সম্মোহন-ডানায় পার ওড়ার আতঙ্ক
তঙ্ক, উদ্বেগ, অস্বস্তি দেশে ফেরার পথে এগুলিই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রায় আঠারো মাস পর ফিরল সে। আর এ যুদ্ধ জয়ে অন্যতম হাতিয়ার সম্মোহন বা হিপনোসিস। উড়ান-আতঙ্ক কাটিয়ে জো টম্পসনকে ব্রিটেনে ফেরাতে ‘হিপনোসিস’-এরই সাহায্য নিয়েছেন তার বাবা-মা। তাতে পুরো সুরাহা না হলেও বিমান-সফরের ভয় অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল জো।
আজ্ঞে হ্যাঁ, বিমান-সফরে ভয়। বা পোশাকি ভাষায়, ‘উড়ান আতঙ্ক’। এর সৌজন্যেই গত আঠারো মাস ধরে আবু ধাবিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আটকে থাকতে হয়েছে জো-কে। দেশে ফেরার বিমানে যখনই ওঠার চেষ্টা করেছে সে, তখনই অস্বাভাবিক আতঙ্ক, উদ্বেগ, অস্বস্তি ঘিরে ধরেছে জো-কে। পরিস্থিতি এতটাই সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়ায়, যে প্রত্যেক বারই তাকে বিমান থেকে নামিয়ে দিতে বাধ্য হন কর্মীরা। ছেলেকে একা রাখা সম্ভব নয় জেনে বাবা টোনি টম্পসনও তার সঙ্গে প্রায় এক বছর ধরে আবু ধাবিতে বন্ধুর বাড়িতে থাকছিলেন। কিন্তু চাকরি না থাকায় উপার্জন বলতে প্রায় কিছুই ছিল না। কায়ক্লেশে কাটছিল দিন। পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল দুশ্চিতাও। ছেলে কি তবে আর ফিরতে পারবে না?
কিন্তু অবশেষে ফিরল ছেলে। যার মূল কৃতিত্ব ‘হিপনোথেরাপিস্ট’ রাসেল হেমিংসেরই প্রাপ্য, বলছেন জো-এর বাবা-মা। সম্মোহিত করে জোকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নিয়ে আসা এমনকী, বিমানে তোলার কাজটিও সারেন রাসেল। তবে এর পরেই বাধে গণ্ডগোল। সম্মোহনের প্রভাব কাটতে শুরু করলে জো ক্রমশ সেই চেনা ভয়, অস্বস্তি, আতঙ্ক অনুভব করতে শুরু করে। তবে এ বার কিছুটা জোর করেই বিমান-সফর করেছে জো। দেশে ফেরার তাগিদ সব ভয়কে পিছনে ফেলে দিয়েছে।
বাস্তবিক। ২০০৯ সাল থেকে বাবার কাজের সূত্রে আবু ধাবিতে যেতে হয় জোকে। ২০১২-র জুনে সেখানকার কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় টোনি টম্পসনের। শুরু হয় দেশে ফেরার তোড়জোড়। টিকিট কাটা, গোছগাছ সব শেষ। কিন্তু দেশের বিমানে উঠতেই মাত্রাছাড়া আতঙ্ক চেপে বসে জো-এর মনে। নেমে যেতে বাধ্য হয় সে।
কিন্তু অতীতে এ রকম কোনও সমস্যা ছিল না তাদের ছেলের, দাবি বাবা-মার। এমনকী, কোনও ভয়াবহ দুর্ঘটনা যার ফলে এই আতঙ্কের সূত্রপাত হতে পারে, সে রকম কিছুই ঘটেনি জো-এর জীবনে। হঠাৎ কেন এ রকম ঘটল, তা নিয়ে ধন্দে থম্পসন পরিবার।
জো-এর ফ্লায়িং-ফোবিয়ার প্রথম লক্ষ্মণ ফুটে ওঠে গত বছর মার্চে। ব্রিটেন থেকে আবু ধাবিতে ফেরার বিমান ধরতে গিয়ে জো বলতে শুরু করে, “বড্ড লম্বা সফর।” সেই চাপেই শেষমেশ দু’বার বিমান পাল্টে আবু ধাবিতে এসে পৌঁছয় মা ও ছেলে। সেই শুরু। জুন মাসের পর থেকে অন্তত চার বার ব্রিটেনে ফেরার টিকিট কাটেন টোনি থম্পসন। কিন্তু প্রতি বারই বিধ্বস্ত ছেলের সঙ্গে আবু ধাবি বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফিরে আসতে হয় তাকে। শুধু তাই নয়, রাগবি টুর্নামেন্ট উপলক্ষে শ্রীলঙ্কায়ও যাওয়ার কথা ছিল বাবা-ছেলের। বিমানে উঠে সে বারেও একই অবস্থা। সেখান থেকেই মায়ের সঙ্গে ছেলেকে আবু ধাবির বন্ধুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন টোনি। বাকি চল্লিশ জন ছেলেকে নিয়ে তাঁকে উড়ে যেতে হয় শ্রীলঙ্কা।
জাহাজেও জো-কে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন টোনি। জাহাজ ছাড়ার কথা ছিল সৌদি আরবের জেড্ডা বন্দর থেকে। কিন্তু সে দেশের কর্তৃপক্ষ কিছুতেই টম্পসন পরিবারকে সৌদি আরবে ঢোকার ভিসা দেননি। অতএব বন্ধ জলপথও। সম্মোহনের পাখায় আকাশপথেই তাই আতঙ্কের সফর করল জো। দেশের মাটি ছুঁয়ে অবশ্য সে আতঙ্কের লেশমাত্র নেই। হাসি মুখে বলল সে, “বাড়ি ফিরে ভীষণ আনন্দ লাগছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.