ভিড় সামলাতে রামপুরহাটে দাওয়াই এ বার মালয়ালম
ক কিশোর বালক সমবেতদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল, ‘সুস্বাগতম’। উপস্থিত সকলেই তাকে একই প্রত্যুত্তর দিল। পাশ থেকেই আর এক কিশোর তখন বলে উঠেছে, ‘নান্নি’। সকলের সমবেত উল্লাস ‘নান্নি’। একদল কিশোরকিশোরীর মাঝে বসে থাকা এক যুবক এ বারে বললেন, “আচ্ছা এ বার তোমাদের বলতে বলা হল ‘আস্তে চলুন’, বল তো তোমরা কী বলবে?” সমবেত কিশোরদের ঝটপট উত্তর, “পাথু কে পকুকা।”
অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি দিয়ে চলছে রামপুরহাটের নবীন সঙ্ঘের মণ্ডপসাজ্জা। ছবি: অনির্বাণ সেন।
মালয়ালম ভাষার এই কথোপকথন সড়গড় করাটাই গত কয়েক দিন ধরে কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে অষ্টম শ্রেণির অভিরূপ, অরিজিৎদের। রামপুরহাট বিবেকানন্দ রোডের ‘তরুণের আহ্বান’ পুজো কমিটির এ বারের থিম যে ‘কেরালার সংস্কৃতি’! আর তাই সকলে এক জায়গায় জড়ো হয়ে ছোট একটি ডায়েরির পাতায় লিখে রাখা কথোপকথন নিয়ে চর্চা করাটাই এখন দিনরাতের একটা বড় কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই ক্লাবের সদস্যদের। ক্লাবের সদস্যদের যুক্তি, পুজার মণ্ডপের ভিড় সামাল দিতে কিংবা মাইকে নিজেদের ক্লাবের পরিচিতির কথা ঘোষণা করার জন্য মালয়ালম ভাষা না বললে, থিমের সঙ্গে মানায় না। তাই ক্লাবের ছোটবড় দশ-বারো জন সদস্যের এখন ধ্যানজ্ঞানই হচ্ছে, কী করে কেরালা সংস্কৃতির ধাঁচে তৈরি প্রতিমা ও মণ্ডপ দর্শনার্থীদের জন্য মালয়ালম ভাষায় কথা বলে মণ্ডপের ভিতর কেরালার পরিবেশ ফুটিয়ে তোলা যায়। ক্লাবের সম্পাদক কৃষ্ণ চৌধুরী জানালেন, “কর্মসূত্রে কেরালা ছিলাম। সেখানকার পরিবেশ, সংস্কৃতিকে কীভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, তার জন্য সেখানকার কয়েকজন বন্ধুর সাহায্য নিয়েছি। তাদের কাছ থেকেই মালয়ালম ভাষায় কয়েকটি কথোপকথন বাংলায় রূপান্তর করে ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে কয়েকজনকে তালিম দেওয়া হচ্ছে।” মণ্ডপের বাইরে আরানমুলা পার্থসারথী মন্দিরের আদলে সুউচ্চ গেট করা হচ্ছে। সেখানে কেরালার বিখ্যাত কুচিপুরি নৃত্যরতা মাটির তৈরি দুই নৃত্যশিল্পীকে বসানো হবে। কেরালার নারকেল গাছের বনের পরিবেশ মণ্ডপের ভিতর ফুটিয়ে তুলতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, ‘সুন্দরী বাংলা’কে থিম করে পুজো মণ্ডপ সাজাচ্ছে রামপুরহাট নবীন ক্লাব। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে বর্ধমানের শালি ধান, সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ ও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, বীরভূমের বাউল, পুরুলিয়ার ছৌ, কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল, পশ্চিম মেদিনীপুরের দিঘার ঝাউবন, বাঁকুড়ার টেরাকোটা ও পোড়ামাটির কাজ, সরাশিল্প ও দার্জিলিঙের চা। মণ্ডপের ভিতরে সুন্দরী বাংলার রূপ এনে সুউচ্চ পাহাড়ের গুহায় দুর্গা এখানে আদিবাসী মূর্তিতে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে দুর্গা একের পর এক অসুরকে বধ করেছেন। শেষমেশ পাহাড়ের গুহা-গহ্বর থেকে অসুররাজ মহিষাসুর বেরিয়ে আসতেই দুর্গার বাহন সিংহের সঙ্গে লড়াই করার ফাঁকে আদিবাসী মহিলা রূপে দেবী দুর্গা এখানে অসুরকে সংহার করেছেন। মণ্ডপের ভিতরে সুন্দরী বাংলার রূপ এবং দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিকের আদিবাসী মূর্তি দর্শন করার আগে অবশ্য নজর কাড়বে মণ্ডপের বাইরে ছোটবড় নানা মাপের অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি হাঁড়ির সুউচ্চ গেটটিও। কেরালার সংস্কৃতি আর সুন্দরী বাংলার রূপের পাশাপাশি রামপুরহাট মহাজন পট্টী ও মিতালী সঙ্ঘের পুজো দু’টি এ বারে ৫০ বছর উদযাপন করছে। দু’ই পুজো কমিটিই তাদের আয়োজনে অভিনবত্ব ও জাঁকজমক এনেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.