হাডসনের পাড়ে এ বার এক চিলতে কলকাতা
হুগলি থেকে হাডসন কত দূর?
এ গ্রহের দুই প্রান্তের দুই নদীকে জুড়ে দিল আমাদের হাওড়া ব্রিজ। এত দিন হুগলির বুকে দীর্ঘ ছায়া ফেলা ইস্পাতের কিংবদন্তি এ বার হাজির হচ্ছে হাডসনের তীরে। নিউ ইয়র্কের ওই নদীর পাড়ে সুরম্য অনুষ্ঠানস্থল ‘পিয়ার সিক্সটি’। দেবীপক্ষে তার উঠোন জুড়ে থাকবে কলকাতা।
হাওড়া ব্রিজের ক্ষুদ্র সংস্করণটি হবে তার মধ্যমণি। আর থাকবেন সপরিবার দুগ্গাঠাকুর।
আমেরিকার ‘থিম পুজো’র গল্প এটা নয় কিন্তু। বরং একে বলা চলে, হাডসনের তীরে বাঙালিয়ানার উদ্যাপন। আমেরিকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত অনাবাসী ভারতীয় মহিলাদের এক সংগঠন বছরভর কাজ করে ভারতের দুঃস্থ শিশুদের জন্য। ১৩ অক্টোবর সন্ধেয় তাদেরই বার্ষিক পার্বণ। চলতি বছরে যার থিম কলকাতা। তাই অনুষ্ঠানের পোশাকি নাম ‘ভিভা কলকাতা’ কলকাতা জিন্দাবাদ!
বাংলায় তখন বিজয়া দশমীর সকাল। নিউ ইয়র্কের হিসেবমতো নবমীর সন্ধেয় পিয়ার সিক্সটির উৎসবে ঢোকামাত্রই পড়তে হবে দুর্গাঠাকুরের সামনে। প্রতিমা মেড ইন কুমোরটুলি। তবে বিমানযোগে তাঁর আগমন এ বছরে হয়নি। প্রতিমাটি পাওয়া গিয়েছে আমেরিকার একটি মন্দিরের সৌজন্যে। পুজোর আবহ, বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া, বাঙালি খানায় রসনাতৃপ্তির সুযোগ এক কথায় মিনি কলকাতা জমজমাট!

যোগেন চৌধুরীর ছবি।
উদ্যোক্তারা অবশ্য শুধু কলকাতার আদল গড়েই সন্তুষ্ট নন। আজকের বাংলার অন্যতম সেরা তিনটি ব্র্যান্ডের আবাহনেও মজতে চলেছে নিউ ইয়র্ক। সাগরপারের ডাকে শিল্পী যোগেন চৌধুরী একটি নতুন ছবির জন্য রং-তুলিতে হাত দিয়েছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর সই করা ব্যাট-বল পাঠিয়েছেন। সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় পাঠিয়েছেন তাঁর সৃষ্টি একটি বিশেষ শাড়ি। কালোর ওপর সোনালি কাজ করা এই মটকা শাড়িটি পরেই এ বারের কান চলচ্চিত্র উৎসবের লাল কার্পেটে হেঁটেছিলেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন (ঘটনাচক্রে, যাঁর স্বামী অভিষেক কিন্তু আধা-বাঙালি)! ১৩ অক্টোবরের সন্ধেয় পিয়ার সিক্সটি-তে নিলামে উঠবে বাংলার এই তিন উপহার। নিলামে সংগৃহীত টাকা খরচ হবে ভারতের দুঃস্থ শিশুদের উন্নয়নে।
ভারতের স্মারক আগেও উঠেছে এই নিলামে। গত বার এসেছিল ধোনির টিম ইন্ডিয়ার ক্রিকেটবীরদের সই করা ব্যাট। বাংলার উপহার ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা একটি ছবি। বেগুনি ফুলের সেই ছবি, ‘ফ্লাওয়ার পাওয়ার’ বিকোয় ৩০০০ ডলারে। এ বছর সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন যোগেন, সৌরভ ও সব্যসাচী।
যোগেনবাবু আপাতত পনেরো বাই পাঁচ ফুটের একটি সুবিশাল ছবির কাজ শেষ করতে ব্যস্ত শান্তিনিকেতনে। কিন্তু নিউ ইয়র্কের সংস্থাটির আবদারে সময় ঠিক বার করে নিয়েছেন। দু’দিন আগের সন্ধেয় কালো কালি ও প্যাস্টেলে হাওড়া ব্রিজের স্কেচ শেষ করেছেন। প্রবীণ শিল্পী বলছিলেন, “কলকাতা বললে এখনও হাওড়া ব্রিজের ছবি ভাসে। আমারও অনেক দিন বাদে হাওড়া ব্রিজ আঁকা হল। বছর পঁচিশ আগে প্রীতীশ নন্দীর অনুরোধে কলকাতার কয়েকটি স্কেচ করার সময়ে এক বার এঁকেছিলাম।” তাঁর কথায়, “এ কিন্তু কাঠখোট্টা বাস্তব নয়! আমার মনের হাওড়া ব্রিজের ছবি।”
সৌরভকে সই করার জন্য একটি ব্যাট পাঠিয়েই দিয়েছিলেন সংগঠকেরা। কিন্তু তার ব্লেডে সইটা ঠিকমতো করা যাচ্ছিল না। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তখন তাঁর নিজের ব্যাট-বলই সই করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সব্যসাচীও হাডসন-তীরের অনুষ্ঠানের জন্য এ বার ঐশ্বর্যার শাড়িটিই পছন্দ করে দিয়েছেন। মাঝে কয়েক বছর পশ্চিমী গাউনের সাজের পরে এ বছর কান-এ শাড়িতে ফিরেছিলেন ‘অ্যাশ’। কলকাতায় সব্যসাচীর থেকে শাড়িটি নেওয়ার পর তার ওজনেই উদ্যোক্তারা বুঝেছেন, এ যে-সে শাড়ি নয়!

সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের নকশা করা ঐশ্বর্যা রাইয়ের এই পোশাক উঠবে নিলামে।
এত কিছু থাকতে অনুষ্ঠানের থিম হঠাৎ কলকাতা কেন? সংগঠক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-কর্ত্রী ডিনা পহলাজানির কথায়, “আগে মুম্বই বা রাজস্থানকে আমরা থিম করেছি। সংস্থার কাজের সূত্রে কলকাতার সঙ্গে যোগটাও বেশ পুরনো। এই অনুষ্ঠান কলকাতার ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে সেলাম বলতেই পারেন।” সাধারণত এই অনুষ্ঠানটি হয় অক্টোবরের দ্বিতীয় রবিবারে। এ বার একই সময়ে পুজো পড়ে যাওয়ায় কলকাতার প্রতি টান তীব্রতর হয়েছে।
শুধু কলকাতা তথা বাংলার সেরা ব্র্যান্ডদের ছায়া নয়, বাঙালি সংস্কৃতি, ভোজ-বিলাসের ছোঁয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে না নিউ ইয়র্ক। হাডসন-তীর তাই বুঁদ হবে নানা কিসিমের বাঙালি বা কলকাত্তাইয়া খাবারের সুবাসেও। ফুচকা, কাঠিরোল, ঝালমুড়ি, সর্ষে-মাছ থেকে শুরু করে রসগোল্লা, সন্দেশ, চমচম-কিছুর অভাব রাখতে চান না উদ্যোক্তারা। দেবীপক্ষে ক’জন বিশিষ্ট নারীকে সম্মাননাও জানানো হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কর্পোরেট বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নারী বলে খ্যাত, ‘পেপসিকো’-র চেয়ারপার্সন ইন্দ্রা কৃষ্ণমূর্তি নুয়ি।
‘স্পিরিট অব বেঙ্গল’ সম্মানের জন্য এ বার বেছে নেওয়া হয়েছে তিন জনকে। এই তালিকায় রয়েছেন, নিউ ইয়র্কবাসী শিল্প-ইতিহাসবিদ, আর্ট গ্যালারির কর্ণধার ও চলচ্চিত্রকার সুন্দরম ঠাকুর, যিনি আবার রবীন্দ্রনাথের পরিবারের উত্তরপুরুষ। আছেন বাঙালি পরিবারের মেয়ে, ক্যালিফোর্নিয়া-জাত ফ্যাশন ডিজাইনার রেচেল রায়। আর আছেন, দেশে-বিদেশে খ্যাতনামা ক্যুইজমাস্টার তথা রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।
নিউ ইয়র্কে ভারতের কনস্যুলেট জেনারেল ছাড়াও বিদেশি ও প্রবাসী ভারতীয় বহু গণ্যমান্য থাকছেন ‘ভিভা কলকাতা’র আসরে। কলকাতার বিজয়া দশমীর সকালে নিউ ইয়র্কের ‘জয়তু কলকাতা’ ডাকে অন্য রকম সদর্থক শুরুর আভাস দেখছেন অনেকে। এখন শুধু পর্দা ওঠার অপেক্ষা!

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.