পুজোয় বিষাদ বড়ডোবায়
গ্রামের পাশে মুজনাই নদীর পাড়ে কাশ ফুলে ছেয়ে গিয়েছে। গ্রামের মাঝে বড় ডোবাটার এখন শালুক ফুলে পরিপূর্ণ। আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। পুজো যত এগিয়ে আসে ততই বিষাদে ভরে ওঠে গ্রাম। গ্রামে পুজো হবে। একটিমাত্র মণ্ডপ তৈরি করার জন্য বাঁশ গাড়া হচ্ছে। তা দেখতে রাস্তার ধারে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা আশুতোষ সরকার বললেন, “এক সময় পুজোর চারটা দিন পরিবার নিয়ে খুব আনন্দ করতাম। পুজোর আগের এই সময় কোনও সময় পেতাম না। মহাজনদের তাগাদা। তাঁত ঘরে বসে একের পর এক শাড়ি বুনে দিন কাটত।” তাঁতি আশুতোষবাবু এখন বেকার। ছেলে কেরলে দিনমজুরি করেন। তাঁর টাকায় সংসার চলে।
তাঁত বন্ধ, তাই রিকশা চালান তাঁতি। ফালাকাটায় রাজকুমার মোদকের ছবি।
বাসিন্দারা জানান, জলপাইগুড়ি জেলার ফালাকাটা ব্লকের বড়ডোবা গ্রামের নাম এক সময় তাঁতের শাড়ির জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। বর্ধমান ও নদীয়া জেলার তাঁতের শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিক্রি হত এলাকার শাড়ি। বড়ডোবার তাঁত গ্রামের ৩০০ বাড়িতে তাঁত ছিল। তাঁত বোনার শব্দে কান পাতা দায় হত। এখন মেরেকেটে ৮টি বাড়িতে তাঁত রয়েছে। পূর্ব পুরুষদের পেশা ছেড়ে তাঁতিরা কেউ এখন দিনমজুর, কেউ রিকশা চালক। অনেকেই অন্য পেশায় না গিয়ে নদীয়া ও বর্ধমানের বিভিন্ন তাঁত কলে শাড়ি বুনে দিন কাটান। গ্রামের প্রদীপ মণ্ডলের বাড়ি এক সময় দুটি তাঁত ছিল। এখন তিনি সমুদ্রগড়ে অন্যের তাঁত কলের তাঁত বুনে দিন চালান। ছয় মাস অন্তর বাড়িতে এসে ঘুরে যান। পুজোর আগে বাড়ি এসেছেন। তাঁর কথায়, “বর্ধমান ও নদীয়ার বেশিরভাগ তাঁতি আমাদের গ্রামের। এলাকায় তাঁত শিল্পের দুর্দিন শুরু হতেই অনেকেই ওই দুই জেলায় চলে যান।”
কেন এমন অবস্থা হল বড়ডোবায়? বংশপরম্পরায় চলা তাঁত বন্ধের কারণ হিসাবে নাইলন সুতোকে দায়ী করছেন বাসিন্দারা। এলাকার তাঁতিরা জানান, ১৬ বছর আগে দেখতে ভাল অথচ অত্যন্ত নিম্নমানের এক ধরণের সুতো দিয়ে শাড়ি বোনা শুরু করেন অধিকাংশ তাঁতি। শাড়ির চাহিদা ছিল। এক সময় খদ্দেররা শাড়ি নিয়ে অভিযোগ করতে শুরু করেন। ব্যবসায়ীরা বড়ডোবার তাঁতের শাড়ি কেনা বন্ধ করে দেন। আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতিরা একের পর এক তাঁত কল বন্ধ করে দেন। গ্রামের রিকশা চালক শ্যামাপদ সরকার এক সময় শাড়ি বুনতেন নিজের তাঁতে। তাঁর কথায়, “এক সময় ভাল মানের সুতো দিয়ে শাড়ি বুনলেও দোকানদাররা কিনতেন না। সংসার সামলাতে রিকশা কিনি। তাঁত কেনার আর টাকা নেই। পুজো এলেই মন খারাপ করে।” আর ভাল দিন ফেরার আশায় তাঁত বুনে যাচ্ছেন মাধব বিশ্বাস। স্থানীয় বাজারের বদলে শাড়ি নিয়ে যান নদিয়া ও বর্ধমানে। তাঁরা কথায়, “ওই শাড়ি সমুদ্রগড়, ফুলিয়া, ধাত্রিগড়ের কাপড় বলে ফিরে আসে উত্তরবঙ্গের বাজারে। এক দিন না এক দিন আবার মানুষের বিশ্বাস ফিরবে। তবে রাজ্য সরকার এগিয়ে আসলে তা দ্রুত হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.