পুবে তাকানো তুরস্ককে কাছে টানছে দিল্লি
নিশ শতকের মধ্য ভাগে এসে ইস্তানবুলের সৌন্দর্য এবং জীবনপ্রাচুর্যে মজেছিলেন ফরাসি সাহিত্যিক গুস্তভ ফ্ল্যবেয়র। লিখেছিলেন, এক দিন এই শহর বিশ্বের রাজধানী হবে।
এখানকার ভূমিপুত্র ওরহান পামুক তাঁর উপন্যাসে শুনিয়েছেন অন্য এক ইস্তানবুলের গল্প। তাঁর মতে, ফ্লব্যেয়রের ভবিষ্যৎবাণী ব্যর্থ। বিশ্ব ভুলে মেরে দিয়েছে ইস্তানবুলকে! অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের প্রায় দু’দশক পরে জন্ম নেওয়া পামুক তাঁর শৈশবেও যে শহরকে দেখেছেন, পরবর্তী সময়ে তাকে নিতান্ত ‘বিষন্ন ও বিধ্বস্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
পামুকের শৈশবের সেই ‘সাদা কালো’ দেশটি দীর্ঘ দিন পর্যন্ত ইউরোপের ঘনিষ্ঠ হয়েই ছিল। কিন্তু তার পরে গত কয়েক বছরে নিঃশব্দে তার অন্দরে একটা বদল এসেছে। ভারতীয় রাষ্ট্রপতির বিশেষ বিমান আজ বিকেলে যে শহরটির টারম্যাক স্পর্শ করল, তার রাস্তা-বাজার-বসফরাস সমুদ্রের বাতাসে সেই বদলের বার্তাই স্পষ্ট। পাহাড়ের গায়ে গড়ে উঠেছে এক চোখ জুড়নো শহর। যেখানে মসজিদের পাশেই জায়গা করে নিয়েছে আকাশচুম্বী বাড়ি। ইতালির সাম্প্রতিকতম ব্র্যান্ডগুলির বিজ্ঞাপনে সেজেছে পাহাড়। আসলে স্বনির্ভর মধ্যবিত্ত বাণিজ্যিক শ্রেণির উত্থানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশটি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পশ্চিমের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার দীর্ঘদিনের নীতি থেকে সরে এসে। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে উদার এবং আধুনিক এক মুসলিম মননের হাত ধরে। এবং এ সব করতে গিয়েই তাদের নজর পড়েছে এশিয়ার দিকে। এ এক নতুন তুরস্ক। বেলজিয়াম সফর শেষ করে আজ এই নতুন তুরস্কে এসে তাকে কাছে টানার বার্তা দিয়ে এক ঢিলে অনেকগুলি কূটনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করলেন রাষ্ট্রপতি।
কী সেই লক্ষ্য? প্রথমত, তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্য বিনিয়োগ বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সূত্র খোঁজা। দ্বিতীয়ত, গোটা মধ্য এশিয়ার শক্তি ভাণ্ডারের দরজা হিসেবে ইস্তানবুলকে ব্যবহার করা। ভারত জানে যে, ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাহরের পথে তেল এবং গ্যাস আনার কোনও পরিবর্ত পথ তৈরি করতে হলে তুরস্ক ছাড়া গতি নেই। তৃতীয়ত, ভারতের আফগান-নীতিতে তুরস্ককে পাশে পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক দৌত্য জোরদার করা।
এই তৃতীয় কাজটিই আপাতত সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বলে মনে করছে ভারত সরকার। কারণ আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের সময় প্রায় এসেই গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও এক মাত্র যে দেশের সেনা তখনও সেখানে থেকে যাবে, তার নাম তুরস্ক! প্রণববাবুর সফরের আগেই বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে সাউথ ব্লকে। আজ রাষ্ট্রপতি প্রণববাবু এখানে এসে বলেছেন, “আফগানিস্তান তথা মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক সুস্থিতি এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে তুরস্ক যথেষ্ট আগ্রহী। তুরস্কের সংস্থাগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আফগানিস্তানে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলতে আগ্রহী ভারতীয় সংস্থাগুলি।” তাঁর কথায়, “আফগানিস্তানের মূল সমস্যা হল সন্ত্রাস। যা সে দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। তার মোকাবিলা করতে হবে দৃঢ় ভাবে।”
সন্ত্রাস প্রসঙ্গে ব্রাসেলস-এই সরব হন প্রণববাবু। সেই প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে যথেষ্ট কড়া সুরেই সন্ত্রাস মোকাবিলায় সক্রিয় হতে বলেছিলেন তিনি। আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমরা বারবার পাকিস্তানকে বলে আসছি যে, তাদের জমিকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার না-করার ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি ইসলামাবাদ দিয়েছিল, তা তারা পালন করুক। আমরা দেখতে চাই, তাদের মাটিতে জঙ্গি নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তান দৃঢ় পদক্ষেপ করছে।” পাকিস্তানকে আক্রমণ করায় আজ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সীমান্ত নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তুলে তুরস্কের সঙ্গে ভারতকে একই লাইনে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। সন্ধ্যায় ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট খেতাব দেওয়া হল। সে অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সীমান্তে শান্তি না থাকলে উন্নয়ন ও প্রগতির পথে হাঁটা যে সম্ভব নয়, সে কথা যথেষ্ট দাম দিয়ে বুঝেছি আমরা। আমরা দু’দেশই জানি যে, বাইরের ও ভিতরের চ্যালেঞ্জ কী ভাবে আমাদের নিরাপত্তাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।”
দীর্ঘ দিন ধরেই তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জোর দেয়নি সাউথ ব্লক। তার কারণ হিসেবে বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, তুরস্ক বরাবরই ইউরোপের ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছে। তাই ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে কাছে টানার ব্যাপারে বরবরই কিছুটা উদাসীন ছিল তারা। কিন্তু অনেক চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত তারা যখন বুঝতে পেরেছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুরস্ককে সদস্যপদ দেবে না (অনেকেই মনে করেন, তুরস্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম বলেই সম্ভবত এমন সিদ্ধান্ত ইইউ-র) তখন পূর্ব দিকেও তাকাতে শুরু করেছে ইস্তানবুল। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে কামাল আতাতুর্কের দেশকে কাছে টানার কাজটি শুরু করেলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.