সুইচ অন করতেই ভারতের বিদ্যুৎ ঢুকল বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে। একই সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে শিলান্যাস করা হল বাংলাদেশে বাগেরহাটের রামপালে ভারতের আর্থিক সহযোগিতায় প্রস্তাবিত ১,৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পেরও। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকলেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব শুধু আরও দৃঢ় হল তা-ই নয়, দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন একটি মাত্রা যোগ হল।” আজকের দিনটিকে প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক দিন বলেও মন্তব্য করেছেন।
সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভিডিও সম্মেলন শুরু হয়। পৌনে ১২টা নাগাদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইচ অন করতেই ভারত থেকে ১৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঢোকে বাংলাদেশের গ্রিডে। তার ফলে নেপাল, ভুটানের পর বাংলাদেশের সঙ্গেও সংযোগ তৈরি হল ভারতের জাতীয় গ্রিডের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য ন্যায্য মূল্যে উন্নতমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরিকল্পনা নিয়েছে তাঁর সরকার। সেই লক্ষ্যে ওই সময়ের মধ্যে তাঁর সরকার ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বলে স্থির করেছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক গ্রিডের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলি থেকেও সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হবে বলে হাসিনা জানান। |
কুষ্ঠিয়ার অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার পাশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা।
ভিডিও সম্মেলনে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও।—নিজস্ব চিত্র। |
পাঁচ বছর আগে বিদ্যুতের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয় বাংলাদেশে। ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং ছাড়াও বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন কাট-ছাঁটে বাধ্য হয় বিভিন্ন কল-কারখানা। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয়। হাসিনার দিল্লি সফরের সময়েই দু’দেশের মধ্যে শক্তি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তাতে ঠিক হয় বাংলাদেশ ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে। এর মধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেবে এনটিপিসি। বাকি ২৫০ মেগাওয়াট ভারতের অন্য যে কোনও সংস্থার কাছ থেকে কিনবে বিদ্যুৎ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ পর্ষদ। ঠিক হয়েছে, বাকি এই ২৫০ মেগাওয়াট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা বিক্রি করবে। যদিও আজ থেকে যে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে যাচ্ছে তা পুরোটাই এনটিপিসি-র।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠাতে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ৪০০ কেভির সাবস্টেশন তৈরি করেছে ‘পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন’। বাংলাদেশের দিকে সাবস্টেশন হয়েছে ভেড়ামারায়। বিদ্যুৎ মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, বাংলাদেশ এখন ১৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিতে পারছে। পরে তা বাড়ানো হবে।
রামপালে ‘মৈত্রী’ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি গড়ে তুলবে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি। এনটিপিসি এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদ যৌথ উদ্যগে এই সংস্থাটি তৈরি করেছে। যদিও সুন্দরবন লাগোয়া অঞ্চলে এই প্রকল্পটির বিরোধিতা করে পরিবেশ কর্মীদের একাংশ আন্দোলন শুরু করেছে। আজকের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়তে পরিবেশ রক্ষার দিকটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “সুন্দরবন আমাদের দু’দেশেরই ঐতিহ্য।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে এমন কোনও প্রকল্পের অনুমোদন আমাদের সরকার দেয়নি, দেবেও না।” যদিও আজই সিলেটে এক জনসভায় বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া জানিয়েছেন, রামপালে তাঁরা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে দেবেন না। |