গ্রামে ‘ডাইনি’ চিহ্নিত হয়ে স্বামীকে নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে আউশগ্রামের জঙ্গলে দু’দিন লুকিয়ে ছিলেন এক আদিবাসী মহিলা। শেষে প্রাণরক্ষার আবেদন নিয়ে সোমবার বর্ধমান জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করলেন তিনি।
জেলাশাসক সৌমেন্দ্রমোহন তাঁদের নিরাপদে গ্রামে ফেরানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় আউশগ্রাম থানার আইসি মিহির দে বলেন, “পুলিশ গিয়ে ওঁদের গ্রামে ফিরিয়েছে। ডাইনি বলে যে কিছু হয় না, তা-ও গ্রামের মানুষকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। যদি কেউ ওঁদের মারধর বা খুনের চেষ্টা করে, তা হলে যে তাদের গ্রেফতার করা হবে, সে কথাও জানানো হয়েছে।”
আউশগ্রামের ভেলাডাঙা গ্রামের বছর চল্লিশের ওই মহিলার নাম সুমি কিস্কু। জেলাশাসকের কাছে অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, গ্রামের এক বাসিন্দা অসুস্থ হওয়া গত ২২ জুলাই গ্রামেরই এক জন তাঁকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে নির্যাতন চালাতে থাকে। তিনি ও তাঁর স্বামী গিদাম কিস্কু তা-ও মুখ বুজে সহ্য করছিলেন। ইতিমধ্যে অসুস্থ লোকটির সারা শরীর হলুদ হয়ে যেতে থাকে। কিন্তু তিনি চিকিৎসকের কাছে যাননি। উল্টে সুমি লোকটিকে ‘খেয়ে ফেলছে’ দাবি করে তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। খুন হয়ে যেতে পারেন বুঝে তাঁরা গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ভেদিয়ার দিকে চলে যান।
ইতিমধ্যে অঝোরে বৃষ্টি চলছিল। গ্রামের কিছু লোক খোঁজাখুঁজিও করছিল। বেগতিক দেখে স্থানীয় কংগ্রেসের আউশগ্রাম-২ ব্লক সভাপতি অশোক কোনারকে সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। সুমির কথায়, “জন্ম থেকেই আমার এই গ্রামে বাস। ছেলেমেয়ে রয়েছে। কী করে হঠাৎ ডাইনি হয়ে গেলাম? অসুখ তো সকলেরই করে! কিন্তু আমার নজর লেগে গ্রামে মহামারি দেখা দেবে দাবি করে আমাকে খুনের চেষ্টা হচ্ছিল।”
এ দিন গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দাও ওই দম্পতির সঙ্গে জেলাশাসকের কাছে আসেন। তাঁদের অন্যতম মঙ্গলা মুর্মু বলেছেন, “গ্রামে যিনি অসুস্থ হয়েছিলেন, পরে জানা যায় তাঁর জন্ডিস হয়েছে। পরে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু সুমি কিস্কুকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে এক দল লোক রটিয়ে দেয়, ওঁর নজর লেগেই রোগ সারছে না।” অপর বাসিন্দা গণেশ টুডু বলেন, “সুমি ও গিদাম নির্বিরোধী মানুষ। দু’জনই খেতমজুরি করে পেট চালান। কী উদ্দেশ্যে আচমকা সুমিকে ডাইনি বলা হল, তা বুঝতে পরছি না। কিন্তু আমরা ওই লোকেদের বুঝিয়ে বলতে গেলে ওরা আমাদেরও মারধরের চেষ্টা করে।”
ভেলাডাঙারই সোম হেমব্রম বলেন, “এখন আমাদের আদিবাসী সমাজের অনেকেই লেখাপড়া শিখছে। আগের কুসংস্কার আর চলে না। কেউ অসুস্থ হলে গ্রামের কিছু লোক কেন যে ডাইনির ছায়া দেখছেন, জানি না।” বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “ওই দম্পতি যাতে নিরাপদে গ্রামে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা ওই মহিলাকে ডাইনি বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |