মালালার নোবেলের জন্য প্রার্থনা বন্ধুদের
বিষ্যতে রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে। নিজের দেশে শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে চায় সে।
যে শিক্ষার জন্য তালিবানের গুলিও খেতে হয়েছে তাকে, সেই শিক্ষা পাকিস্তানের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে রাজনীতিতে আসাটাই একমাত্র পথ বলে মনে হয়েছে সোয়াটের সাহসিনী মালালা ইউসুফজাইয়ের। সেই মেয়ে এ বার নোবেল শান্তির জন্য মনোনয়ন পেয়েছে। আর তার জন্য প্রার্থনা করছে তার দেশের বন্ধুরা। কিন্তু সেই বন্ধুদের মালালার মতো সৌভাগ্য হয়নি। তাই ওরা নিঃশব্দে স্বপ্ন দেখে। কেউ যেন জানতে না পারে, যে ওরা চায় মালালা নোবেল শান্তি পুরস্কার পাক।
গত বছর এই অক্টোবর মাসেই তালিবানের গুলিতে প্রায় মরতে বসেছিল ওদের লড়াকু বন্ধু। সোয়াটে মালালার বহু দিনের বন্ধু সাফিয়ার মনে কোনও সন্দেহ নেই যে শুক্রবার তার বন্ধুই নোবেল পাবে। সোয়াটের প্রধান শহর মিঙ্গোরার একটি হাইস্কুলে পড়ে সাফিয়া। বাকি মেয়েদের দল থেকে আত্মবিশ্বাসী মেয়েটি এগিয়ে আসে। ঝরঝরে ইংরেজিতে বলে, “মালালা নোবেল পাওয়ার যোগ্য।” মালালা যেমন শিশুদের শিক্ষার অধিকারের কথা বলে, সাফিয়াও তাই। তার কথায়, “একটা চাকা দিয়ে তো আর সাইকেল চলে না। সমাজ একটা সাইকেলের মতো। প্রথম চাকাটা যদি হয় ছেলেদের শিক্ষা, পরেরটা তবে মেয়েদের।”
সোয়াটে এখনও তালিবানের প্রভাব যখন তখন বুঝতে পারে সাফিয়ারা। কিন্তু ওরা চায় না, ওদের এলাকাটা তালিবান-অধ্যুষিত বলে শিরোনামে আসুক। তাই ১৪ বছরের আর এক কিশোরী রেহানা নুর বাচা বলে, “মালালা আমাদের অনুপ্রেরণা। শুধু আমাদের জন্য নয়, গোটা পাকিস্তানে ও একটা নজির তৈরি করেছে।” ২০১১ সাল থেকে সোয়াটে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু সঙ্কট অন্য জায়গায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এক হাজার শিক্ষিকা প্রয়োজন দেশে। আর মেয়েদের জন্য দু’শোটা ক্লাসরুম। সে সবের জোগান কোথায়? তালিবানের দাপট পেরিয়ে কবে সোয়াট এত জন শিক্ষিকা পাবে, প্রশ্ন সাফিয়া-রেহানাদের। তার চেয়েও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এত ছোট বয়সেই সাফিয়ারা বুঝে ফেলেছে। মালালা যদি নোবেল জেতেও, তাতেই বা কি? পাকিস্তান তাতে কতটুকু বদলাবে? সাফিয়া জানে, তার দেশে পরিবর্তন আসতে আরও তিন প্রজন্ম কেটে যাবে। মালালা নিজেই তাই বলে, “পাকিস্তানের মানুষ এক দিন স্বাধীন হবে, আমি আশা রাখি। প্রত্যেকে নিজেদের অধিকার ফিরে পাবে। শান্তি আসবে। প্রত্যেকটি ছেলের মতো প্রত্যেকটি মেয়েও স্কুলে যাবে।”
তালিবান-সমস্যা সমাধানে মালালা চায়, তাদের সঙ্গেই আলোচনা চালানো হোক। একটি ব্রিটিশ চ্যানেলের সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সে বলেছে, “আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছুই হয়। তবে এটা আমার কাজ নয়। সরকারের কাজ। আমেরিকারও কাজ। ইসলামের নামে মানুষ খুন, তাদের অত্যাচার করা ছাড়ুক তালিবান। ইসলামে এমনটা বলা নেই।” তালিবান জঙ্গিরা কিন্তু মালালার এ সব কথায় কান দিতে নারাজ। আজও ফের তাদের কাছ থেকে খুনের হুমকি পেয়েছেন সোয়াটের সাহসিনী।
সোয়াটে মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন দিলশাদ বেগম। তিনি বলছেন, পশতুন সমাজে মেয়েদের এগিয়ে আসাটা কেউই ভাল চোখে দেখে না। তাই মালালাকে নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন দিলশাদ। তাঁর কথায়, “যাঁরা মনে মনে মালালাকে সমর্থন করেন, তাঁরাও মুখ খোলেন না। আশা আছে। তার পাশে ভয়টাও কিন্তু রয়েই গিয়েছে।” মালালা নিজে কিন্তু নিজের দেশের সমস্যাটা জানে। তাই সে বলে, “সবাই ভাবছে, আর কেউ এসে কাজটা করে দেবে। কেউ নিজে আর এগোয় না।”
সে এগিয়েছে। নোবেল জয়ের পরে তাদের দেশ কত দূর এগোয়, অপেক্ষায় মালালার বন্ধুরা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.