পাক সন্ত্রাস বিরোধিতায় ভারতের পাশে তুরস্ক
ন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে কণিষ্কের দেশ থেকে একটি বড় কূটনৈতিক সমর্থন আদায় করে আজ গভীর রাতে দেশে ফেরার বিমানে উঠলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
সীমান্তপারের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কৌশলগত ভাবে তুরস্ককে এই প্রথম পাশে পেল নয়াদিল্লি। আজ এই দেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা গুল এবং প্রধানমন্ত্রী এদওহানের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাস নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন। তাতে সাড়া দিয়েছে ইস্তানবুল। প্রণববাবুর কথায়, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার পূর্বশর্তই হল, সে দেশের মাটিতে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের পরিকাঠামো ধ্বংস করতে হবে (এই শর্ত দিয়ে আলোচনা শুরু হলেও ভারত অবশ্য বরাবরই কথা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে)। বৈঠকের পর বিদেশ মন্ত্রকের কর্তা রাঘবন জানান, “তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, অনেক দেশই অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস সামলাতে পারে না।
আগে আপনি। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। সোমবার আঙ্কারায়। ছবি: পিটিআই।
আমরা আশা করব, পাকিস্তান তার ভূখণ্ডে তৈরি হওয়া সন্ত্রাস সামলাতে পারবে। তিনি এ-ও বলেছেন, পাক সন্ত্রাসবাদীরা যে ভাবে নিজেদের দেশেও হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালাচ্ছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ভারতীয় বিদেশনীতির ক্ষেত্রে বড় মাইলফলক। ঠান্ডা যুদ্ধের আগে থেকেই পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে তুরস্কের। রাষ্ট্রপুঞ্জে কাশ্মীর সংক্রান্ত প্রস্তাবে তুরস্ক একাধিক বার ভারতের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, এ কথাও সত্যি। কিন্তু আজকের বাণিজ্যনির্ভর বিদেশনীতিতে ভারতকে পাশে পাওয়াটাও ইস্তানবুলের কাছে জরুরি। মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য ভারত-পাক সুসম্পর্ক চায় তারা। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, আজকের বৈঠকে প্রণববাবুর কাছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে জেহাদ ঘোষণা অবশ্যই করেনি তুরস্ক। কিন্তু ভারতীয় রাষ্ট্রপতির পাক-সন্ত্রাস বিরোধী বক্তব্যকে স্বীকৃতি দিয়ে, কূটনৈতিক সমীকরণের এক নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, আফগানিস্তানের মাটিতে ভারতের কার্যকলাপকে আজকের বৈঠকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেছে তুরস্ক। কাবুলে ভারতীয় উপস্থিতি নিয়ে এর আগে ধারাবাহিক ভাবে সরব হয়েছে ইসলামাবাদ। কিন্তু আজ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী পাক আপত্তিকে কার্যত আমল না দিয়ে নতুন আফগানিস্তান গঠনের জন্য ভারতকে আহ্বান জানিয়েছেন। বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে আফগানিস্তান তথা মধ্য এশিয়ায় পরিকাঠামো ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে সামিল হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। প্রণববাবুর সুরে সুর মিলিয়ে তুরস্কের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের কোনও দেশ-জাতি-ধর্ম নেই।’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ১৯৯৪ সালে দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে সমঝোতার যে খসড়া তৈরি হয়েছিল, এ বার তাকেও হিমঘর থেকে টেনে বের করেছে ভারত। আজকের বৈঠকে স্থির হয়েছে, খুব শীঘ্রই এই চুক্তি বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করবে দুই দেশ।
যিশুর জন্মের দীর্ঘদিন আগে থেকেই যে দুই সভ্যতার যোগাযোগের সূচনা, তা যেন কিছুটা অবহেলিত থেকে গিয়েছিল স্বাধীন ভারতের বিদেশনীতিতে। সময়ের ধুলো ঝেড়ে তুরস্কের সঙ্গে সেই সভ্যতাপ্রাচীন সম্পর্কের নতুন এক সূচনা এ ভাবেই করা হল রাষ্ট্রপতির দৌত্যের মাধ্যমে। বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়েছে, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় আদান-প্রদান সংক্রান্ত ৬টি চুক্তিপত্র দ্বিপাক্ষিক প্রতিনিধিস্তরে সই হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মহাফেজখানা, টিভি ও রেডিও) পাঁচটি প্রোটোকল সই হয়েছে।
তুরস্কে পা দিয়ে সাম্প্রতিক ভূ-রাজনীতিক কৌশল নিয়ে সরব হওয়ার পাশাপাশি ইতিহাসেও কিন্তু ডুব দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ইতিহাস থেকে প্রেরণা খুঁজে নিয়ে ভবিষ্যতের সঙ্গে তাকে যুক্ত করেছেন সুকৌশলে। গত কাল সন্ধ্যায় এই দেশে ভারতীয় নাগরিক এবং বংশোদ্ভূতদের (যার সংখ্যা খুবই কম) উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় অতীত খুঁজেছেন তিনি। কণিষ্কের বংশগৌরবের কথা, কী ভাবে কলহন তাঁর ‘রাজতরঙ্গিনী’ গ্রন্থে মধ্য এশিয়ায় কণিষ্কের একাধিপত্যের বর্ণনা দিয়েছেন, সেই কথা এখানকার ভারতীয়দের জানিয়ে তাঁদের যেন কিছুটা উদ্দীপ্ত করার চেষ্টাও করলেন তিনি। প্রণববাবুর কথায়, “রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ইউরোপীয়রা একদা ঠাট্টা করে বলত, তুরস্কবাসীরা বৃদ্ধ অশক্ত এক মানুষের মতো, যার মৃত্যু হতে সময় লাগছে। কিন্তু তুর্কিরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, এটা সত্য নয়।” আধুনিক তুরস্কের রাষ্ট্রপিতা কামাল আতাতুর্ক-এর কথা স্মরণ করে, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর কথায়, “অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আতাতুর্ক-এর লড়াই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ভারতও সেই সময়ে অর্থ দিয়ে সেই সংগ্রামের পাশে দাঁড়িয়েছিল।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.