সঙ্গে আইওসি কর্তাদের বৈঠক চলছে। মন্ত্রীরা আর সেখানে যাননি। নিজেরাই আলোচনায় বসেন।
এর পর অন্য তিন মন্ত্রী চলে গেলেও পার্থবাবু দফায় দফায় শিল্প দফতরের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরে তিনি ফের বোর্ড রুমে যান। সংক্ষিপ্ত আলোচনার পরে জানিয়ে দেন, এ দিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ১০ অক্টোবরের মধ্যে। নিগম সূত্রের খবর, একটিই সংস্থা দরপত্র দেওয়ায় কোনও আইনি জটিলতা থাকছে কি না, ডেলয়েটকে তা খতিয়ে দেখতে বলেছে রাজ্য।
তবে সরকারের এই অবস্থানে খুশি নয় আইওসি। সংস্থা সূত্রে বলা হচ্ছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি করার কোনও যুক্তিই নেই। যদিও সরকারি ভাবে মুখ খুলতে নারাজ আইওসি কর্তৃপক্ষ। সংস্থার পেট্রোপণ্য বিভাগের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর সিদ্ধার্থ মিত্র দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, “আমার কাছে সম্পূর্ণ তথ্য আসেনি। তাই এই মুহূর্তে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”
এ দিকে, এ দিনই পেট্রোকেমের আর্থিক সঙ্কট নিয়ে রাজ্যকে চিঠি লিখলেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুমন্ত্র চৌধুরী। সূত্রের খবর, তিনি জানিয়েছেন, ন্যাপথা কেনার টাকা নেই। বকেয়া ৩৭০ কোটি টাকা না-মিটিয়ে দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। যে সংস্থা শেয়ার কিনবে, রাজ্য যেন তাদের কাছেও অর্থ সংস্থানের জন্য আর্জি জানায়। শিল্পমহলের মতে, কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে শেয়ারের দাম আরও পড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের ঝুলিতে কম টাকা আসবে। |